স্টাফ রিপোর্টার: ঠোঁট আর চায়ের কাপের দূরত্ব মুছতে তিনটে বছর লেগে গেল! ২০১৭ অনূর্ধ্ব ২৩ জাতীয় ওয়ানডে ফাইনাল। পরিণতি, হার। ২০১৮ সিকে নাইডু ট্রফির ফাইনাল। পরিণতি, আবার হার। ২০১৯ সালটা নির্ঘাৎ স্মরণীয় হয়ে থেকে যাবে বঙ্গ ক্রিকেটে। গত দু’বছরে যা হয়নি, সেটাই তো এবার করে দেখাল বাংলা। দু’বছরের অভিশাপ কাটিয়ে অনূর্ধ্ব ২৩ পর্যায়ে তারা দেখাল ভারতসেরা হয়ে!
রবিবার দেরাদুনে অনূর্ধ্ব ২৩ জাতীয় ওয়ানডে ফাইনালে বাংলা নেমেছিল গুজরাটের বিরুদ্ধে। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে বাংলা নির্ধারিত ৫০ ওভারে তোলে ২৫৭-৮। বঙ্গ ওপেনার সুদীপ ঘরামি ৫১ করে যান। রণজোৎ সিং খারিয়া করেন ৫২। বাংলা অনূর্ধ্ব ২৩ অধিনায়ক কাজি জুনেইদ সইফি করেন ৪৫। ফাইনালের স্কোর হিসেবে যথেষ্ট ভাল। কিন্তু গুজরাট জবাবে ব্যাট করতে নেমে বেশ ভাল পালটা দিতে শুরু করে। বিশেষ করে উর্ভিল প্যাটেল (৭৬)। গুজরাট এক সময় বিনা উইকেটে ১০৭ তুলে দিয়েছিল। এক মুহূর্তের জন্য মনে হচ্ছিল, তারা ম্যাচ নিয়ে চলে যাবে, আর পরপর তিনবার খালি হাতে ফিরতে হবে বাংলাকে। কিন্তু ঠিক সেই সময় ঈশান পোড়েল প্রয়োজনীয় ব্রেক থ্রু-টা দিয়ে দেন গুজরাতের আর এক ওপেনার কাথান প্যাটেলকে আউট করে। এবং ১০৭-০ থেকে ১৯৩ রানে অল আউট হয়ে যায়! পুরো পঞ্চাশ ওভারও টিকতে না পেরে। আর বাংলা চ্যাম্পিয়ন হয়ে যায় ৬৪ রানে ম্যাচ জিতে।
শোনা গেল, রবিবার ম্যাচের আগে টিমের সঙ্গে তিরিশ সেকেন্ডের হার্ডলে একটা পেপ টক দিয়েছিলেন বাংলার অনূর্ধ্ব ২৩ কোচ সৌরাশিস লাহিড়ী। সেই হার্ডলে তিনি বলে দেন যে, অহেতুক চাপ নেওয়ার কোনও দরকার নেই। ফাইনালকে উপভোগ করতে হবে। দেখতে হবে, চাপ যেন এহেন অসাধারণ সফর শেষ না করে দেয়। কে জানত, সেই গুরুমন্ত্র অক্ষরে অক্ষরে পালন করবেন ঈশানরা! তাও একেবারে মোক্ষম সময়ে?
অনূর্ধ্ব ২৩ বাংলার সবচেয়ে পরিচিত মুখ পেসার ঈশান পোড়েল পরে ফোনে বলছিলেন যে, তিনি জানতেন যে একটা উইকেট তুলে নিতে পারলেই পরপর উইকেট আসবে। “ওদের দু’-তিনজন শুধু ভাল ব্যাটসম্যান। আমরা চেষ্টা করছিলাম, উইকেট না পেলেও রান না দিতে। আকাশদীপের কথা এখানে বলতে হবে। সাত ওভার বল করে ও মাত্র তেরো রান দিয়েছে। এই জায়গা থেকে ম্যাচ ঘুরে যায়। ওরা চাপে পড়ে যায়। কারণ রান রেট ছ’য়ের উপর চলে যায়। তারপর ফিরে আসতে পারেনি।” বঙ্গ বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে কৃপণ থেকেছেন আকাশদীপই। তার জন্য ম্যাচ ঘুরে গেল বলা যায়।
আসলে ফাইনালের গোটাটাই টিম বাংলার ছায়াছবি যেন আদতে। যেখানে সবাই কিছু না কিছু করে গিয়েছেন। ঈশান দুটো উইকেট পেয়েছেন। প্রদীপ্ত প্রামাণিক শেষের দিকে পরপর উইকেট নিয়েছেন। তিনটে উইকেট তাঁরও। টাউনে সিএবি যুগ্ম সচিব দেবব্রত দাসের হয়ে খেলতে আসা অঙ্কিত ফাইনালে ঝলসে উঠেছেন। বাংলা অনূর্ধ্ব ২৩ অধিনায়ক কাজি জুনেইদ সইফি বলছিলেন, “এটা অধিনায়ক হিসেবে আমার প্রথম ট্রফি। অনুভূতিটা আলাদা। তবে একটা জিনিস দেখে দারুণ লাগছে। গতবারের ফাইনালে আমরা নার্ভ ধরে রাখতে পারিনি। কিন্তু এবার পেরেছি।” ঠিক। কাজি-ঈশান-অঙ্কিতরা নার্ভ হারাননি বলেই দু’বছরের শাপমুক্তি ঘটিয়ে শিখরে পৌঁছলো বাংলা!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.