ফারজানা জাহির: সাড়ে ৬ বছর পর এবার আর এক বুধ। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে (ICC T-20 World Cup) মুখোমুখি ভারত-বাংলাদেশ (India vs Bangladesh)। দুই পড়শি দেশের ক্রিকেটীয় দ্বৈরথ মানেই কোথাও না কোথাও ঠিক চোখের সামনে ভেসে উঠবে ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শেষ ওভারের সেই মুহূর্ত।
পরপর দুই চার মেরে বন্য উদযাপনে মুশফিকুর রহিম ৩ বলে ২ রানের জয়ের দূরত্বে রেখে যান দলকে। যে দূরত্ব পরে আর পাড়ি দেওয়া হয়নি বাংলাদেশের। তাই তো উদ্যান-নগরী বেঙ্গালুরু বাংলাদেশের কাছে হয়ে যায় ধূসর মরুভূমি কিংবা চিনের হোয়াংহো, আজন্ম এক বিষাদের নাম। ওটিই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারত-বাংলাদেশ শেষ দেখা। তারপর আবার এই, বুধবার।
এই অস্ট্রেলিয়াতেই ২০১৫ ওয়ান ডে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশকে হারিয়ে সেমিতে উঠেছিল ভারত। কিন্তু ম্যাচ ছাপিয়ে আলোচনায় ছিল পেসার রুবেল হোসেনের যে বলে রোহিত শর্মা ক্যাচ দিয়েও নো বলের কল্যাণে নতুন জীবন পান, সেটি। বাংলাদেশের ক্রিকেট সমর্থকরা এখনও বিশ্বাস করেন ওটি নো বল ছিল না। যার ‘প্রতিশোধ’ তাঁরা নিয়েছিলেন বিশ্বকাপের পরই ভারতকে ঘরের মাটিতে সিরিজ হারিয়ে। এই পুরনো কাসুন্দি ঘাঁটার কারণ সর্বশেষ ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ। এই বিশ্বকাপের হাইভোল্টেজ সেই লড়াইতেও জয়-পরাজয়ের মাঝে সীমারেখা টেনে দেয় একটি ‘নো’ বল। শেষ ওভারে বিরাটকে করা নওয়াজের ডেলিভারি আদৌ ‘নো’ বল কিনা সেই বিতর্ক এখনও চলমান। আর সেই বিতর্কে আছে বাংলাদেশও। যেখানে তাদের এক পক্ষের দৃঢ় বিশ্বাস আম্পায়ার সিদ্ধান্তটি ভারতের পক্ষে দিয়েছেন।
টুকরো টুকরো এই ছবিগুলোই জন্ম দিয়েছে পারস্পরিক বৈরিতার। সেই বীতরাগকে আরও দৃঢ়তা দিয়েছে দু’দেশের গণমাধ্যমের পক্ষপাতদুষ্ট ভূমিকা, সঙ্গে প্রতিশোধ চরিতার্থে বুঁদ হয়ে থাকা সমর্থকদের অশোভন মিম-সংস্কৃতির অপপ্রয়োগ। দেখে কে বলবে, আইসিসির আঙিনায় এই বাংলাদেশ ক্রিকেটের উত্থানে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল ভারত। সেখানে তো কোনও বৈরিতা ছিল না, ছিল না কোনও অসূয়া মনোভাব।
অতীত-কথন বাদ দিয়ে বুধবারের ম্যাচের দিকে তাকাই। বাস্তব হল, ভারত যেমন প্রোটিয়াদের কাছে হেরে খানিকটা বিপাকে, তেমনই জিম্বাবোয়েকে হারিয়ে হঠাৎ যেন আত্মবিশ্বাসের পালে হাওয়া লেগেছে বাংলাদেশেরও। পয়েন্ট টেবিলের অবস্থাটা এখন এমন এক নেদারল্যান্ডস ছাড়া সেমিফাইনালের যদি-কিন্তু’র সমীকরণ খোলা গ্রুপের বাকি ৫ দলেরই। আর এরকম অগ্নিপরীক্ষার আগে বাংলাদেশ সমর্থকদের আশা, শ্রীধরন শ্রীরামের কাছ থেকে ‘হাঁড়ির খবর’ তো কিছু মিলবেই। বিরাট রাজার রথ থামানোর একটা না একটা উপায় তাসকিনকে নিশ্চয় বাতলে দেবেন আরসিবির প্রাক্তন এই ব্যাটিং কোচ।
২২ গজের এই রণকৌশল প্রাধান্য পাক। তার বাইরে সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রোলিং, মিম যাই বলি না কেন ততক্ষণ পর্যন্ত ঠিক যতক্ষণ সেটা নির্দিষ্ট সীমারেখার ভেতর। যদি তা ভব্যতার সীমা অতিক্রম করে কারও ব্যক্তিগত পরিসরে চলে যায় তাহলে বিরাট কোহলির মতো করে বলতেই হবে– ‘প্লিজ রেসপেক্ট’!
(সাংবাদিক বাংলাদেশের টি স্পোর্টসের বিশেষ প্রতিনিধি)
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.