ইডেনের বাইরে টিকিটের লাইন
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ইডেন গার্ডেন্সে সোমবার ঢুকলে দু’টো ইডেন চোখে পড়ত। প্রথম ইডেন সম্পূর্ণ বিয়েবাড়ির সাজে, গোলাপি যজ্ঞের আবাহনে ব্যস্ত। গোটা ক্লাবহাউস জুড়ে গোলাপি আলো, জায়গায় জায়গায় দেওয়ালের দখল নিয়েছে ‘গ্রাফিটি’। বিষয়, ক্রিকেটারের কেরিয়ারে শূন্য থেকে শিখরে উত্থানের উপাখ্যান। শহরজুড়েও গোলাপি উৎসব চলছে সমানতালে। কেষ্টপুর থেকে পার্ক স্ট্রিট। বেহালা থেকে গড়িয়াহাট। পার্ক সার্কাস থেকে মধ্যমগ্রাম। কোথাও বিলবোর্ড, কোথাও এলইডি ডিজিটাল বোর্ড। যা প্রতি মুহূর্তে শহরবাসীকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে, গোলাপি পক্ষের বোধন হয়ে গিয়েছে, অপেক্ষার আর চার দিন। ইডেনে ভারতবর্ষের প্রথম দিন-রাতের টেস্টে আপনি স্বাগত!
স্বাগত বটে। কিন্তু, ইডেনে ইতিহাসের সাক্ষী হতে যে মহার্ঘ্য গোলাপি আভা টিকিটটা লাগবে, সেটা পকেটে আছে তো? এবং ওটাই সোমবারের দ্বিতীয় ইডেন। টিকিট নিয়ে হাহাকার, ধুন্ধুমারের ইডেন! এদিন ক্লাবহাউস চত্বরে ঢুকেই যে দৃশ্য দেখা গেল, অভাবনীয়। ইডেন টিকিট বন্টনের দায়িত্বে ‘বুক মাই শো’। আর সিএবি সদস্যদের প্রাপ্য টিকিট বন্টনে তারা মোটামুটি পর্যুদস্ত। টাকা জমা দেওয়া হয়ে গিয়েছে, কিন্তু টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। মাথা পিছু ঘণ্টাখানেক করে দাঁড়াতে হচ্ছে। শোনা গেল, বন্টনকারীরা পুরো হিসেবই গুলিয়ে ফেলেছে টিকিটের! কেউ পাঁচ দিনের টিকিটের টাকা জমা করে হাতে পাচ্ছেন শুধু পঞ্চম দিনের টিকিট! চিৎকার, ধাক্কাধাক্কি এতটাই উচ্চগ্রামে ওঠে যে মধ্যস্থতা করতে নামতে হয় সিএবি পদাধিকারীদের। বলতে হয়, মঙ্গলবার সিএবি থেকে বন্দোবস্ত করে দেওয়া হবে।
কিন্তু, আম ক্রিকেটজনতা। তাঁদের টিকিট দেবে কে? অনলাইনে যা ছিল, নিঃশেষ। এবং সিএবি সদস্য, কর্পোরেট বুকিংয়ের চাহিদাপত্র মিটিয়ে যা অবস্থা, কাউন্টারে আর নাকি টিকিট ছাড়া সম্ভব হবে না! অর্থাৎ, অভূতপূর্ব ভাবে মহামেডান মাঠ বা সিএববি কাউন্টার থেকে আর পাওয়া যাবে না টিকিট। সিএবি-র কোনও কোনও কর্তা বলে দিলেন, ভুল হয়েছে অনলাইনে বেশি টিকিট আগেভাগে ছেড়ে দিয়ে। আর সাধারণের জন্য কাউন্টারে টিকিট ছাড়ার উপায় নেই। অথচ লোকে ভিড় করে সকাল থেকে দাঁড়িয়ে।
যা অবস্থা, তাতে ইতিমধ্যে টিকিট আপনি কিনে থাকলে ভাল। নইলে টিভিতে দেখে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো ছাড়া উপায় নেই। কিন্তু টিকিট কিনে থাকলে? বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো হাইপ্রোফাইল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা তো থাকছেনই। সঙ্গে ক্রিকেট ও বাদবাকি ক্রীড়াজগতের এখনও কনফার্মড লিস্টটা দেখে নিন সুনীল গাভাসকর, কপিল দেব, শচীন তেন্ডুলকর, রাহুল দ্রাবিড়, ভিভিএস লক্ষ্মণ, অনিল কুম্বলে, দিলীপ বেঙ্গসরকর, ফারুখ ইঞ্জিনিয়ার, মহম্মদ আজহারউদ্দিন, কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্ত, পিভি সিন্ধু, পুল্লেলা গোপীচাঁদ, মেরি কম, সানিয়া মির্জা, অভিনব বিন্দ্রা, বজরং পুনিয়া কে নেই? সঙ্গে ভারতের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্ট খেলা গোটা বাংলাদেশ টিম। এঁরা কেউ কেউ বৃহস্পতিবার, কেউ কেউ শুক্রবার শহরে ঢুকে যাচ্ছেন। দাঁড়ান, আরও আছে। রাজনীতির ভিভিআইপিরা উপস্থিত থাকবেন বলে মাঠে আতসবাজি ফাটানো নিয়ে একটা সমস্যা দেখা দিচ্ছিল। তাই ঠিক হয়েছে, প্রথম দিন খেলা শেষে গোলাপি আতসবাজি ফাটবে গঙ্গাবক্ষ থেকে! তবে হ্যাঁ, নিরাপত্তা সংক্রান্ত ঝক্কি থাকবে। নিরন্তর চেকিং, ভিউ ব্যারিয়ার বসানো, পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ তো থাকবেই। এমনকী দিনের খেলা শেষ হলেও দর্শকদের বেরোতে নাও দেওয়া হতে পারে। অপেক্ষা করতে হতে পারে আরও ঘণ্টাখানেক। কলকাতা পুলিশ ইডেন পরিদর্শনে এসে তেমনই কিন্তু বলে গিয়েছে।
আর ক্রিকেটীয় যজ্ঞ? আজ, মঙ্গলবার থেকে সেটাও শুরু হয়ে যাচ্ছে। আজ সকাল সাড়ে ন’টায় শহরে আসেন ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি এবং সহ অধিনায়ক অজিঙ্ক রাহানে। দুপুর সাড়ে বারোটায় ইন্দোরে থেকে যাওয়া ক্রিকেটাররা। রাত দু’টোয় আবার নামছেন রোহিত শর্মা। আর বুধবার সকালে জোড়া পেস মারণাস্ত্র মহম্মদ সামি এবং উমেশ যাদব। মঙ্গলবার গোলাপি বলে কোনও প্র্যাকটিস নেই টিমের। বুধবার থেকে পুরোদমে আছে। ওহ্, আরও একটা বিষয়। বিরাট-মোমিনুল হকদের যে নেট বোলার দেওয়া হবে, তাতেও বিশেষত্ব আছে। সাধারণত নেট বোলার নির্বাচনে নানা ক্লাবের ‘অনুরোধ’ থাকে। কিন্তু, এবার সে সব বন্ধ। এবার তাঁদের নেট বোলার করা হবে, যারা সুইং বোলিংয়ে যথেষ্ট দক্ষ। যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণ যাদের আছে। আসলে গোলাপি বলে সুইং বেশি হয়। বলা হচ্ছে, দক্ষ সুইং বোলার না হলে নেটে কারও লেগে গেলে তখন? এটাও শোনা গেল, গোলাপি বলে সুপার লিগ ফাইনাল যে সব বোলাররা খেলেছিলেন, তাদের কাউকে কাউকে ডাকা হতে পারে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.