আলাপন সাহা, বেঙ্গালুরু: কলকাতার এমজি রোড আর বেঙ্গালুরুর এমজি রোডের মধ্যে একটা মিল রয়েছে। দু’টো জায়গাতেই মারাত্মক যানজট হয়। উইকএন্ডে সেটা আরও অনেক বেড়ে যায়। এখানকার এমজি রোড লাগোয়া চার্চ স্ট্রিট হল কলকাতার পার্ক স্ট্রিট। বড় বড় রেস্তরাঁ, পাব সব এখানেই। রয়েছে চার্চ স্ট্রিট সোশ্যাল। যা বেঙ্গালুরুর অত্যন্ত বিখ্যাত পাব। ঠিক তার উলটোদিকে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের (RCB) নিজস্ব পাব।
এমনিতেই চিন্নাস্বামীতে খেলা থাকলে বেশিরভাগ পাবগুলো ক্রিকেটপ্রেমীদের দখলে চলে যায়। এবারও যে সেটা অন্যথা হবে না, শনিবারের আবহ দেখে তা স্পষ্ট। যাঁরা রবিবার ভারত বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ (India vs South Africa) ফয়সলার ম্যাচ দেখতে চিন্নাস্বামী যাবেন না, যাঁদের টিকিট নেই, নির্ঘাৎ তাঁরা সন্ধের পর থেকে পাবগুলোতে ঢুকে পড়বেন টিভিতে ম্যাচ দেখতে। আসলে ছ’বছর পর বেঙ্গালুরুতে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি হচ্ছে। দু’বছর ধরে আইপিএলের একটা ম্যাচও হয়নি। তাই রবিবারের ভারত বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা টি-টোয়েন্টি নিয়ে বেঙ্গালুরুবাসী উন্মাদনার পারদটা ভালরকম চড়েছে, সেটা লিখে দেওয়াই যায়।
গত দু-তিন দিন সন্ধের দিকে চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে গেলে একটা চেনা ছবি চোখে পড়বে। বেশ ভিড়। সাতদিন আগেই রবিবারের ম্যাচের টিকিট প্রায় নিঃশেষিত। সাড়ে সাতশো, দু’হাজর, চার হাজার কিচ্ছু নেই। কিছু সংখ্যক পনেরো হাজারের টিকিট পড়ে ছিল। সেটাও মনে হয় না আর রয়েছে বলে। শেষ ম্যাচটা আবার সিরিজ নির্ণায়ক হয়ে যাওয়ায়, উৎসাহটা আরও বহুগুণ বেড়ে গিয়েছে। বেড়েছে টিকিটের হাহাকারও। তবে চিন্তা একটাই- বৃষ্টি না সবকিছু ভেস্তে দিয়ে যায়।
গত কয়েক দিন এখানে সন্ধের দিকে বৃষ্টি হচ্ছে। যদিও শনিবার আকাশ পরিষ্কার ছিল। বৃষ্টি নেই। কিন্তু রবিবার বিকেলের পর থেকে বৃষ্টির ভালরকম পূর্বাভাস রয়েছে। তবে স্বস্তি একটাই- চিন্নাস্বামীর নিকাশি ব্যবস্থা ভাল। কর্ণাটক ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের কর্তারা আশ্বাস দিচ্ছেন, টানা বৃষ্টি না হলে চিন্তা নেই। আর উইকেটও যেরকম হয়, সেরকমই থাকছে। শোনা গেল, একটা সময় তিনরকম উইকেট তৈরি করা হয়েছিল চিন্নাস্বামীতে। একটা উইকেটের মাটি এসেছিল মাইসুরুর থেকে। সেন্টার উইকেট তৈরি করা হয়েছিল নিউজিল্যান্ডের একজন কিউরেটরকে দিয়ে। তখন তিনটে উইকেটের চরিত্র তিনরকম হত। তবে দ্রুতই তা বদলে ফেলা হয়। এখন অবশ্য যে পিচেই খেলা হোক না কেন, মোটামুটি পেস-বাউন্স থাকবে।
শনিবার বিকেলেই দুটো টিম শহরে ঢুকে পড়েছিল। নিজের ঘরের মাঠে কোচ রাহুল দ্রাবিড়ের (Rahul Dravid) অভিষেক আগেই হয়েছিল। তবু দ্রাবিড়কে নিয়ে যে একটা আবেগের শিরশিরানি থাকবে, সেটা লিখে দেওয়াই যায়। তবে তার চেয়েও বেশি চর্চা চলছে দীনেশ কার্তিককে নিয়ে। কার্তিক এবারই আরসিবিতে এসেছেন। সে অর্থে এটা তাঁর ঘরের মাঠ। রাজকোটে তিনি যে বিধ্বংসী ইনিংসটা খেলেছেন, সেটা আরও প্রত্যাশা বাড়িয়ে দিয়েছে। সাঁইত্রিশেও তিনি যেভাবে কামব্যাক করেছেন, সেটা অনেকের কাছে অনুপ্রেরণার। হার্দিক পাণ্ডিয়া যেমন। বিসিসিআই টিভির ভিডিওয় কার্তিকের উদ্দেশে হার্দিক বলেন, “তোমাকে একটা কথা বলতে চাই। তুমি অনেককে অনুপ্রেরণা দিলে। আমার এখনও সেই কথাগুলো মনে রয়েছে। যখন তুমি ভারতীয় দলের ভাবনায় ছিলে না, তখন অনেকেই তোমাকে বাতিলের দলে ফেলে দিয়েছিল। তখন তুমি আমায় বলেছিলে যে আবার ভারতীয় দলের হয়ে খেলতে চাও। জাতীয় দলের জার্সিতে বিশ্বকাপ খেলতে চাও। তার জন্য তুমি নিজের সর্বস্ব দিয়ে দেবে। আজ তুমি সেটা অর্জন করেছ।”
শুধু হার্দিক কেন, পুরো ভারতীয় দলও (Team India) অনুপ্রাণিত কার্তিককে দেখে। তাছাড়া প্রথম দু’টো ম্যাচ হারার পর টিম যেভাবে কামব্যাক করেছে, তাতে রবিবার ঋষভ পন্থদের ছাড়া অন্য কাউকে আর ফেভারিট হিসাবে ভাবা যায় নাকি?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.