স্টাফ রিপোর্টার: ম্যাচ ৮, ইনিংস ১৩, রান ৭০৪, গড় প্রায় ৬০, সেঞ্চুরি ২, হাফসেঞ্চুরি ৩।
শেষ রনজি ট্রফিতে অনুষ্টুপ মজুমদারের পারফরম্যান্স। যে অনুষ্টুপ মজুমদার (Anustup Majumdar) প্রায় একার হাতে কোয়ার্টার ফাইনাল আর সেমিফাইনালের বৈতরণী পার করে ফাইনালে তুলে দিয়েছিলেন বাংলাকে। তার যোগ্য ‘প্রতিদান’ সোমবার অনুষ্টুপকে দিয়ে দিল বঙ্গ ক্রিকেট। আসন্ন সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফির টিম থেকে সোজা বাদ দিয়ে দেওয়া হল অনুষ্টুপকে!
এ দিন সৈয়দ মুস্তাক আলি টি-টোয়েন্টি (Syed Mushtaq Ali Trophy) টুর্নামেন্টের দল ঘোষণা করল সিএবি। সুদীপ চট্টোপাধ্যায় অধিনায়ক। গোটা টিম লিস্টে কোথাও নেই গত বছরের অধিনায়ক অনুষ্টুপ (আজ্ঞে হ্যাঁ, রনজির পারফরম্যান্স দেখে তাঁকে উৎফুল্ল ভাবে অধিনায়ক ঘোষণা করেছিলেন সিএবি কর্তারা, এবার আপাতত একটা ফর্ম্যাট থেকে পুরোটাই ছেঁটে ফেললেন) এবং শ্রীবৎস গোস্বামী। সেই শ্রীবৎস গোস্বামী, যাঁর খেলাটাই পুরোদস্তুর টি-টোয়েন্টি ঘরানার। বাংলা থেকে যে গুটিকয়েক আইপিএলের আলোর পৃথিবীতে টিমটিম করেন, সেই তাঁদের এক শ্রীবৎস গোস্বামী। এবং এই দু’টো দু’টো সিদ্ধান্ত হেঁটমুণ্ড করে দিল বঙ্গ ক্রিকেটের। জন্ম দিল বিক্ষোভের।
অবাক করা সব অজুহাত, বালখিল্য সব যুক্তি দেওয়া হচ্ছে অনুষ্টুপ-অপসারণের নেপথ্যে। টি-টোয়েন্টি টিম থেকে বাদ দেওয়ার পর টিম ম্যানেজমেন্টের অনেকেই বলার চেষ্টা করছেন, অনুষ্টুপ নিজেই নাকি খেলতে চাননি! রনজি ট্রফি আর বিজয় হাজারে ট্রফিতে তিনি নাকি মনোনিবেশ করতে চান! ভাল। কিন্তু সেটা স্রেফ অপপ্রচার ছাড়া আর কিছু নয়। কারণ, সেক্ষেত্রে বিনীত প্রশ্ন ওঠে, টি-টোয়েন্টি যদি ছেড়েই দিতে চাইবেন অনুষ্টুপ, তা হলে বিনা পারিশ্রমিকে সিএবি আয়োজিত টি-টোয়েন্টি চ্যালেঞ্জে খেললেন কেন? কেউ কেউ আবার বলার চেষ্টা করলেন, সিএবি টি-টোয়েন্টি চ্যালেঞ্জে একেবারেই ভাল ফর্মে ছিলেন না অনুষ্টুপ। ঠিক আছে। কিন্তু সেক্ষেত্রে পালটা প্রশ্ন ওঠে, বৃষ্টিবিঘ্নিত একটা টুর্নামেন্ট কী করে জাতীয় টুর্নামেন্টের দল নির্বাচনের মাপকাঠি হয়? মনে রাখা ভাল, সেই সিএবি (CAB) টি-টোয়েন্টি চ্যালেঞ্জ নামক ‘বিশ্বকাপে’র ক’টা ম্যাচ পুরো কুড়ি ওভার হয়েছিল, হাতে গুণে বলে দেওয়া সম্ভব। দাঁড়ান, সাফাই-পর্ব এখানেই শেষ নয়।
একদল আবার বললেন, টিম ম্যানেজমেন্টের মনে হচ্ছে, টি-টোয়েন্টিতে অনুষ্টুপের ‘এক্সপায়ারি ডেট’ পেরিয়ে গিয়েছে। তারুণ্য চাই, তারুণ্য। অভিজ্ঞতা নয়। ভাল, ভাল। তা, গত সৈয়দ মুস্তাক আলিতে টিমের প্রথম পাঁচ স্কোরারের মধ্যে ছিলেন অনুষ্টুপ। স্ট্যাটসবুক অন্তত তাই বলে। আর তারুণ্যই যদি টি-টোয়েন্টিতে শেষ কথা হবে, তা হলে মহেন্দ্র সিং ধোনির চেন্নাই সুপার কিংসের সদ্য সমাপ্ত আইপিএলে অষ্টম হয়ে লুডো খেলার কথা! কেউ আবার আড়ম্বরে বললেন, মুম্বই-কর্ণাটক মডেল নাকি অনুসরণ করা হচ্ছে। অথচ প্রচুর বয়স হয়ে গেল বাংলা ক্রিকেটের। রনজি ট্রফিও জেতা হয়ে গিয়েছে। আর ধারকর্য করে কত দিন চলবে মহাশয়? কত দিনে তৈরি হবে বাংলার নিজস্ব মডেল?
ক্ষিপ্ত বঙ্গ ক্রিকেটমহলের অনেকেই সিএবির কাছে জানতে চান, কী এমন ‘রত্মভাণ্ড’ পেয়ে গিয়েছে সিএবি যে, অনুষ্টুপরা ব্রাত্য হয়ে যান? বলা হচ্ছে, একটা বছর কারও একটু খারাপ যেতেই পারে। তাই বলে তাকে বাদ দিয়ে দিতে হবে? আর তারুণ্যই যদি প্রাধান্য পাবে, তা হলে সুদীপ (Sudip Banerjee) কোন যুক্তিতে অধিনায়ক? এটাও বলা হল, শেষ রনজিতে অনুষ্টুপ একার ব্যাটে টিমের অনেক রাঘববোয়ালের চাকরি বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন। আজ সেই সব হোমরা-চোমরারাই অনুষ্টুপকে ছেঁটে ফেললেন সযত্নে। নিজেদের চাকরি বেঁচে যাওয়ার যোগ্য ‘প্রতিদান’ দিয়ে। হায় রে, বঙ্গ ক্রিকেট!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.