সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ১৭৩/৮ (হেড ৪৮, হার্দিক ৩/৩১, পীযূষ ৩/৩৩)
মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ১৭৪/৩ (সূর্যকুমার ১০২*, তিলক ৩৭*)
৭ উইকেটে জিতল মুম্বই
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ওয়াংখেড়েতে সূর্যের তেজে পুড়ে ছাই হায়দরাবাদ। শেষ বেলায় মুম্বই ইন্ডিয়ান্স মরণকামড় দিল। সোমবার সাত উইকেটে ম্যাচ জিতে অঙ্কের হিসেবে মুম্বই এখনও টিকে রইল আইপিএলে। ম্যাচ হেরে যাওয়ায় সানরাইজার্স হায়দরাবাদের পয়েন্ট ১২। পয়েন্ট টেবিলে তারা চার নম্বরে। সানরাইজার্স হায়দরাবাদ, চেন্নাই সুপার কিংস ও লখনউ- এই তিন দলের পয়েন্টই ১২। ওয়াংখেড়েতে হারায় প্যাট কামিন্সের দলের প্লে অফে যাওয়া বিলম্বিত হল বলা যায়।
এবারের আইপিএলে অনেক দেরিতে জ্বলে উঠল মুম্বই। অনেক দেরিতে ফর্মে ফিরলেন অধিনায়ক হার্দিক পাণ্ডিয়াও। বল হাতে সোমবার তিনটি উইকেট নিলেন বিতর্কিত মুম্বই অধিনায়ক। কিন্তু ম্যাচটা হয়ে থাকল সূর্যকুমার যাদবের। ৫১ বলে অপরাজিত ১০২ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেললেন সূর্য। ১২টি চার ও ৬টি ছক্কা হাঁকালেন তিনি। ওয়াংখেড়েতে মুম্বইয়ের সূর্যোদয় হওয়ায় সূর্যাস্ত হল হায়দরাবাদের।
এগিয়ে আসছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। তার আগে সূর্যকুমার যাদব কিন্তু রোহিত শর্মার চিন্তা কমালেন বলাই যায়। চোটের জন্য দীর্ঘ সময় মাঠের বাইরে ছিলেন তিনি। প্রথম থেকে আইপিএলে নামতেও পারেননি। এদিন খুব কঠিন পরিস্থিতি থেকে মুম্বইকে টেনে তুললেন তিনি। সেঞ্চুরি করলেন। ১৬ বল বাকি থাকতে মুম্বইকে জেতালেন। রণং দেহি মেজাজে আগাগোড়া ব্যাটিং করে গেলেন সূর্যকুমার।
ঘরোয়া ক্রিকেটে সূর্যকুমারকে ‘স্কাই’ বলা হয়। তাঁর পরিচিতরা বলে থাকেন ঠিকমতো খেলতে পারলে সূর্যকুমার আকাশ ছুঁতে পারবেন। তাঁর মেন্টর খোদাদাদ ইয়াজদেগারদি বলে থাকেন, উইকেটের সামনে মিড অন, মিড অফ থাকে। কিন্তু উইকেটের পিছনেও যে মিড অন, মিড অফ থাকতে পারে, তা দেখিয়ে দিয়েছে সূর্যকুমার যাদব। ফাইন লেগ থেকে থার্ড ম্যান অঞ্চল হল সূর্যের মিড অন-মিড অফ। এই এলাকা দিয়ে সূর্য অবলীলায় এদিন বাউন্ডারিতে বল পাঠালেন। ম্যাচের শেষে তাঁকে বলতে শোনা গেল, ”১৪ ডিসেম্বরের পরে প্রথমবার ২০ ওভার ফিল্ডিং করলাম। ১৮ ওভার মতো ব্যাটিং করলাম। আমি একদম ঠিক আছি।”
সূর্যর মুখে খেলা করছে হাজার ওয়াটের হাসি। তাঁর জন্যই হাসছেন হার্দিক পাণ্ডিয়া। ওয়াংখেড়ে উত্তাল। এই দৃশ্যটাই তো হারিয়ে গিয়েছিল আইপিএলে। সূর্যকুমার যাদবের ব্যাটে ফিরে এল মায়াবী এক রাত। যদিও বহু দূর এখনও যেতে হবে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে। প্লে অফে আদৌ মুম্বই পৌঁছতে পারবে কিনা, তা বলবে সময়। নিঃসন্দেহে রাস্তা কঠিন। কিন্তু সূর্যকুমার যাদব এদিনের জন্য মুম্বইয়ের সাজঘরে ছড়িয়ে দিলেন বিশুদ্ধ অক্সিজেন। চার ম্যাচ পরে জিতল মুম্বই।
এদিন কাজটা খুব একটা সহজ ছিল না মুম্বইয়ের। টস জিতে মুম্বই অধিনায়ক হার্দিক পাণ্ডিয়া প্রথমে ব্যাট করতে পাঠান হায়দরাবাদকে। এই হায়দরাবাদই রানের এভারেস্টে চড়ে রেকর্ড গড়েছে আইপিএলে। তারাই এদিন ২০ ওভারে করে ৮ উইকেটে ১৭৩ রান। যদিও পিচ দেখে মাইকেল ক্লার্ক আগে বলেছিলেন, ২০০-র কাছাকাছি রান আছে এই পিচে। ভুল কিছু বলেননি প্রাক্তন অজি অধিনায়ক। বিপজ্জনক সব ব্যাটার হায়দরাবাদ দলে। মাঝখানে হারাকিরি না করলে হয়তো দুশো হয়েও যেত।
ওয়াংখেড়ের পিচের সুবিধা নিলেন মুম্বই বোলাররা। শুরু থেকে বল পড়ে ঠিকঠাক ব্যাটে আসছিল না। টাইমিং ঠিক করতে পারছিলেন না হায়দরাবাদের ব্যাটাররা। হার্দিক পাণ্ডিয়া ৩১ রানে ৩টি উইকেট নেন। ফর্মে ফেরার ইঙ্গিতও দেন তিনি। পীযূষ চাওলাও তিনটি উইকেট নেন। নিয়মিত ব্যবধানে উইকেট পড়ল হায়দরাবাদের। তাদের ইনিংসে সর্বোচ্চ রান করেন হেড (৪৮)। বাকিরা সেভাবে জ্বলে উঠতে পারেননি। শেষের দিকে রান বাড়ানোর মরিয়া চেষ্টা করেছিলেন কামিন্স (৩৫)।
হায়দরাবাদের রান তাড়া করতে নেমে একসময়ে নিজেদের বিপন্ন করে মুম্বই। ঈশান কিষান (৯), রোহিত শর্মা (৪) ও নমন ধীর (০) দ্রুত ফিরে যান ডাগ আউটে। মুম্বই তখন ধুঁকছে। স্কোরবোর্ড বলছে মুম্বইয়ের রান তিন উইকেটে ৩১। আগের ম্যাচগুলোয় ঠিক যেভাবে মুম্বই দিগভ্রষ্ট হয়েছে, এদিনও সেরকমই ইঙ্গিত ছিল। কিন্তু এই পরিস্থিতি থেকে সূর্য ম্যাচটা নিয়ে গেলেন মুম্বইয়ের সাজঘরে। তিনি নিজে বললেন, ”তিন উইকেট হারিয়েছি। আমাকে শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে হত।”
সূর্য সেটাই করলেন। সঙ্গে পেলেন তিলক বর্মাকে (৩৭*)। এদিকে শিশির পড়ে বল ভারি হতে থাকে। সূর্যকুমার অন্য অবতারে ধরা দিলেন। ওয়াংখেড়ের উইকেট তাঁর পরিচিত। প্র্যাকটিসে অসম্ভব সব শট অনুশীলন করেন। এদিন প্যাট কামিন্স, ভুবিদের যত্রতত্র ছুড়ে ফেলেন তিনি। তাঁরাও থামাতে পারলেন না সূর্য-ঝড়। তেজিয়ান সূর্যকে কেইবা কবে বাগে আনতে পেরেছে। এদিনের ইনিংসের পরে ভক্তরা আশাবাদী বিশ্বকাপেও জ্বলে উঠবেন সূর্য। সূর্যকুমার যাদব কিন্তু স্বপ্ন দেখাতে শুরু করে দিয়েছেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.