Advertisement
Advertisement

ওয়ার্নের নামে স্ট্যান্ড, জাতীয় সংগীত ব্র্যাডম্যান-পৌত্রীর, চোখের জলে শেষবিদায়ে স্পিন সম্রাট

আবেগতাড়িত হুসেন-বর্ডাররা।

Stand of legendary cricketer Shane Warne unveiled, MCG crowd bids their hero an emotional farewell | Sangbad Pratidin
Published by: Krishanu Mazumder
  • Posted:March 31, 2022 8:47 am
  • Updated:March 31, 2022 12:29 pm  

 সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ১৯৯৯ সালে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে প্রয়াত শেন ওয়ার্নের (Shane Warne) ডেলিভারিটা নাসের হুসেনের এখনও মনে আছে। তার আগে পর্যন্ত ওয়ার্নকে স্লেজ করছিলেন হুসেন। ক্রিকেট মাঠে দুঁদে বিপক্ষের বিরুদ্ধে মানসিক যুদ্ধ জিততে যে অস্ত্র প্রায়শই ব্যবহার করা হয়। তা, প্রাক্তন ইংল্যান্ড অধিনায়কও করেছিলেন। ভাবেননি পরিণতিতে নিজের উইকেটটাই চলে যাবে! “ওয়ার্নিকে একটাই কথা বলব। তোমার সঙ্গে ক্রিকেট খেলাটা ভাগ্যের ব্যাপার। আমার দেখা চিরশ্রেষ্ঠ বোলার তুমি,” বলে দিয়েছেন আবেগতাড়িত হুসেন।

পুরনো দিনের কথা ভাবলে বেশ দুঃখই হয় অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি অধিনায়ক অ্যালান বর্ডারের (Allan Border)। অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক হিসেবে একেবারে শেষ দিকে, শেষ বছর দু’য়েক ওয়ার্নকে পেয়েছিলেন বর্ডার। আজ বর্ডার আছেন, ওয়ার্ন নেই। কিন্তু সাক্ষাৎ স্পিন দেবতার দেখা যে তিনি পেয়ে যাবেন নিজের ক্রিকেটজীবনে, ভাবতে পারেননি বর্ডার। শেন ওয়ার্নকে ধন্যবাদ দিতে ইচ্ছে হয় এখন বর্ডারের। নিজেকে ভাগ্যবান মনে হয় ওয়ার্ন তাঁর নেতৃত্বে বছর দু’য়েক খেলেছিলেন বলে। বর্ডার বলে দিয়েছেন, “আমার ক্যাপ্টেন্সি মেয়াদ বেড়ে গিয়েছিল ওয়ার্ন চলে আসায়। বললাম না, ওয়ার্নের সঙ্গে দু’টো বছর খেলতে পেরে আমি ভাগ্যবান।”

Advertisement

[আরও পড়ুন: IPL 2022: ব্যাটিং বিপর্যয়, অনুশাসনের অভাব! লড়াই করেও আরসিবির কাছে হার নাইটদের]

মার্ভ হিউজ এক কালের সতীর্থ ক্রিকেটার নয়, প্রিয় বন্ধুকে হারিয়েছেন। এমন এক বন্ধু, যাকে মাঠের চেয়েও বেশি মাঠের বাইরে পাওয়া যেত। যে কোনও দরকারে, বিপদ-আপদে। “অসম্ভব সৎ, কাছের বন্ধু বলতে যা বোঝায় ওয়ার্ন সেটাই ছিল আমার কাছে। মাঠে যা ছিল, মাঠের বাইরে তার পাঁচগুণ বেশি ছিল। খুবই অনুগত। ওয়ার্নি যদি একবার কিছু করার প্রতিশ্রুতি দিত, করেই ছাড়ত,” বলে ফেলেছেন হিউজ।

এঁরা কেউ বন্ধু। কেউ পুরনো অধিনায়ক। কেউ মিত্র। কেউ শত্রু। কিন্তু বুধবারের এমসিজিতে এঁরা প্রত্যেকে মিশে গেলেন এক নির্দিষ্ট মোহনায়। আবেগের গান স্যালুট দিতে দিতে। যে মোহনার নাম শেন কিথ ওয়ার্ন।
গত ৪ মার্চ থাইল্যান্ডের কো সামুই দ্বীপে ছুটি কাটাতে গিয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন ওয়ার্ন। শোকস্তব্ধ বিশ্ব যা আজও পুরোপুরি বিশ্বাস করে উঠতে পারেনি। সেই ওয়ার্নকে এ দিন চিরবিদায় জানানো হল পঞ্চাশ হাজারের ঐতিহাসিক মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে। যেখানে প্রিয় বন্ধু ওয়ার্নির জন্য গান বাঁধলেন এল্টন জন, এড শিরান। যেখানে ওয়ার্নের সন্তানেরা প্রয়াত পিতাকে নিয়ে স্মৃতিচারণা করল। মাইকেল ভন, অ্যালান বর্ডার, ব্রায়ান লারা, মার্ভ হিউজ, মার্ক টেলরের মতো ক্রিকেট কিংবদন্তিরা আলোচনা সভায় বসে ওয়ার্ন নিয়ে বলতে বলতে আবেগে কেঁপে গেলেন। যে অনুষ্ঠানের সূচনা জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে শুরু করলেন ডন ব্র্যাডম্যানের (Don Bradman) নাতনি গ্রেটা। যে অনুষ্ঠান এমসিজি গ্যালারিতে বসে দেখলেন মাইকেল ক্লার্ক, গ্লেন ম্যাকগ্রার মতো ক্রিকেট নক্ষত্ররা। যে অনুষ্ঠান পাকিস্তানে সিরিজ খেলতে যাওয়া অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট টিম একসঙ্গে বসে দেখল টিভিতে। যে অনুষ্ঠানে আম ক্রিকেট জনতার সঙ্গে উপস্থিত থাকলেন ওয়ার্নের শৈশবের ক্লাব সেন্ট কিলডার ফুটবলাররা। ছেলেবেলায় ফুটবল খেলার স্বপ্ন নিয়ে যে ক্লাবে নাম লিখিয়েছিলেন ওয়ার্ন। যে অনুষ্ঠান শেষে এমসিজির বিখ্যাত সাদার্ন স্ট্যান্ডের নাম বদলে করে দেওয়া হল শেন ওয়ার্নের নামে। যে নতুন স্ট্যান্ডের আবরণ উন্মোচন করল ওয়ার্নের তিন সন্তান– ব্রুক, সামার এবং জ্যাকসন।

যে অনুষ্ঠান আবহ দেখলে একবারও মনে হবে না, এটা কোনও ভাবে ওয়ার্নকে চিরবিদায় জানানোর অনুষ্ঠান ছিল বলে। বরং পুরোটাই ছিল তাঁর বাহান্ন বছরের জীবনের প্রতিটা মুহূর্তকে শেষ বারের মতো উদযাপন করা। নইলে কখনও অনুষ্ঠান চলার সময় ‘ওয়ার্নি…ওয়ার্নি’ বলে জয়ধ্বনি দেয় এমসিজি? মৃত্যু তো শোকের প্রতিচ্ছবি, বিরহের প্রতিবিম্ব। আজ পর্যন্ত কার শেষকৃত্যে জয়ধ্বনি উঠেছে? এল্টন জনের গানের কথা আগেই লেখা হয়েছে। এমসিজির বিশাল জায়ান্ট স্ক্রিনে এ দিন আবার আবির্ভূত হয়েছেন এড শিরান, রবি উইলিয়ামস, ক্রিস মার্টিন। মার্টিন আবার বলেও দেন, ‘ঝামেলা, চিৎকার-চেঁচামেচির সঙ্গে ওয়ার্নি সমার্থক।”

প্রাক্তন অস্ট্রেলীয়জাত গল্ফার গ্রেগ নরম্যান আবার বলে দেন, ‘শান্তিতে ঘুমোও ওয়ার্নি। জীবনে যে ক’জন সেরা মানুষের সংস্পর্শে এসেছি আমি, তুমি তার একজন ছিলে।’ ওয়ার্নের সঙ্গে একটা সময় দীর্ঘ প্রণয়ের সম্পর্ক ছিল যাঁর, সেই এলিজাবেথ হার্লি আবার ততক্ষণে আবার লিখে দিয়েছেন, ‘ভেবে খুব খারাপ লাগছে যে, ওয়ার্নি ভালবাসত যাদের, তারা আর ওর থেকে সেই দেখা হলে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরার অনুভূতিটা আর পাবে না।’

বলা হয়নি, ওয়ার্নের ঘরের মাঠ, সাতশো টেস্ট উইকেটের মহাকীর্তি ছোঁয়ার মাঠ এমসিজির গর্ভে এ সব চলছে যখন, বাইরেও তখন একটা জিনিস ঘটে গিয়েছে। এমসিজির বাইরে ওয়ার্নের বিশাল মূর্তির সামনে নিঃশব্দে জমা হয়ে গিয়েছে রাশি রাশি সিগারেটের প্যাকেট আর বিয়ারের ক্যান, ঠিক নিজের সম্পর্কে শেন কিথ ওয়ার্নের মূল্যায়নকে মনে পড়িয়ে। জীবিত থাকার সময় যা একবার বলেছিলেন ওয়ার্ন।

আই স্মোকড, আই ড্র্যাঙ্ক অ্যান্ড আই প্লেড ক্রিকেট আ বিট! সিগারেট আর সুরাপানের পাশাপাশি আমি কিছুটা ক্রিকেটও খেলেছিলাম!

[আরও পড়ুন: লখনউয়ের বিরুদ্ধে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পুরস্কার! শামিকে শুভেচ্ছা জনপ্রিয় পর্নস্টারের]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement