সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দক্ষিণ আফ্রিকা নয়, এশিয়া ও আফ্রিকা একাদশের ম্যাচ দিয়ে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে আবির্ভাব ঘটেছিল তাঁর। তিন ম্যাচের সেই সিরিজে মাত্র ২টি উইকেট নিয়েছিলেন। তখন কি আর কেউ ভেবেছিলেন সেই তিনিই একদিন দক্ষিণ আফ্রিকার (South Africa) জার্সিতে বল হাতে ভয়ংকর হয়ে উঠবেন! লাল, সাদা বল হাতে আগুন জ্বালাবেন বাইশ গজে।
কে তিনি? তিনি ডেল স্টেইন (Dale Steyn)। ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম দ্রুতগতির বোলার। একবার নিজের সম্পর্কে এই প্রোটিয়া বোলার বলেছিলেন, “মাঠের বাইরে আমি খুব শান্ত প্রকৃতির একজন মানুষ। কিন্তু ক্রিকেট বল হাতে আমি ভয়ংকর।” নিজের সম্পর্কে ভুল কিছু বলেননি তিনি। তাঁর গতির সঙ্গে আপস করতে না পেরে প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানরা এসেছেন আর গিয়েছেন। গতির জন্যই স্টেইনকে ডাকা হত ‘স্টেইন-গান’ নামে। স্টেইন সেই বিরল প্রজাতির ফাস্ট বোলার, যাঁর বোলিং দেখার জন্য টেলিভিশনের পর্দায় চোখ লাগিয়ে বসে থাকতেন ভক্তরা।
আজ, মঙ্গলবার বুট জোড়া তুলে রাখলেন স্টেইন। জানিয়ে দিলেন, সব ধরনের ক্রিকেট থেকে তিনি বিদায় নিচ্ছেন। অতীতে প্রাক্তন ক্যারিবিয়ান ফাস্ট বোলার অ্যান্ডি রবার্টসকে দেখে কাঁপতেন ব্যাটসম্যানরা। সেই রবার্টস একসময়ে তাঁর ছায়া দেখেছিলেন স্টেইনের মধ্যে। রবার্টসের মতোই আগ্রাসী স্টেইন। তাঁর মতোই খেলার সময়ে হাসি লুকিয়ে রাখতেন। তাঁকে বল হাতে ধেয়ে আসতে দেখে ব্যাটসম্যানদের ঠকঠকানি ধরে যেত।
১৭ বছরের ক্রিকেট কেরিয়ারে প্রায় সাত বছর (২০০৮-১৪, ২০১৬) আইসিসি (ICC) টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বর বোলার ছিলেন তিনি। দেশের হয়ে ৯৩টি টেস্টে ৪৩৯টি উইকেটের মালিক স্টেইন। ১২৫টি ওয়ানডে থেকে ১৯৬টি উইকেট সংগ্রহ করেছিলেন। ২৬ বার পাঁচ-পাঁচটি উইকেট নেন।
২০১৯ সালে টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছিলেন। চেয়েছিলেন সীমিত ওভারের ক্রিকেট কেরিয়ারকে দীর্ঘায়িত করতে। ২০১৯ সালের মার্চে দেশের হয়ে শেষবার ওয়ানডে খেলেছেন। খেলেছেন আইপিএলেও।
এ বছর সংযুক্ত আরব আমিরশাহীতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বল গড়াবে। ৩৮-এর স্টেইন তার আগেই জানিয়ে দিলেন প্রিয় খেলাকে বিদায় জানাচ্ছেন। রক ব্যান্ড কাউন্টিং ক্রোজ তাঁর বড় প্রিয়। প্রিয় ব্যান্ডের ‘লং ডিসেম্বর’ গানের লাইন তুলে স্টেন লিখেছেন, “অনুশীলন, ম্যাচ, ভ্রমণ, জয়, পরাজয়, পায়ে স্ট্র্যাপ প্যাঁচানো, জেট ল্যাগ, আনন্দ, সৌভ্রাতৃত্বের ২০ বছর। বহু স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। ধন্যবাদ জানানোর অনেকে রয়েছেন। আমার ভীষণ পছন্দের কাউন্টিং ক্রোজ-কে সব কিছু বলার দায়িত্ব দিলাম।”
ফাস্ট বোলারদের কেরিয়ারের কোনও না কোনও সময়ে চোট আঘাতের লাল চোখ দেখতে হয়েছে। ব্যতিক্রম নন স্টেইনও। ২০১৬ সালে কাঁধের চোট তাঁর ক্রিকেট জীবন প্রায় শেষ করে দিচ্ছিল। এক বছরের বেশি সময় নামতেই পারেননি টেস্টে।
Announcement. pic.twitter.com/ZvOoeFkp8w
— Dale Steyn (@DaleSteyn62) August 31, 2021
বল হাতে আগুন ধরালেও স্টেইনের কেরিয়ারে নেই বিশ্বকাপ। তাঁর দেশের মতোই তিনিও ছিলেন চোকার্স। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ সেমিফাইনালের ইডেন পার্কের ছবিটা নিশ্চয় মনে রয়েছে ক্রিকেটপ্রেমীদের। প্রোটিয়া স্পিড স্টারকে মাঠের বাইরে ফেলেন কিউয়ি গ্র্যান্ট এলিয়ট। সেই ছক্কা টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে দিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকাকে। নিউজিল্যান্ডকে নিয়ে গিয়েছিল প্রথমবার বিশ্বকাপের ফাইনালে। ছিটকে যাওয়ার পরে আবেগঘন দৃশ্যের জন্ম দিয়েছিল ইডেন পার্ক। মাঠের মধ্যে বসে যন্ত্রণায় কাঁদছিলেন মর্নি মর্কেল। বিশ্বাস করতে পারেননি ম্যাচ হাতের বাইরে বেরিয়ে যাবে। বিশ্বাস করেননি স্বয়ং স্টেইনও। ভেঙে পড়েছিলেন তিনিও। তাঁকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন এলিয়ট। বিদায়বেলায় এ সব স্মৃতি নিশ্চয় ভাসছিল স্টেইনের চোখে। তাই তো তিনি বলেছেন, “দেয়ার আর টু মেনি মেমোরিজ টু টেল।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.