Advertisement
Advertisement

Breaking News

Sourav Ganguly

কুড়ি বছরের কাটা ঘা পেল না বদলার মলম, তৃপ্তির হাসি হাসা হল না সৌরভের

কুড়ি বছর পরেও অন্ধকার জমাট বেঁধে রইল বুকে!

Sourav Ganguly's dream was broken by Rohit Sharma's defeat | Sangbad Pratidin
Published by: Kishore Ghosh
  • Posted:November 19, 2023 9:36 pm
  • Updated:November 19, 2023 10:50 pm  

কিশোর ঘোষ: সব ভালো হলেও শেষ ভালো হল না। ফাইনালের তীরে চুরমার বিশ্বকাপের স্বপ্ন। ২০০৩-এর বদলা নিতে পারলেন না রোহিত-বিরাট-শামিরা। কুড়ি বছর পরেও ভাগ্যদেবতা পাশে থাকলেন না। তৃপ্তির হাসি হাসা হল না সেই মানুষটার, যিনি ২০২৩-এর মেগা ফাইনাল (Cricket World Cup 2023) ভারত জিতলে সব থেকে বেশি খুশি হতেন। ফাইনালের আগে মিডিয়াকে বলেও ছিলেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে রোহিতরা বদলা নিক।’ 

বুঝতে বাকি নেই এই বক্তব্য বঙ্গরত্ন বেহালার ছেলের, কিংবদন্তি ক্রিকেটার, ভারতের সর্বকালের ‘অন্যতম’ সেরা অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের। ২০০৩-এ পন্টিংয়ের অস্ট্রেলিয়ার কাছে পরাজয়ে ‘নিল-আর্মস্ট্রং-স্থান’ চ্যূত যিনি। দ্বিতীয় সেরা হয়ে বাঁচা…! বিশেষজ্ঞরা যাই বলুন, সাফল্যের নিরিখে দু-দুটো বিশ্বকাপ জেতা ধোনিকেই পাবলিক ভারতীয় ক্রিকেটের কুতুব মিনারে বসিয়েছে। প্রশ্ন উঠছিল, পচে ঘা হয়ে ওঠা ২০ বছরের পুরনো ওই ক্ষতে মলম পড়বে কি ১৯ নভেম্বর ২০২৩-এ? একা সৌরভ নয়, ওই ক্ষতের জ্বালা জানি আমরাও। আমরা কারা?

Advertisement

হইহই নয়ের দশক। রইরই বাংলা মিডিয়াম। মেট্রো চ্যানেল। এসটিডি বুথ। চায়ের দোকানে আড্ডা। পাড়ায় পাড়ায় বাড়ন্ত ক্রিকেট কোচিং ক্যাম্প। উসেইন বোল্টকেও পিছনে ফেলছে ভারতীয় ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা তখন। নেপথ্য তিন কিংবদন্তি। শচীন-ডালমিয়া-সৌরভ। স্বপ্নসন্ধানী বোর্ড প্রেসিডেন্ট, ডাকাবুকো ভারতীয় অধিনায়ক আর আসমুদ্র-হিমাচলের ভরসা ব্যাটার কী খেলটাই না দেখিয়েছিলেন। গরিব ভারতের দুঃখ নিভে যেত দেশে-বিদেশে নীল জার্সি জ্বলে উঠলে!

একশো কোটির অধিনায়ক হওয়া নিঃসন্দেহে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। যে দায়িত্ব ছিল বঙ্গসন্তানের কাঁধে। বাঙালি বিদ্বেষীদের চমকে দিয়ে সেই কাজ সাফল্যের সঙ্গে করছিলেন সৌরভ। একদিকে একের পর এক ম্যাচ জেতানো ইনিংস, অন্যদিকে আগ্রাসী অধিনায়কত্বে বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন, তিনি সেই বেঙ্গল প্রভিন্সের প্রতিনিধি, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে সব থেকে বেশি বিপ্লবী সাপ্লাই দিয়েছে যারা। জাহির-হরভজন-যুবরাজ-শেহবাগদের মতো তরুণ প্রজন্মকে তৈরি করাই হোক কিংবা শচীন-দ্রাবিড়-লক্ষ্মণ-কুম্বলেদের যুথবব্ধতা। সবটাই সৌরভের নেতৃত্বের (পড়ুন ম্যানেজমেন্টের) গুণ। যে কঠিন যাত্রা শুরু হয়েছিল বেটিং কেলেঙ্কারির স্যাঁতস্যাঁতে চাতালে, জোহানেসবার্গে ২০০৩-এর বিশ্বকাপ ফাইনালের পিচে ছিল তার শেষ পরীক্ষা!

 

[আরও পড়ুন: ১২ বছর পর বিশ্বজয়ের হাতছানি, কোন তিন কারণে অজিদের চেয়ে এগিয়ে ভারত?]

শেষের সেদিনের আগে অবধি অশ্বমেধের ঘোড়ার মতোই ছুটছিল শচীন-সৌরভ-দ্রাবিড়ের ভারত। পুল এ-র দল হিসেবে ৬টি মধ্যে ৫টি ম্যাচে জয়। গাঙ্গুলির ভারত হারিয়েছিল ইংল্যান্ড, পাকিস্তান, জিম্বাবোয়ে, নেদারল্যান্ডস ও নামিবিয়াকে। গ্রুপ পর্বে কেবল অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারতে হয়েছিল। সুপার সিক্সে কেনিয়া, শ্রীলঙ্কা এবং নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে সেমিফাইনালের যোগ্যতা অর্জন। সেমিফাইনালে কেনিয়াকে হারিয়ে জোহানেসবার্গে ফাইনালে।

অর্থাৎ নতুন শতাব্দীর প্রথম বিশ্বকাপে দুবারের সাক্ষাতে পন্টিংয়ের অপ্রতিরোধ্য অস্ট্রেলিয়ার কাছেই হার হয়েছিল ভারতের। হবে নাই বা কেন। বিশ্ব ক্রিকেট অমন সোনায় বাঁধানো দল কবার পেয়েছে। ব্যাটে পন্টিং, গিলক্রিস্ট, হেডেন এবং অন্যরা। বলে ওয়ার্ন, ম্যাকগ্রা, লি এবং সম্প্রদায়। অসাধারণ ফিল্ডিং সাইড। ফাইনালে টস জিতে অজিদের ব্যাট করতে পাঠানোই কি সৌরভের অধিনায়কত্ব জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল ছিল? ৩৫৯ রান তুলে কফিনে পেরেক পুতে দিয়েছিলেন বেভান-লেম্যান-মার্টিনরা। এদিকে পেট মোটা, ঢেউ খেলানো পিকচার টিউবের সামনে বসে ‘আমরা’ও সিঁদুরে মেঘ দেখেছিলাম। এবং তাই ঘটেছিল। ভারত শেষ হয়ে গেল ২৩৪ রানে। সেবার তৃতীয়বারের জন্য বিশ্বকাপ জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া।

 

[আরও পড়ুন: ২০০৩-র পর তেইশের ফাইনালেও থাবা বসাবে বৃষ্টি? কী বলছে হাওয়া অফিস?]

সেই হারের বেদনা যতখানি সৌরভের, আসমুদ্র-হিমাচলের, যেন বা তার চেয়েও বেশি বাঙালির একটি প্রজন্মের! নয়ের দশকে যারা বড় হচ্ছিল। শতাব্দী ডিঙোনো ২০০৩ বিশ্বকাপ ছিল যাদের স্বপ্নের শীর্ষে পৌঁছানোর হাতছানি। এভারেস্টে ওঠার ঠিক আগে যা তলিয়ে গিয়েছিল মৃত্যুনীল খাদের আঁধারে। কুড়ি বছর পরেও ওই অন্ধকার জমাট বেঁধেই রইল আমার বুকে, আমাদের বুকে বুকে। রোহিত-বিরাট-শামিদের অজিবধে যা দীর্ঘশ্বাস হয়ে মিলিয়ে যেতেই পারত! কিন্তু হল না। ফুটবলে জার্মানি আর ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়া যে অপ্রতিরোধ্য।  ফলে তৃপ্তির হাসি হাসা হল না সৌরভের। বরং মন খারাপের গন্ধ আকাশে বাতাসে। দীপাবলির পরেই অকাল অমানিশার সাক্ষী হল দেশ।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement