ফাইল ছবি
গৌতম ভট্টাচার্য, লন্ডন: মুম্বইয়ের বাড়ির ল্যান্ডলাইনে তাঁকে পাওয়ার নেই। শিবাজি পার্কের উলটোদিকে বড় বাড়িটা এখন প্রোমোটারের হাতে। আর নিজেও মুম্বই ছেড়ে চলে গিয়েছেন শহরতলি থেকে প্রায় দুশো কিলোমিটার দূরে পাহাড়ি এলাকা লাভাসায়। এখানেই ৬ বিএইচকে ভিলা বানিয়ে সংসার করছেন সন্দীপ পাটিল। এখন মুম্বই আসার একমাত্র টিভির কাজ বা কোনও অনুষ্ঠান থাকলে। হোয়াটসঅ্যাপে কিছু ছবিও পাঠালেন নতুন বাড়ির। যা দেখে মনে হবে নতুন বাড়িতে জাঁকিয়ে বসেছেন। ফোনে সেখানেই শনিবার মধ্যদুপুরে ধরা গেল তাঁকে।
প্রশ্ন: ছবি দেখে তো মনে হচ্ছে লাভাসাতেও একটা সন্দীপ পাটিল ইনিংস! ঝোড়ো। বিনোদনে ভরা। ফ্ল্যামবয়েন্ট।
পাটিল: সবার শুভেচ্ছা, বড়দের আশীর্বাদ।
প্রশ্ন: শুনলাম তিরাশির কাপজয়ী টিম নিজেদের একটা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ বানিয়েছে।
পাটিল: হ্যাঁ খুব মজা হয়। ইয়ার্কি-ঠাট্টা, একে অন্যের পেছনে লাগা। আবার ইম্পর্ট্যান্ট দিনে একে অন্যকে উইশ করা। সব চলে সেই গ্রুপে।
প্রশ্ন: আপাতত সেই গ্রুপে কী চলছে? ২০১৯ টিম নিয়ে কিছু?
পাটিল: শুরু হব-হব। ইন্ডিয়ার খেলাটা তো শুরু হোক।
প্রশ্ন: ওভালের প্র্যাকটিস ম্যাচে বিশ্রী হেরে যাওয়া দেখে কী মনে হল?
পাটিল: আমি তো দাঁত কাটছি। এটা হয়তো পয়া। তিরাশিতে আমরাও নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে প্রথম প্র্যাকটিস ম্যাচ হেরেছিলাম।
প্রশ্ন: পিছন ফিরে তাকালে তিরাশি জয় কি আজও অবিশ্বাস্য মনে হয়?
পাটিল: কিছুটা অবিশ্বাস্য তো লাগেই। আমি বলব লাক আমাদের সঙ্গে ছিল। গ্রুপ থেকে সবাই জানত উঠবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর অস্ট্রেলিয়া। হঠাৎ জিম্বাবোয়ে যে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে দিল, এটা আমাদের জন্য দরজা খুলে দিল। আর একটা লাক কাজ করে। সেমিফাইনালে যশপাল রান আউট ছিল। আম্পায়ার দেননি। সেটা বড় একটা টার্নিং পয়েন্ট। কার্যত তিরাশিতে আমরা ছিলাম জিরো। হয়ে গেলাম হিরো।
প্রশ্ন: আপনার ইংল্যান্ডের সঙ্গে ইনিংসটা নিয়ে সেদিনও ওভার প্রেসবক্সে সাংবাদিকদের মধ্যে চর্চা হচ্ছিল। বব উইলিসকে এক ওভারে পাঁচটা বাউন্ডারি।
পাটিল: আসলে সেমিফাইনালের আগে ইংল্যান্ড অপমানজনক কিছু কথাবার্তা বলেছিল আমাদের সম্পর্কে। সকালে গাভাসকর আমাদের একটা কাগজ এনে দেখায় যেখানে লেখা ওরা বলেছে সেমিফাইনাল হল ওয়ান ওয়ে টিকিট। ওটা সুনীলের ছকই ছিল যাতে আমরা মোটিভেটেড হই। আমি তাই হয়েছিলাম। মহিন্দর আর যশপাল বেসটা তৈরি করে দেওয়ার পর আমি ঠিক করি, যা থাকে কপালে আজ চালাব। তারপর তো জানেন।
প্রশ্ন: আগে নির্বাচক কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে এই টিমের অনেকেই আপনার নির্বাচিত। আর ধোনিকে তো দেখছেন যখন এই টিমের কোচ ছিলেন সেই সময় থেকেই।
পাটিল: ইয়েস। ধোনি যখন কিছু ছিল না, তখন থেকে আমি ওকে চিনি। সেই জন্যই আমাদের সম্পর্কটা কখনও বদলায়নি।
প্রশ্ন: আপনি যে মুম্বই ঘরানায় থেকে বড় হওয়া, তাতে তো যুব খেলোয়াড় ধোনিকে গ্রহণ করারই কথা নয়। তাঁর স্ট্রোক প্লে এতটাই শর্তের বিরোধী।
পাটিল: আমার তো প্রথম থেকেই মনে হয়েছিল এ কপিবুক ক্রিকেটার না হতে পারে, কিন্তু এই ছেলে প্রথম থেকেই হটকে। সেই সময় কিছু দিনের জন্য বয়কটকে ‘এ’ টিমের ব্যাটিং কনসালট্যান্ট করা হয়েছিল। নেটে একদিন ধোনি ব্যাট করছিল। বয়কট দেখে বলে, এ বুঝি তোমার ‘এ’ টিমের প্লেয়ার? ক’দিন পরে আন্ডার নাইন্টিন টিমের সঙ্গে একটা ম্যাচ ছিল। সেখানে ধোনি সাত নম্বরে নেমে একটা ৩০ করেছিল যা আজও ভুলতে পারি না। ম্যাচের শেষে আমি গিয়ে ওকে বলি, মাহি জীবনে যে কেউ এসে বলুক, তোমার এই স্টাইলটা প্লিজ চেঞ্জ কোরো না। দুঃখ একটাই। বয়কটকে দেখাতে পারিনি। সেদিন ও ছিল না (হাসি)।
প্রশ্ন: দেখাই যাচ্ছে ইন্ডিয়ান টিম লোকেশ রাহুলকে দিয়ে চারে খেলাচ্ছে। আপনি একমত?
পাটিল: না। আমি চাই ধোনিকে চারে। আমার একটা জিনিস ভেবে বিরক্ত লাগছে। ফার্স্ট ম্যাচের মাত্র ক’দিন বাকি। এখনও চার নম্বর নিয়ে কথা হচ্ছে কেন? এটা তো একটা নেগেটিভ থট প্রসেস হয়ে যাচ্ছে। একটা কথা মনে রাখতে হবে। এবারের বিশ্বকাপে ইন্ডিয়ার সবচেয়ে ইম্পর্ট্যান্ট প্লেয়ার হচ্ছে ধোনি। তাঁর খেলার স্কিল আর অভিজ্ঞতা মিলিয়ে। সেই লোককে নীচে না রেখে যথাসম্ভব ওপরে দেওয়া উচিত। যাতে বেশি বল খেলতে পারে।
প্রশ্ন: আপনি আজও সিলেকশন কমিটির চেয়ারম্যান থাকলে ঋষভ পন্থকে নিতেন?
পাটিল: অবশ্যই নিতাম। তবে আমার মনে হয় ঋষভ না নিয়ে কার্তিক, এই ডিসিশনটা স্বয়ং ক্যাপ্টেনের। কোহলি হয়তো চেয়েছে বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে অভিজ্ঞতাকে প্রাধান্য দিতে। এখন ক্যাপ্টেনের যদি কনফিডেন্স না থাকে, সিলেক্টররা কী করবে? তবে আমার টিমে অবশ্যই ব্যাটসম্যান হিসেবে ঋষভ ঢুকত।
প্রশ্ন: আপনি চেয়ারম্যান থাকার সময় ধোনি আচমকা টেস্ট ক্যাপ্টেন্সি ছেড়ে দেন। কোনও আঁচ পেয়েছিলেন?
পাটিল: না। আমি শক্ড হয়ে গিয়েছিলাম। ক্যাপ্টেন কী করে সিরিজের মাঝখানে ছেড়ে চলে যেতে পারে? এটা হয় না। ওকে বোঝাতেও চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু ও বলে, সন্দীপ ভাই আমার মোটিভেশন নেই। কী করে এই ছেলেদের সামনে আমি দৃষ্টান্ত হতে পারব? সবাইকে ঠকানো হবে সেটা। শুনে মনে হয়েছিল অসামান্য! এরকম কাউকে আর দেখব না।
প্রশ্ন: ধোনি কি আপনার দেখা সেরা ক্যাপ্টেন?
পাটিল: না। আমার দেখা সেরা ক্যাপ্টেন সৌরভ গাঙ্গুলি। ও যে অবস্থা থেকে টিমটা তুলেছিল আর শেহবাগ-যুবরাজ-হরভজনদের মতো আনকনভেনশনাল প্লেয়ারদের জায়গা করে দিয়েছিল, সেই দূরদর্শিতার পাশে বসানোর মতো কেউ নেই!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.