কৃশানু মজুমদার: ‘বাঙালির জন্য আজ বিশেষ একটা দিন।’ দূরভাষে বলে উঠলেন বাংলাদেশের প্রাক্তন ক্রিকেটার হাবিবুল বাশার (Habibul Bashar)।
ভারত আর বাংলাদেশের মধ্যে সেতুবন্ধের কাজ করেছে দাদা। একনিঃশ্বাসে বলে গেলেন বঙ্গবন্ধুর দেশের প্রাক্তন উইকেটকিপার খালেদ মাসুদ (Khaled Masud)।
ওপার বাংলাতেও সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Sourav Ganguly) ‘দাদা’। সবার আপনজন। হৃদয়ের খুব কাছাকাছি। ভারতের প্রাক্তন অধিনায়কের জন্মদিনে বাংলাদেশ থেকেও আসছে শুভেচ্ছাবার্তা। এধু এবঙ্গ নয়, ওই বঙ্গেরও যে রোল মডেল সৌরভ। দেশেবিদেশের বিভিন্ন মাঠে-ময়দানে খেলা তাঁর ইনিংস ‘সৌরভ’ ছড়িয়ে দেয় ওদেশেও।
ভারতের বিরুদ্ধে অভিষেক টেস্টে নেমেছিল বাংলাদেশ। নাইমুর রহমান দুর্জয় ছিলেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। আর সৌরভের হাতে এদেশের নেতৃত্বের রিমোট কন্ট্রোল। বাংলাদেশের সেই দলটাকেই ২০১৯ সালে ইডেন গার্ডেন্সে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন সৌরভ। গোলাপি বল টেস্ট দেখতে ইডেনে এসেছিলেন দুর্জয়, খালেদ মাসুদ, আক্রম খান, হাবিবুল বাশার, বিকাশ রঞ্জন দাশ-সহ প্রথম টেস্ট দলের সবাই। সৌরভের এমন প্রচেষ্টাকে কুর্নিশ জানিয়ে খালেদ মাসুদ বলছেন, ”সৌরভ বড় ক্রিকেটার আমরা সবাই জানি। কিন্তু প্রশাসক সৌরভ দেখিয়ে দিয়েছে যে সে সম্মান জানাতেও জানে। আমাদের আমন্ত্রণ জানিয়ে দুই বাংলাকে এক করে দিয়েছিল সৌরভ। এখানেই সৌরভের বিশেষত্ব। এখানেই সৌরভ সবার থেকে আলাদা।”
অভিষেক টেস্টে বাংলাদেশ হার মেনেছিল সৌরভের দলের কাছে। আমিনুল ইসলাম বুলবুল ১৪৫ রানের দুরন্ত ইনিংস খেলেছিলেন। বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে করেছিল ৪০০ রান। জবাবে ভারতীয় ইনিংসে একসময়ে বিপর্যয় নেমে এসেছিল। কিন্তু সৌরভ এবং সুনীল যোশী ভারতের ইনিংস পুনর্গঠন করেন। এই দুই বাঁ হাতি ব্যাটসম্যানের বিক্রমের জন্যই প্রথম ইনিংসে ভারত ৪২৯ রান করে। দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের ব্যাটিং তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে ৯১ রানে। ভারত খুব সহজেই ম্যাচ জিতে নেয়। প্রথম টেস্টের স্মৃতিচারণ করে হাবিবুল বাশার বলছেন, ”সৌরভ বহু ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলেছে। অনেক ইনিংসের কথা আমার মনে আছে। তবে আমাদের অভিষেক টেস্টে সৌরভের ৮৪ রানের ইনিংসটা বেশ ভাল মনে আছে। সৌরভ ওই ইনিংস না খেললে বাংলাদেশ হয়তো ম্যাচটা হারত না।” এত বছর বাদে বলছেন হাবিবুল বাশার।
রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিদের বর্তমান কোচ রাহুল দ্রাবিড় একসময়ে বলেছিলেন, ”অন দ্য অফসাইড ফার্স্ট দেয়ার ইজ গড অ্যান্ড দেন দেয়ার ইজ সৌরভ গাঙ্গুলি।” অফসাইডের ঈশ্বর মহারাজ বললেও অত্যুক্তি হবে না। নস্ট্যালজিক হাবিবুল বাশার বলছেন, ”বহুদিন আগের কথা। তখনও সৌরভ জাতীয় দলের হয়ে খেলা শুরু করেনি। ওর দাদা স্নেহাশিস তখন সৌরভের থেকে বেশি জনপ্রিয় ছিল বলেই মনে হয়। এরকম অবস্থায় সৌরভ আর স্নেহাশিস বাংলাদেশে খেলতে এসেছিল। কোন দলের হয়ে খেলতে এসেছিল আজ আর তা মনে নেই, তবে সৌরভ ওই ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছিল। ওর খেলার ধরন দেখেই সবাই মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিল। ওর ব্যাটিং স্টাইল ছিল একেবারেই অন্যধরনের। খুব ইন্সপায়ারিং। ওর খেলা দেখে মনে হত অফসাইডটা ওর নিজের এলাকা।”
ভারতের দুই বিশ্বখ্যাত অধিনায়কের গোড়ার দিকের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে খালেদ মাসুদের নাম। বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টে খেলেছিলেন তিনি। আবার মহেন্দ্র সিং ধোনির প্রথম ম্যাচে খালেদ মাসুদই রান আউট করেছিলেন রাঁচির রাজপুত্রকে। খালেদ মাসুদ রসিকতা করে বলছিলেন, ”ধোনিকে রান আউট করেছি সেটা ভুলেই গিয়েছিলাম। ধোনির বায়োপিক দেখে মনে পড়ে।”
আর সৌরভ প্রসঙ্গে ‘পাইলট’ নামে বিখ্যাত বাংলাদেশের তারকা বলছেন, ”ভারতের মতো দেশে একজন বাঙালি ক্রিকেটার জাতীয় দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছে, এটা বিরল ঘটনা। সৌরভের আগেও বহু ভাল অধিনায়ক ছিলেন ভারতীয় দলে। কিন্তু সৌরভের নেতৃত্ব একদমই অন্যধরনের ছিল। আগ্রাসী নেতৃত্ব চালু করেছিল সৌরভই। হার না মনোভাব ছড়িয়ে দিয়েছিল গোটা দলে। সৌরভের মডেলই আজ অনুসরণ করা হচ্ছে।”
সৌরভকে পাশের বাড়ির ছেলে বলেই মনে করেন হাবিবুল। বাংলাদেশের প্রাক্তন তারকা ক্রিকেটারের মনে হয়েছে, সৌরভ তাঁদেরই ছেলে। ভারতের প্রাক্তন অধিনায়কের সঙ্গে তাঁদের আত্মিক সম্পর্ক রয়েছে। হাবিবুল বলছেন, ”একেক জন ক্রিকেটারের হাত ধরে পরিবর্তন আসে। সৌরভ সেরকমই একজন। সৌরভ বাঙালির অহংকার, বাঙালির গর্ব।”
সৌরভের জন্মদিনে হৃদয়ের এ কুল, ও কূল, দু’ কূল ভেসে যাচ্ছে আবেগের স্রোতে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.