সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: এক যুগ পরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ট্রফি উঠল ইংল্যান্ডের হাতে। ফাইনালে ফের নায়ক হয়ে উঠলেন বেন স্টোকস। হাড্ডাহাড্ডি ম্যাচে পাকিস্তানকে হারিয়ে দিল জস বাটলারের দল। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, শাহিন আফ্রিদির চোট পাওয়াটাই ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট। তবে ইংল্যান্ডের জয়ের নেপথ্যে রয়েছে আরও বেশ কয়েকটি কারণ।
১. শাহিন আফ্রিদির চোট: পাকিস্তানের হয়ে ফাইনালের প্রথম প্রত্যাঘাত করেছিলেন শাহিন আফ্রিদি। ভারতের বিরুদ্ধে জয়ের নায়ক অ্যালেক্স হেলসকে প্রথম ওভারেই আউট করে দেন তিনি। প্রথম স্পেলে আগুনে বোলিং করেন পাক পেস অ্যাটাকের সেরা অস্ত্র। তাঁর বোলিংকে আক্রমণ করা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়ে ইংল্যান্ড ব্যাটারদের পক্ষে। কিন্তু একটি ক্যাচ ধরতে গিয়ে পায়ে চোট পান শাহিন। মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যেতে বাধ্য হন। তা সত্বেও বোলিং করতে মরিয়া ছিলেন শাহিন। কিন্তু নিজের তৃতীয় ওভারের প্রথম বলটি করেই আর দাঁড়াতে পারেননি তিনি। তাঁর পরিবর্তে বল তুলে দেওয়া হয় ইফতিকার আহমেদের হাতে। ওখানেই ম্যাচ ঘুরে যায়।
২. পাওয়ার প্লেতে স্লো ব্যাটিং: সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে পাওয়ার প্লের সময়ে একেবারেই রান করতে পারেনি ভারতীয় ব্যাটাররা। তার জেরেই শেষ পর্যন্ত বড় রান তুলতে পারেনি ভারত। ফাইনালের মহামঞ্চে সেই একই ভুল করল পাকিস্তানও। পাওয়ার প্লেতে মন্থর ব্যাটিংয়ের ফল ভুগতে হল বাবর আজমদের। মাত্র ১৩৭ রানেই থেমে গিয়েছিল পাক ইনিংস। ইংল্যান্ডের বিধ্বংসী ব্যাটিং লাইন আপকে থামাতে এই সামান্য রানের পুঁজি যথেষ্ট ছিল না পাকিস্তানের জন্য।
৩. পাক মিডল অর্ডারের ব্যর্থতা: পাওয়ার প্লের ব্যর্থতা তাড়িয়ে বেড়াল পাকিস্তানের পুরো ব্যাটিং লাইন আপকে। আদিল রশিদ ও স্যাম কুরান-দু’জনের কৃপণ বোলিংয়ের সামনে নড়তেই পারছিলেন না পাক ব্যাটাররা। রান তুলতে গিয়ে চাপের মুখে পড়ে মিসটাইমড শট খেলেন মহম্মদ রিজওয়ান-ইফতিকার আহমেদরা। তার ফলেই লাগাতার উইকেট হারিয়ে একেবারে নিষ্প্রভ হয়ে পড়ে পাক ব্যাটিং। নামমাত্র রান তোলেন বাবররা। ফাইনাল ম্যাচে মাত্র ১৩৭ রান নিয়ে লড়াই করা কার্যত অসম্ভব।
৪. স্যাম কুরান: ম্যাচ ও টুর্নামেন্ট-দুইয়েরই সেরা নির্বাচিত হলেন ইংল্যান্ডের এই তরুণ অলরাউণ্ডার। পাকিস্তানের ব্যাটিংকে একাই শেষ করে দিলেন স্যাম কুরান। রান আটকানোর পাশাপাশি নিয়মিত ব্যবধানে উইকেট তোলা-একসঙ্গে দু’টো কাজই নিখুঁতভাবে করেছেন তিনি। ফাইনালের চাপ সামলে তাঁর অনবদ্য বোলিংয়ের সামনে ভেঙে পড়ল পাকিস্তানের মিডল অর্ডার। ইংল্যান্ডের জন্য বিশ্বকাপ জয়ের মঞ্চ তৈরিতে কার্যকরী ভূমিকা নিলেন তরুণ অলরাউণ্ডার।
৫. জস দ্য বস: ঘাসে ঢাকা পিচে ব্যাট করা বেশ কঠিন হয়ে পড়েছিল। কিন্তু কঠিন পরিস্থিতিতেও আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করা যায়, দলের মধ্যে এই বিশ্বাস ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক। যদিও সেমিফাইনালের মতো বিধ্বংসী ফর্মে দেখা যায়নি তাঁকে। তবুও ফাইনালের দিন ২৬ রানের মূল্য কিছু কম নয়। তাঁর তৈরি করা মঞ্চেই ফুল ফোটালেন বেন স্টোকস। বিশ্বকাপ ফাইনাল মানেই যেন স্টোকসের রূপকথা লেখার মঞ্চ। কঠিন পরিস্থিতি সামলে, মাঠে আছাড় খেয়েও টিকে থাকলেন ময়দানে। হাফ সেঞ্চুরি করে দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়লেন তিনি।
২০১৯ সালে প্রথমবার ওয়ানডে বিশ্বকাপ জিতেছিল ইংল্যান্ড। তার তিন বছর পরেই ফের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংরেজরা। প্রথম দল হিসাবে একই সঙ্গে দুই বিশ্বকাপের মালিক হলেন জস বাটলাররা। ভক্তদের মনে আশা জাগিয়েও থেমে যেতে হল পাকিস্তানকে। ১৯৯২-য়ের রূপকথা আর নতুন করে লেখা হল না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.