গৌতম ভট্টাচার্য, লন্ডন: ভারতীয় হেড কোচকে ধরব ভেবেছিলাম সশরীরে লন্ডনে। কিন্তু হোটেল বিভ্রাটের জন্য জিমি অ্যান্ডারসনের শহরেই আটকে রয়েছেন। কাল এখানে আসবেন। মাসের শেষে টিম নিয়ে উড়ে যাবেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেই সফরে তিনি থাকছেন। ম্যাঞ্চেস্টার থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধেয় ফোনে ইন্টারভিউ দিলেন রবি শাস্ত্রী।
প্রশ্ন: বিশ্বকাপ বিদায়ের পর অন্যবারের মতো জঙ্গি প্রতিক্রিয়া যে এবার হয়নি সেটা কি আশ্চর্য?
শাস্ত্রী: জঙ্গি কী বলছেন! সবাই তো দারুণ বলছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির টুইটটা দেখেছেন? রাহুল গান্ধী লিখেছেন।
প্রশ্ন: দেখিনি। কী বলেছেন ওঁরা?
শাস্ত্রী: প্রধানমন্ত্রী থেকে সাধারণ মানুষ- সবার মুখে এক কথা। তোমরা দারুণ লড়েছ। আমি নিজে যে ক’টা মেসেজ পেয়েছি সব উৎসাহব্যঞ্জক। এমনকী প্লেয়ার বা সাপোর্ট স্টাফরা বলছিল, ওরাও কোনও নেগেটিভ মেসেজ পায়নি।
প্রশ্ন: কেউ বলেনি যে আমরা প্রচণ্ড হতাশ এবং উত্তেজিত?
শাস্ত্রী: আমার নিজের কথা বলতে পারি, ব্যবসায়ী থেকে সাধারণ সময়ের কঠিনতম সমালোচক তারাও বলেছে ওয়েল প্লেড। হার্ড লাক।
প্রশ্ন: হার্ড লাক শুধুই? গত ছয় বছরে পাঁচটা নকআউট ম্যাচ হেরেছি আইসিসি টুর্নামেন্টে। এটা কি প্রচণ্ড ভয়ের সংকেত নয় যে বিশেষ দিনে চাপের মুখে আমরা ভেঙে পড়ছি?
শাস্ত্রী: আমি মনে করি না।
প্রশ্ন: মনে করেন না যে নকআউট ম্যাচে হারটা একটা প্যাটার্ন হয়ে যাচ্ছে?
শাস্ত্রী: না ওটা ও ভাবে দেখলে হবে না। খুঁটিয়ে বুঝতে হবে। আপনি যে ম্যাচগুলোর কথা বললেন তার মধ্যে সিডনির বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল আমরা টস হারি। কোনও কোনও ম্যাচ আছে যেখানে টসটা ভীষণ ইম্পর্ট্যান্ট হয়ে যায়। এবার যেমন। ভাগ্য আগাগোড়া বিপক্ষে কাজ করল।
প্রশ্ন: যেমন?
শাস্ত্রী: যেমন ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে ম্যাচটা যদি সে দিন শেষ হয়ে যায়, আমরা ইজি জিতি। মোমেন্টাম আমাদের সঙ্গে ছিল। পরের দিন কী হল, বৃষ্টিতে উইকেটের তলায় একটা ময়শ্চার তৈরি হয়ে গেল। ওই স্যাঁতস্যাঁতে ভাবটা ওদের বোলাররা কাজে লাগিয়ে ফেলল। আমি বলব নিউজিল্যান্ড খুব বুদ্ধি করে ক্রিকেট খেলেছে। ওরা জানত, ওদের যা কাজ করার করতে হবে প্রথম আট ওভারের মধ্যে। ওই সময়টা ওরা অ্যাটাকিং ফিল্ড সাজিয়ে পুরো ফায়দা তুলে নিল। ওই তিরিশ মিনিটের বাজে ক্রিকেট আমাদের টুর্নামেন্ট থেকে বার করে দিল। ভাবা যায়, গোটা টুর্নামেন্ট ভাল খেলে আমরা জাস্ট আধ ঘণ্টার ব্যর্থতায় ছিটকে গেলাম। আর কত নিষ্ঠুর হতে পারত ব্যাপারটা?
[আরও পড়ুন: ‘দেশের দরকার আপনাকে’, ধোনির অবসরের গুঞ্জনেই টুইট-বার্তা ক্রিকেটপ্রেমী লতার]
প্রশ্ন: আর মন্দভাগ্য বলতে?
শাস্ত্রী: আমরা যখন বল করছি এবং স্পিনারদের স্পেল শুরু হয়েছে, বৃষ্টি শুরু হয়। বলটা ভিজে যাওয়ায় চাহাল ঠিকমতো গ্রিপ করতে পারছিল না। ওই বল ভিজে যাওয়ার সময় নিউজিল্যান্ড যে কুড়ি-বাইশ রান বাড়িয়ে নেয়, ওটাই কত বড় তফাত হয়ে গেল দেখুন। তার পর দু’টো এলবি ডিসিশন। রস টেলর যখন ১ পরিষ্কার এলবি ছিল চাহালের বলে। রিপ্লেতে গেলে এখনও দেখতে পাবেন, আউট পেলাম না। অথচ কোহলির যে বলটা টপ অব দ্য স্টাম্পস অর্ধেক আম্পায়ার দেবেন না, সেটাই ইলিংওয়ার্থ আউট দিল। ওটা নট আউট দিলে নিউজিল্যান্ড রিভিউ নিয়েও আউট পেত না। এগুলো এখন অন্য রকম শোনাতে পারে। কিন্তু একটা কথা মাথায় রাখবেন এই ছোট ছোট জিনিসগুলো জড়ো হয়েই তো বড় ছবি তৈরি হয়।
প্রশ্ন: ধোনিকে সাত নম্বরে পাঠানো নিয়ে কিন্তু খুব সমালোচনা হচ্ছে।
শাস্ত্রী: তা হলে কখন পাঠাতাম? ওকে আগে পাঠালে তো খেলা অনেক আগেই শেষ হয়ে যেত। বল তখন এতটা সুইং করছিল। সিম করছিল। ধোনি যদি প্রথম চার উইকেটের মধ্যে চলে যেত, তা হলে শেষ দিকে এই প্রায় জিতে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হত না।
প্রশ্ন: কিন্তু হার্দিকের বদলে অন্তত ছয় নম্বরে ওঁকে পাঠালেন না কেন?
শাস্ত্রী: কারণ তখন স্যান্টনার বল করছিল। আমরা ধোনিকে ঠিক সেই সময় পাঠাতে চেয়েছি যখন ও নিজে সবচেয়ে স্বচ্ছন্দ। প্রায় তো করেও দিয়েছিল। জাদেজা যদি আর ছ’টা বল থাকত ম্যাচ বদলে যেত।
প্রশ্ন: গাপ্টিলের থ্রো-টা কি টার্নিং পয়েন্ট হয়ে গেল?
শাস্ত্রী: অ্যাবসোলিউটলি। ধোনি কিন্তু দারুণ ক্যালকুলেট করে খেলছিল এবং ওর যা রেকর্ড, জিতিয়ে দিত। এমএসের হাতে ১০টা বল ছিল তার মধ্যে ছ’টা ফিফথ বোলারের। যার জন্য ও অপেক্ষা করছিল। আর চারটে ফার্গুসনের। এই দশ বলে অন্তত দু’টো ছয় ও মারত।
প্রশ্ন: চলতি বিশ্বকাপে ধোনির পারফরম্যান্স নিয়ে এত বিভাজন যা অভূতপূর্ব। আপনার কী মত?
শাস্ত্রী: আমি বলব, ধোনির কাছে আমরা যা চেয়েছি ও সেটা ষোলো আনা করে দিয়েছে। একটা কথা বুঝতে হবে, ও তো আর যৌবনের সেই ধোনি নেই। যে দশ বছর আগের ক্রিকেট খেলবে। কিন্তু যারা ওর সমালোচক তারা ভুলে যাচ্ছে, কিপিংটা কী অসামান্য করছে। লোকে শুধু ওর ব্যাটিং নিয়ে পড়ে আছে।
[আরও পড়ুন: নক-আউটে পরপর হার, বিশ্বক্রিকেটে ‘চোকার্স’ তকমাটা কি এবার ভারতের প্রাপ্য?]
প্রশ্ন: জাদেজা?
শাস্ত্রী: কী অনবদ্য বলুন তো। দু’টো ম্যাচে চল্লিশ রান বাঁচিয়েছে। আমি হিসেব দেখছিলাম সাতটা ম্যাচে ৩০ রান বাঁচিয়েছে ম্যাক্সওয়েল। তার পর ওই ব্যাটিং।
প্রশ্ন: জাদেজা সম্পর্কে মঞ্জরেকরের টুইট?
শাস্ত্রী: সরকারি উত্তর দেব না বেসরকারি?
প্রশ্ন: সরকারি। অন রেকর্ড।
শাস্ত্রী: খুব অর্ডিনারি স্টেটমেন্ট সঞ্জয়ের।
প্রশ্ন: কোথাও এই হেরে যাওয়ার সঙ্গে সাতাশির ওয়াংখেড়ে সেমিফাইনালের মিল পাচ্ছিলেন? সে দিনও পঁয়তাল্লিশ মিনিটে গ্রাহাম গুচের সতেরোটা সুইপ আপনাদের বিশ্বকাপের বাইরে করে দেয়।
শাস্ত্রী: না। ওই সময়ের ওয়ান ডে ক্রিকেট অনেক আলাদা ছিল। এখানে লেভেলটাই আলাদা হয়ে গিয়েছে। আমার ছেলেগুলো কী ব্রিলিয়ান্ট ক্রিকেটই না খেলেছে গোটা টুর্নামেন্ট ধরে। এই যে লোকের হারার পরেও এত ভাল ভাল কথা বলছে, নিশ্চয়ই এরা মনে দাগ কাটার মতো ক্রিকেট খেলেছে বলেই তো বলছে। আমি আজ সকালেও ওদের ব্রেকফাস্ট টেবলে বসে বলছিলাম, বাস্তবটা অ্যাকসেপ্ট করে মুভ অন। কিন্তু সত্যি তো এই ফল ওদের প্রাপ্য ছিল না। একটা কথা ভাবুন তো, ইংল্যান্ড জেসন রয় ছাড়া দু’টো ম্যাচের দু’টোতে হারল। আমরা শিখর ধাওয়ানকে বাদ দিয়েও কত লড়াই করেছি। শিখরের মতো একটা ওপেনার ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে থাকলে, লেফট-রাইট কম্বিনেশন তৈরি করা গেলে, নিউজিল্যান্ড এই লড়াইটাই করতে পারত না।
প্রশ্ন: প্রায় জাতীয় প্রশ্ন হয়ে গিয়েছে যে, ধোনি কি অবসর নিচ্ছেন?
শাস্ত্রী: আমি কিছু জানি না। বিরাট কিছু জানে না।
(আগামিকাল শেষ কিস্তি)
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.