দুলাল দে: এতদিন আলোচনা চলছিল ফুটবলকে ঘিরেই। স্পনসর চলে যাওয়ার পর যখন লাল-হলুদ তাঁবু জুড়ে টেনশনের চোরা স্রোত, তখনই ইনভেস্টর হিসেবে ‘কোয়েসের’ আগমন। মরশুম জুড়ে যে বিপুল ব্যয়ের বোঝা নিয়ে টালমাটাল ছিলেন লাল-হলুদ কর্তার, কোয়েস আসতেই সেই চাপ থেকে মুক্তি। কোয়েস ইস্টবেঙ্গলের হাত ধরে ফুটবল দলের নতুন রূপ দেখছেন কর্তারা। এতদিন যা কিছু আলোচনা সব কোয়েস ইস্টবেঙ্গল ফুটবল দল ঘিরে। কিন্তু সকলের অগোচরে ইস্টবেঙ্গলের ক্রিকেট দলকেও ‘কোয়েস’ হাতে নিচ্ছে, তা সমর্থকদের মাথায় নেই। এবার থেকে ফুটবলারদের মতো ক্রিকেটারদেরও বেতন থেকে যাবতীয় দেখভালের দায়িত্ব কোয়েস কর্তাদের।
গত বছর ঘরোয়া ক্রিকেটে ইস্টবেঙ্গলের সাফল্য না থাকলেও তার আগের মরশুমে পাঁচটার মধ্যে চারটে ট্রফি ঢুকেছিল লাল-হলুদের তাঁবুতে। এই মরশুমেও দল আহামরি নয়। সই হয়েছে ১৯ জন ক্রিকেটারের। যার মধ্যে পাঁচজন রঞ্জি ক্রিকেটার। অনুস্টুপ মজুমদার, কৌশিক ঘোষ, বি অমিত, প্রদীপ্ত প্রামাণিক এবং ঈশান পোড়েল। ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে মোহনবাগান তাঁবুতে তারকার ঢল। নামে, বাজেটে সবদিক থেকে তারা এগিয়ে। এবার ইস্টবেঙ্গলের ক্রিকেট বাজেট ৪০-৫০ লাখের মতো। মোহনবাগানের বাজেট প্রায় দ্বিগুণ। ইস্টবেঙ্গলের ক্রিকেট সচিব সদানন্দ মুখোপাধ্যায় বললেন, “ইস্টবেঙ্গল চিরকালই কম বাজেটে প্রতিভাবান ক্রিকেটার নিয়ে দল গড়ে।’’ ক্রিকেট সচিব এই কথা বললেও এই মরশুমটা ইস্টবেঙ্গলের কাছে অন্যরকম। ময়দানে কোনও ক্রিকেট দলের মাথায় কোয়েসের মতো ইনভেস্টর হাত নেই। কোয়েস ইস্টবেঙ্গলের সিইও সঞ্জিত সেন বললেন, “আমরা ফুটবল নিয়ে যতটা আগ্রহী, ততটাই ক্রিকেট নিয়ে। এই মরশুমে আমরা যখন থেকে ক্রিকেটের দায়িত্ব নিলাম, তখন ক্রিকেট দল হয়ে গিয়েছে। তাই দল নিয়ে মতামত জানানোর জায়গা নেই। ক্রিকেট সচিব ভাল দল গড়ার চেষ্টা করেছেন। আমরা দায়িত্ব নিলেও সব কিছুতেই ক্রিকেট সচিবকে সমর্থন জানাচ্ছি।”
[ক্যাচ মিসেই ম্যাচ মিস! ভাঙাচোরা অস্ট্রেলিয়ার কাছেও হার কোহলিদের]
ফুটবলের দেখভালের জন্য যেমন ব্রিগেডিয়ার চট্টোপাধ্যায়কে সিওও পদে নিয়োগ করা হয়েছে, এবার থেকে ক্রিকেট দেখভালের দায়িত্বও তাঁর। সদানন্দ বাবু বললেন, “আগে ক্রিকেট দল গড়তে দায়িত্ব নিতে হত দেবব্রত সরকারকে। তাঁর সঙ্গে বসে বাজেট করতাম। তারপর দল গড়া হত। এখন কোয়েস ক্রিকেটেরও দায়িত্ব নেওয়ায় বেতন বা অন্যান্য খরচ নিয়ে ভাবতে হবে না।” দল গড়া হয়ে গেলেও দু’জন ভিন রাজ্যের ক্রিকেটারকে সই করানো হচ্ছে। পুরোটাই কোয়েসের সঙ্গে আলোচনা করে। একজন পাঞ্জাবের অনূর্ধ্ব ২৩ দলের অফ স্পিনার সুখবিন্দর সিং। অন্যজন উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন রঞ্জি ক্রিকেটার আইরিশ আলম। ভিন রাজ্যের ক্রিকেটার নেওয়ার জন্য আর একটি জায়গা ফাঁকা থাকছে। সেটা কোয়েসের সঙ্গে আলোচনা করে নেওয়া হবে।
ফুটবলে যে কোনও সময় যে কোনও ফুটবলারের বদলে বাইরে থেকে ফুটবলার এনে সই করানো যায়। বাংলার ঘরোয়া ক্রিকেটে তা সম্ভব নয়। সঞ্জিত সেন বললেন, “আমরা দেরিতে ক্রিকেটের দায়িত্ব নিলাম। কোনও ক্রিকেটারকে প্রস্তাব দেওয়ার জায়গায় নেই। তাকিয়ে আছি আমন্ত্রণমূলক প্রতিযোগিতাগুলির দিকে। সেখানে সম্ভব হলে ভিন রাজ্য থেকে ভাল ক্রিকেটার নিয়ে আসব।’’ ইস্টবেঙ্গল ক্রিকেট সচিব বলছেন, “এবার দল গড়ার জন্য ফেব্রুয়ারি থেকে পরিকল্পনা শুরু হয়। কোয়েস এসেছে জুলাইয়ে। তাই এবার ক্রিকেটারদের দলবদলে কোয়েস কিছুই করতে পারেনি। তবে পরের মরশুমে ভাল দল গড়তে অনেক আগের থেকে কোয়েসের সঙ্গে আলোচনা করতে পারব।” ইস্টবেঙ্গল ক্রিকেট সচিবের সুরে সুর মিলিয়ে সঞ্জিত সেন বললেন, “কোয়েস ফুটবলের পাশাপাশি ক্রিকেটেরও দায়িত্ব নিয়েছে ভাল কিছু করার জন্য। পরের মরশুমে এক নম্বর দল গড়তে আগে থেকে মাঠে নামব।’’
[শাস্তি কমল ইস্টবেঙ্গলের, ডিসেম্বর থেকেই ফুটবলার সই করাতে পারবে ক্লাব]
তাহলে কী ফুটবলের মতো ক্রিকেটের ব্যাপারেও কোয়েসের সঙ্গে ইস্টবেঙ্গলের দশ বছরের চুক্তি? সঞ্জিত সেন বললেন, “আমরা ইনভেস্টর। আমাদের কিছু শেয়ার আছে। ক্লাবেরও আছে। কোনও সময় দিন ধরে চুক্তি হয় না। পরিস্থিতির উপর সব কিছু নির্ভর করে।’’ কোয়েস ক্রিকেটের দায়িত্ব নিতে আর্থিক ব্যাপারে লাল-হলুদ তাঁবুতে এখন স্বস্তির ছায়া। কর্তাদের চাপ যে অনেক কমল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.