রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়: ইডেনে (Eden Gardens) মঙ্গলবার পুলিশ ভিজিট হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ও সব আর হচ্ছে না। ঠিক হয়েছিল, ইডেনে মাঠকর্মীদের এ দিন থেকে জৈব সুরক্ষা বলয়ে ঢুকিয়ে ফেলা হবে। তারও আর কোনও প্রয়োজন নেই। আইপিএল (IPL 2021) ম্যাচে লাগবে বলে ম্যানুয়াল স্কোরবোর্ডের বরাত দেওয়া হয়েছিল। এখন বাতিল, সব বাতিল। আইপিএলই তো বাতিল!
গত এক মাস ধরে ইডেনে আইপিএল নামক রাজসূয় যজ্ঞের প্রস্তুতি কথা ভাবলে সময় সময় খারাপই লাগবে। আগামী ৯ মে থেকে আইপিএল ‘পুণ্যতীর্থ’ বসার কথা ছিল শহরে। কত আয়োজনের কথাই তো শোনা যাচ্ছিল। পুরনো কলকাতা বিমানবন্দর খোলা হবে বিরাট কোহলি-মহেন্দ্র সিং ধোনিদের চার্টার্ড ফ্লাইট নামার জন্য। সল্টলেকের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ইডেনের পুরনো ফ্লাডলাইট বসানোর কাজ চলছিল। নিকাশি ব্যবস্থা ঠিকঠাক আছে কি না, পিডব্লিউডির সঙ্গে কথা বলা, স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চের সঙ্গে সিএবি আধিকারিকদের দেখাসাক্ষাৎ করা- কিছু বাদ যায়নি গত কয়েক দিনে। কিন্তু মঙ্গলবারের পর সব শেষ। আর্থিক লোকসানও তো হল কত। দশটা ম্যাচ আয়োজন করার কথা ছিল ইডেনের। ম্যাচ পিছু এক কোটি টাকা করে পেত সিএবি। সে টাকা আর পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছেন কেউ কেউ। প্লাস, ম্যাচ আয়োজনের জন্য প্রতিটা কাজ করতে গিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে।
ময়দানের কেউ কেউ এ দিন বিস্ময়কর ভাবে বলছিলেন যে, আইপিএলের মতো এত উন্নত, এত ঐশ্বর্যশালী টুর্নামেন্টের জৈব সুরক্ষা বলয়কে কী করে এ ভাবে ছিন্নভিন্ন করে দিল মারণ জীবানু? কেউ কেউ বলছিলেন যে, সিএবি আটটা টুর্নামেন্ট করেছে এর মধ্যে। সব কিছু মিলিয়ে। ৪৬৪-টা ম্যাচ হয়েছে। তিন হাজারের উপর ক্রিকেটার খেলেছেন। জৈব বলয়ে রেখে টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টও করেছে সিএবি। কোথায়, করোনার এমন মারণ-হানা তো দেখা যায়নি। ঠিকই। কিন্তু তখনও করোনার দ্বিতীয় সংক্রমণের ঢেউ এমন মারাত্মক ভাবে দেশজুড়ে আছড়ে পড়েনি।
আইপিএল বাতিলের পর তো একটা আশঙ্কা প্রবল বাড়ছে যে, এরপর দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটও না অনিশ্চয়তার চোরাঘূর্ণিতে তলিয়ে যায়। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর: সৈয়দ মুস্তাক আলি টি-টোয়েন্টি। অনূর্ধ্ব ১৯ বিনু মানকড় ট্রফি। নভেম্বর: বিজয় হাজারে ট্রফি। অনূর্ধ্ব ১৯ ওয়ান ডে চ্যালেঞ্জার। ডিসেম্বর-মার্চ: রনজি ট্রফি। অনূর্ধ্ব ২৩ কর্নেল সিকে নাইডু ট্রফি। কোন তারিখ থেকে কোন টুর্নামেন্ট শুরু, ঠিক হয়নি কিছু এখনও। সবই বোর্ডের খসড়া। কিন্তু দেশে যদি করোনা প্রকোপ এমনই চলতে থাকে আগামী কয়েক মাসে, তখন ঘরোয়া ক্রিকেটও আর করা যাবে কি না, সন্দেহ আছে। কারণ-সেই তো জৈব বলয়ে রেখে খেলাতে হবে টিমগুলোকে। আর জৈব বলয় যে নিশ্ছিদ্র নয়, প্রমাণ হয়ে গিয়েছে আইপিএলে। বোর্ড ঘনিষ্ঠ কেউ কেউ বললেন যে, ঘরোয়া ক্রিকেট করাটাই এখন অগ্নিপরীক্ষা বোর্ডের কাছে।
সেপ্টেম্বর মাসে যেত তেন প্রকারেণ তা শুরু করতে হবে। নইলে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ নিয়ে ন্যূনতম আশাবাদ বেঁচে রয়েছে, সেটাও শেষ হয়ে যাবে। এই পরিস্থিতিতে ICC জানিয়েছে, জুলাই পর্যন্ত তাঁরা অপেক্ষা করবে। তারপরই বিশ্বকাপ ভারত থেকে সরানো হবে কি না, সে ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কেউ কেউ আশা করছেন, তার মধ্যেই করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হবে। প্রতিষেধক আরও আসবে। এ ভাবে চিরকাল চলবে না। কিন্তু নিশ্চিত ভাবে ভবিষ্যৎ গণনা করা যায় কি? অতএব? অতএব- আইপিএল বাতিল হওয়ায় বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় টুর্নামেন্ট শুধু বন্ধ হল না। একই সঙ্গে ভারতের ক্রিকেট কাঠামোকেই তীব্র ঝাঁকুনি দিয়ে চলে গেল!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.