বাংলাদেশ: ১০৬/১০ (শাদমান-২৯, লিটন-২৪)
ভারত: ১৭৪/৩ (পূজারা-৫৫, কোহলি-৫৯*)
প্রথম দিনের শেষে ৬৮ রানে এগিয়ে ভারত
সুলয়া সিংহ: কানায় কানায় ভরতি ক্রিকেটের নন্দনকাননের গ্যালারি। কখনও উঠছে মেক্সিকান ওয়েভ, তো কখনও ‘শচীন…শচীন’ শব্দব্রহ্মে আকাশ-বাতাস মুখরিত। এক মুহূর্তের জন্য ভুল হতে পারে, ওয়ানডে বা আইপিএলের ম্যাচ চলছে না তো? ভারতের প্রথম গোলাপি বলের টেস্টের প্রথম দিন ইডেনের ছবিটা এমনটাই ছিল। যেখানে ম্যাচের থেকেও মুখ্য হয়ে উঠেছিল ম্যাচ ঘিরে উৎসবের আমেজ। আর সেই উৎসবকে আরও বেশি রঙিন ও প্রাণোবন্ত করে তোলার কাজটা করল বিরাট অ্যান্ড কোং। প্রথম দিনই বাংলাদেশকে লজ্জায় ফেলে দিলেন ইশান্ত-পূজারারা।
গল্ফ কার্টে শচীন–অনিল কুম্বলেদের মাঠ ভ্রমণ, রুনা লায়লার গান, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেক হাসিনা ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ক্রিকেটারদের সৌজন্য সাক্ষাৎ- এসব একদিকে। আর অন্যদিকে গোলাপি বল। যে বলের পারফরম্যান্সের অপেক্ষায় প্রহর গুনছিল ক্রিকেট মহল। কোনও প্র্যাকটিস ম্যাচ ছাড়াই গোলাপি বলে আন্তর্জাতিক ম্যাচে মুখোমুখি ভারত-বাংলাদেশ। এমন পরিস্থিতিতে এসজি বল খেলতে কোনও সমস্যা হবে না তো? রাতের আলোয় দেখতে কোনও অসুবিধা হবে না তো? সুইং সহায়ক বলে ব্যাটসম্যানরা খেলতে পারবেন তো? শিশিরের ভূমিকাই বা কী হবে? এসব প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছিল।
তবে পূজারা ও কোহলির পার্টনারশিপ দেখে বোঝার জো নেই যে তাঁরা প্রথমবার পিংক বলে খেললেন। তাঁদের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ভর করে সুন্দর ছন্দেই এগোলো ভারত। এদিন ৩২ রান করতেই প্রথম ভারত অধিনায়ক হিসেবে পাঁচ হাজার রানের মালিক হয়ে গেলেন কোহলি। তবে একবার লাইফ লাইন পেয়েও (জায়েদের ওভারে ক্যাচ মিস হয়) প্রিয় ইডেনে বড় রানের ইনিংস খেলতে পারলেন না রোহিত। ২১ রানে আউট হন তিনি। উলটোদিকে ওপার বাংলার ব্যাটসম্যানরা যে তিমিরে ছিলেন, সেই তিমিরেই রয়ে গেলেন।
ইন্দোর টেস্টের কথা নিশ্চয়ই মনে আছে। দেড়শো রানেই গুটিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস। এদিন ততদূরও গড়াল না। মাত্র ৩০ ওভার খেলতে পারলেন মহম্মুদুল্লারা। টিম ইন্ডিয়ার জন্য দর্শকদের গলা ফাটানো চিৎকার আর ভারতীয় পেস অ্যাটাকের সামনে রীতিমতো অসহায় দেখাল তাঁদের। তিন পেসার- উমেশ, শামি ও ইশান্তই শেষ করে দিলেন বাংলার বাঘদের। একাই পাঁচটি উইকেট তুলে নেন ইশান্ত। উমেশের ঝুলিতে তিনটি এবং শামি নিলেন জোড়া উইকেট। গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো আবার ব্যাটিংয়ের সময় শামির বলে মাথায় চোট পান লিটন দাস ও নইম হাসান। বেসরকারি হাসপাতালে সিটিস্ক্যান হয় লিটনের। চোট পেয়ে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে যেতে হয় নইমকেও। যা খবর, চলতি টেস্টে আর খেলতে পারবেন না তাঁরা।
ব্যাটিং-বোলিং তো বটেই, উইকেটের পিছনে দাঁড়ানো ঋদ্ধিমান সাহার কথা উল্লেখ করতেই হয়। চিলের মতো ছোঁ মেরে এক-একটি বল ধরলেন। আর সেই সঙ্গে গড়লেন নয়া নজির। উইকেটকিপার হিসেবে এই নিয়ে ১০০বার ব্যাটসম্যানকে প্যাভিলিয়নে ফেরালেন। এমএস ধোনি, সৈয়দ কিরমানি, নয়ন মোঙ্গিয়ার সঙ্গে এক তালিয়ায় নাম লেখালেন ঋদ্ধি। সবমিলিয়ে ঐতিহাসিক পিংক বল টেস্টের প্রথমদিনটি যে স্মরণীয় হয়ে রইল, তা বলাই বাহুল্য। তবে এত আড়ম্বরের মধ্যে মুশফিকুরদের মুখ ফ্যাকাসেই। কারণ এই ম্যাচের ভবিষ্যৎও ইন্দোর টেস্টের ন্যায় হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.