২০১১ ওডিআই বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেট দল। ২০২৪ প্যারিস অলিম্পিকে ব্রোঞ্জজয়ী হকি দল। আর সদ্য দোম্মারাজু গুকেশের কনিষ্ঠতম দাবাড়ু হিসাবে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়া। তিন ঘটনায় মধ্যে একটাই প্রধান সাযুজ্য। প্যাডি আপটন। ভারতীয় ক্রিকেট আর হকি দলের একদা মেন্টাল কন্ডিশনিং কোচ শেষ ছয় মাস কাজ করেছেন গুকেশের সঙ্গে। এমনকি সিঙ্গাপুরে উপস্থিত থেকে ভারতীয় তরুণের বিশ্বজয় প্রত্যক্ষ করেছেন সামনে থেকে। সেখান থেকেই ‘সংবাদ প্রতিদিন’কে হোয়াটসঅ্যাপে সাক্ষাৎকার দিলেন আপটন, শুনলেন শিলাজিৎ সরকার।
প্রশ্ন : ক্রিকেট, হকির পর এবার দাবা। আপনি তো বারবারই ভারতের জন্য সৌভাগ্য বহন করে আনেন দেখছি!
আপটন : আসলে আমিই ভাগ্যবান। তাই ভারতের মতো দেশের শ্রেষ্ঠ ক্রীড়াবিদদের মধ্যে কয়েকজনের সঙ্গে কাজ করতে পেরেছি। সেটা আমার সৌভাগ্য। আর এমনিতে ভারত এবং ভারতীয়রা আমার খুব পছন্দের। কম দিন তো আর কাজ করলাম না এখানে। প্রচুর ভালোবাসা পাই।
প্রশ্ন : গুকেশের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন?
আপটন : দুর্দান্ত! গুকেশকে এতদিন যা বলেছি, সবটা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে শুনেছে। ও যেন একটা স্পঞ্জ, যে পুরো জলটাই শুষে নেয়। সবসময় নিয়ম মেনে চলে। খাওয়া, ঘুমে কোনও অনিয়ম করে না। আর মানুষ হিসাবেও গুকেশ অসাধারণ। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরের মুহূর্তটাই দেখুন। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সবার আগে বলল ডিং লিরেনের কথা। যে প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করার জন্য এত আয়োজন, জয়ের পয় তাকেই প্রশংসায় ভরিয়ে দিল গুকেশ। মাত্র ১৮ বছর বয়সে এমন ভাবনা, অ্যামেজিং!
প্রশ্ন : গুকেশকে সাহায্য করার বিষয়টি একটু বিস্তারিত বলবেন?
আপটন : গুকেশকে সাহায্য করার প্রস্তাবটা আমার কাছে একটা নতুন দিগন্ত ছিল। কারণ আমি সেভাবে ব্যক্তিগত খেলায় কাজ করিনি। মূলত ক্রিকেট আর হকি নিয়েই করেছি। তাছাড়া দাবায় মনস্তাত্ত্বিক লড়াইটাও বেশি। তাই এই প্রস্তাবকে চ্যালেঞ্জ হিসাবেই দেখেছি। সবার আগে আমি গুকেশকে বোঝার চেষ্টা করেছি। ও কেমন মানুষ, ওর পছন্দ-অপছন্দ কী, সেসব জানার উপর জোর দিয়েছিলাম। শুরুর দিকে তাই দীর্ঘক্ষণ কথা বলেছি ওর সঙ্গে। পরবর্তীতে সেই কথার উপর ভিত্তি করে ওকে নানা পরামর্শ দিয়েছি। আর ও আমার সব পরামর্শই মেনেছে। যা বলেছি, যেমন বলেছি।
প্রশ্ন : সিঙ্গাপুরে পরপর সাতটা রাউন্ড ড্র হয়। তখন গুকেশের মনোবল ধরে রাখার কাজটা কেমন ছিল?
আপটন : অনেকেই বলাবলি করছে, লিরেন পরপর ড্র করে লড়াইটা টাইব্রেকারের দিকে নিয়ে যেতে চাইছিল। হবে হয়তো। তবে গুকেশ যে সহজে ম্যাচ ছাড়ছিল না, সেটা আপনারা নিশ্চিত ভাবেই দেখেছেন। আসলে আমাদের পরিকল্পনাই ছিল, লিরেনকে যত বেশি সময় সম্ভব ৬৪ খোপের লড়াইয়ে ব্যস্ত রাখা। তাতে ও আরও ক্লান্ত হয়ে পড়বে। তাই গুকেশ প্রতিটা রাউন্ড যতটা সম্ভব লম্বা করে তোলার চেষ্টা করেছে। বোর্ডের লড়াইয়ের মূল পরিকল্পনাগুলি অবশ্য গুকেশ ওর চেস টিমের সঙ্গেই করেছে। আমার কাজ ছিল ওকে মানসিকভাবে চাঙা রাখা। আমি সেটা করেছি।
প্রশ্ন : গুকেশ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর উদযাপনটা কেমন হল?
আপটন : সত্যি বলতে, তেমন কোনও উদযাপন হয়নি। গুকেশের পরিবার এখানে এসেছে। ওঁরা একটু আবেগী হয়ে পড়েছিলেন। তারপর আমরা একসঙ্গে ডিনার করলাম। এটুকুই। ’১১-র বিশ্বজয়ের পর অবশ্য আমরা প্রচুর উদযাপন করেছিলাম।
প্রশ্ন : ’১১-র সঙ্গে এবারের কি কোনও মিল খুঁজে পেয়েছেন আপনি?
আপটন : অনেক মিলই আছে। সবচেয়ে বড় বিষয়, দু’ক্ষেত্রেই প্রস্তুতিতে কোনও ফাঁক রাখা হয়নি। গুকেশ দুর্দান্তভাবে নিজেকে তৈরি করেছিল। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয়ও হেলাফেলা করেনি, গুরুত্ব দিয়ে দেখেছে। সেটা নিজের বিষয় হোক বা প্রতিপক্ষের, ও কিছুই বাদ দেয়নি। দুর্দান্ত প্রস্তুতি ২ এপ্রিলের সাফল্য এনেছিল। দুর্দান্ত প্রস্তুতিই গুকেশকে কনিষ্ঠতম দাবাড়ু হিসাবে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হতে সাহায্য করল।
প্রশ্ন : ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনও কথা হয়েছে আপনাদের?
আপটন : না। এখনও এই নিয়ে কোনও কথা হয়নি। আপাতত জয় উদযাপনের সময়। বাকিটা ভবিষ্যতে দেখা যাবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.