সুলয়া সিংহ: শচীন তেণ্ডুলকর। আসমুদ্রহিমাচল তাঁর ভক্ত। তাঁকে শ্রদ্ধা করা, ভালবাসার মানুষের অভাব নেই। কিন্তু এই ভালবাসাকে কিছু মানুষ পাগলামির পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারেন। তাঁদেরই অন্যতম প্রিয়াঙ্কা মোদি। যিনি কখনও লাঠিচার্জ টপকে তো কখনও নিরাপত্তার বেড়াজাল ভেঙে নিজের প্রিয় তারকার কাছে পৌঁছে গিয়েছেন। শচীন যাঁর কাছে লাকি চার্ম। মাস্টার ব্লাস্টারের জীবনের হাফ সেঞ্চুরির আগে সেই জাবরা ফ্যানই উজার করে দিলেন স্মৃতির ডালি। জানালেন, ক্রিকেটের প্রতি তাঁর ভালবাসা, শচীনের প্রতি তাঁর আবেগ আর স্বপ্নপূরণের কথা।
ছোটবেলায় ২২ গজের খেলা তেমন পছন্দ ছিল না তাঁর। তবে ১৯৯২ বিশ্বকাপ প্রিয়াঙ্কার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। ক্রিকেটের স্কোর দেখতে দেখতেই কখন শচীনে চোখ আটকে গিয়েছিল, টেরও পাননি। তার পর থেকে শচীন সংক্রান্ত নানা নানা আর্টিক্যাল, ছবি কেটে কেটে সংগ্রহে রাখতে শুরু করেন। তখনই ঠিক করে ফেলেছিলেন শচীনের (Sachin Tendulkar) সঙ্গে দেখা করতেই হবে। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। তিরানব্বইয়ে ভারত-ইংল্যান্ড টেস্ট ছিল ইডেনে। ধর্মতলার পাঁচতারা হোটেলে ওঠে টিম ইন্ডিয়া। সেই হোটেলেরই রিসেপশনে ফোন করেন প্রিয়াঙ্কা। জানান, শচীনের সঙ্গে দেখা করতে চান। প্রথমে হতাশ হতে হয়, কিন্তু তারপরই ফোনের ওপার থেকে ভেসে আসে শচীনের গলা। বিশ্বাস হয়নি ক্লাস সেভেনের প্রিয়াঙ্কার। উত্তেজনায় ফোনটাই কেটে দিয়েছিলেন! আবার খানিক পরে ফোনে কথা হয়। এবার শচীনকে রাজি করিয়ে ফেলেন প্রিয়াঙ্কা।
ভাইকে সঙ্গে নিয়ে সটান পাঁচতারা হোটেল। কিন্তু সেখানকার পরিবেশ তখন রীতিমতো উত্তপ্ত। হোটেলের বাইরের ভিড় সামলাতে লাঠিচার্জ শুরু হয়েছে। সেসবকে তোয়াক্কা না করেই শচীনের কাছে পৌঁছে যান প্রিয়াঙ্কা ও তাঁর ভাই। নিজের আইডলকে প্রথমবার চাক্ষুষ করার আনন্দ যেন ভাষায় প্রকাশ করা দায়। তারপর থেকে যখনই শচীনের শুভেচ্ছা পেয়েছেন, তাঁর ভাগ্য ফিরেছে। তাতেই শচীন হয়ে ওঠেন প্রিয়াঙ্কার গুডলাক চার্ম। তাই অন্তঃসত্ত্বা অবস্থাতেও শচীনের আশীর্বাদ পাওয়ার জন্য ছটফট করেছিলেন। সেই সাক্ষাৎও কোনও সিনেমার চিত্রনাট্য থেকে কম নয়।
ইডেনে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ। নিরাপত্তার চাদরে ঢেকেছে আলিপুরের টিম হোটেল। সেই সময় শচীনকে ফোনে প্রিয়াঙ্কার আবদার, দেখা করব। মাস্টার ব্লাস্টার হাজার বোঝানোর চেষ্টা করলেও প্রিয়াঙ্কা শোনেননি। পাঁচতারা হোটেলের সামনে গিয়ে শচীন দর্শনের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। সত্যিকারের ভক্তকে কি আর ঈশ্বর খালি হাতে ফেরান? শচীনও ফেরাননি। টিম বাসের ভিতর থেকেই প্রিয়াঙ্কার দিকে হাত নাড়েন। তারপরই নিরাপত্তারক্ষীদের বলে দেন, প্রিয়াঙ্কাকে যেন তাঁর কাছে আসতে দেওয়া হয়। ব্ল্যাক ক্যাট কমান্ডো বাহিনী সরে গিয়ে প্রিয়াঙ্কাকে জায়গা করে দেন তাঁর ‘গুরু’র সঙ্গে দেখা করতে।
২০১১ বিশ্বকাপ জয় থেকে শচীনের ডাবল সেঞ্চুরি, ১০০ তম শতরান, প্রিয়াঙ্কার ঝুলিতে স্মৃতির ঘাটতি নেই। শচীনের প্রতিটা সাফল্যকে চেটেপুটে উপভোগ করেছেন তিনি। আর মাস্টার ব্লাস্টারের অবসরের দিন ঠিক ততখানিই অঝোরে কেঁদেছেন। শচীন সন্ন্যাস নিয়েছেন। খেলার প্রতি টান হারিয়েছেন প্রিয়াঙ্কাও। তবে এখনও প্রিয় আইডলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। আইপিএলে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের জন্য গলা ফাটান। পঞ্চাশের বার্থডে বয়ের জন্য এই জাবরা ফ্যানের একটাই প্রার্থনা, চিরকাল যেন ঈশ্বরের আশীর্বাদ যেন থাকে ক্রিকেট ঈশ্বরের সঙ্গে। তিনি ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.