কৃশানু মজুমদার: তাঁকে ইতিমধ্যেই সবাই বলতে শুরু করে দিয়েছেন ‘হিটম্যান’। মুম্বইয়ের অনূর্ধ্ব-১৯ নির্বাচক অতুল রানাডে বলেছিলেন, ”ওর ব্যাটিংয়ের সঙ্গে রোহিত শর্মার মিল খুঁজে পাই।”
যাঁকে নিয়ে এত কথা তিনি অঙ্গকৃষ রঘুবংশী (Angkrish Raghuvanshi)। অনূর্ধ্ব-১৯ ভারতীয় দলের ওপেনার। শনিবার বিশ্বকাপ ফাইনালে ইংল্যান্ড বোলারদের প্রারম্ভিক গোলাগুলি সামলাবেন যে তিনিই।
ওপেনারদের কাজ সবসময়েই কঠিন। দলের শক্তিশালী ভিত গড়ে দেন ওপেনাররাই। শুরুর ঝড় সামলান তারাই। সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালকে অঙ্গকৃষের বাবা অবনীশ রঘুবংশী বলছেন, ”ওপেনিং স্লট সব সময়েই চ্যালেঞ্জের। কঠিন কাজ সন্দেহ নেই। ব্যবহারিক জীবনেও অঙ্গকৃষ কিন্তু চ্যালেঞ্জ নিতে তৈরি থাকে। ওকে যদি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেওয়া হয়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে তা গ্রহণ করে। নিজেকে তৈরি করে কঠিন চ্যালেঞ্জের জন্য।”
ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে ইতিমধ্যেই ২৭৮ রান করে ফেলেছেন অঙ্গকৃষ। তাঁর সম্পর্কে বলা হচ্ছে, পুল করার সময়ে, কভারের উপর দিয়ে মারার সময়ে শুরুর দিকের রোহিতকেই মনে পড়ে যায়। যদিও এই তুলনায় যেতে নারাজ অবনীশ। তিনি বললেন, ”এখনও অনেক পথ যাওয়ার বাকি। অনেক কঠিন পথ পেরোতে হবে। এ তো সবে শুরু।”
অনূর্ধ্ব-১৯ দলের এই ওপেনারের রক্তে খেলা। তাঁর বাবা অবনীশ একসময়ে প্রতিযোগিতামূলক টেনিস খেলেছেন। মা মালিকা বাস্কেটবলে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। অঙ্গকৃষের ভাই কৃষাঙ্গ। এখনও ষোলোতে পা দেয়নি। অথচ এই বয়সেই হয়ে গিয়েছে পেশাদার টেনিস প্লেয়ার। অবনীশ বলছিলেন, ”দুই ভাইয়ের উপরে আমরা কখনওই চাপিয়ে দিইনি কিছু। ওদের সাপোর্ট করে গিয়েছি। প্রতিভার বিকাশ ঘটানোর জন্য উপযুক্ত পরিবেশ দেওয়ার চেষ্টা করেছি।”
দাদা শনিবার অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের (U-19 World Cup) ফাইনালে নামবেন। ভাইও দেশের বাইরে। ইউরোপিয়ান সার্কিটে খেলার জন্য ইতিমধ্যেই স্পেনে পৌঁছে গিয়েছে কৃষাঙ্গ। সঙ্গে গিয়েছেন তাঁর মা। বার্সেলোনায় ট্রেনিং নিচ্ছে অঙ্গকৃষের ভাই। অবনীশ বলছিলেন, ”ঝড়-জল, শীত, গ্রীষ্ম উপেক্ষা করে ওদের মা পড়ে থেকেছে টেনিস কোর্ট, ক্রিকেট মাঠে। সকাল চারটের সময় উঠে সবার জন্য রান্না করা, সংসার আগলে রাখা-সবই ওদের মা করে। দুই ছেলের জন্য সব কিছু ত্যাগ করেছে।”
৮ বছর বয়স থেকে অঙ্গকৃষের শয়নে, স্বপনে এবং জাগরণে ক্রিকেট, ক্রিকেট আর ক্রিকেট। ভারতীয় ওপেনারের প্রতিভা দেখে মুগ্ধ হন মুম্বইয়ের প্রাক্তন অলরাউন্ডার থেকে কোচ হওয়া অভিষেক নায়ার। তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে ১২ বছর বয়সে দিল্লি থেকে মুম্বইয়ে যান উগান্ডার বিরুদ্ধে ১৪৪ রানের মালিক। ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে অঙ্গকৃষ অনুশীলন করেছেন রোহিত ও শার্দূল ঠাকুরের গুরু দীনেশ লাডের কাছে। মুম্বই থেকে দীনেশ লাড বলছিলেন, ”অভিষেক নায়ারই স্কুলে অঙ্গকৃষকে আমার কাছে পাঠিয়েছিল। ২০১৮ এবং ২০১৯ এই দুই বছর স্কুলে আমার কাছে কোচিং নিয়েছিল অঙ্গকৃষ। সেই সময়ে ওর গ্রিপে সামান্য পরিবর্তন এনেছিলাম। সেটা কাজে লেগেছিল।” অঙ্গকৃষের বাড়ির দেওয়ালে রয়েছে পছন্দের খেলোয়াড় শচীন তেন্ডুলকর, এবি ডিভিলিয়ার্সের ছবি। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের পরে অঙ্গকৃষের পোস্টারও জায়গা পেতে পারে অনেক উদীয়মান ক্রিকেটারের ঘরের দেওয়ালে।
শনিবারের বিশ্বকাপ ফাইনাল অঙ্গকৃষকে দিতে পারে আরও বড় মঞ্চ। তাঁর জন্য খুলে যেতে পারে আইপিএলের দরজাও। দরকার কেবল ব্যাটে ঝড় তোলা। তাঁর ব্যাট কথা বলতে শুরু করলে কী হতে পারে, তার ইঙ্গিত তো আগেই পাওয়া গিয়েছে এবারের বিশ্বকাপে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.