সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: স্বপ্ন ভাঙল দেশের। স্বপ্নভঙ্গ হল ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মারও। ১৪০ কোটির ভারত স্বপ্নের জাল বুনছিল। কিন্তু আহমেদাবাদে এসে বিপর্যয় ঘটল টিম ইন্ডিয়ার। তীরে এসে তরী ডুবল ভারতের। চোখের জলে নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়াম ছাড়লেন দর্শকরা। রোহিত ব্রিগেডকেও গ্রাস করল হতাশা। তাঁদের মুখচ্ছবিই বলে দিচ্ছিল, কতটা হতাশ ভারতের তারকারা। তবে এই হারের জন্য দয়া করে রোহিতদের ধিক্কার দেবেন না। তাঁদের বাড়িতে দয়া করে পাথর ছুড়বেন না। রোহিত-বিরাটরাই আমাদের জাতীয় নায়ক। ভিলেন তাঁরা কোনওমতেই নন।
বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ থেকেই স্বপ্নের দৌড় শুরু হয়েছিল টিম ইন্ডিয়ার। প্রতিপক্ষের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছিলেন রোহিত শর্মারা। রোহিত শর্মাকে দেখে সেই মিডাস রাজার কথাই মনে পড়ছিল অনেকের। যা ধরেছেন, তাতেই সোনা ফলাচ্ছিলেন। গ্রপের সবকটি ম্যাচ জিতে শেষ চারের ছাড়পত্র জোগাড় করেছিল ভারত। সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে মাটি ধরিয়ে ভারত ফাইনালে পৌঁছয়। অস্ট্রেলিয়ার কাছে ফাইনালে হার মানলেও রোহিতদের এই বিশ্বকাপ অভিযানকে কোনওমতেই খর্ব করা যাবে না।
বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম পাওয়ার হাউজ ভারত। চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকেও গ্রুপের খেলায় মাটি ধরিয়েছিল ভারত। দুর্দান্তমানের ক্রিকেট তুলে ধরেছিল রোহিতের দল। রবিবারের ফাইনাল সব অর্থেই ব্যতিক্রমী একটা দিন। ক্রিকেটে এমনও দিন আসতেই পারে, যেদিন সব ঠিকঠাক যায় না।
এদিনের ভারতীয় দলের সঙ্গে অন্যান্য দিনের টিম ইন্ডিয়ার মধ্যে হয়তো বিস্তর পার্থক্য। যে ব্যাটারদের জন্য প্রতিটি ম্যাচে ভারত পাহাড়প্রমাণ রান করে এসেছে, সেই ব্যাটারদের অনেকেই এদিন নিজেদের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। বোলাররাও শুরুতে আগুন জ্বালিয়ে ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে যান। ফাইনালের অব্যবহিত পরেই ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা বলে গেলেন, ”ছেলেরা প্রথম দিন থেকেই দুর্দান্ত ক্রিকেট তুলে ধরেছে।” ২৪০ রানের পুঁজি অবলম্বন করে জিততে হলে শুরু থেকেই আঘাত হানতে হতো ভারতীয় বোলারদের। সেটাই করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু ট্রাভিস হেড ও লাবুশেন ভাঙনের মুখে রুখে দাঁড়ান। দুই অজি ক্রিকেটারের বড় পার্টনারশিপ ভারতকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দিল। রোহিত বলছেন, ”আরও ২০-৩০ রান বেশি করাই যেত। বিরাট আর রাহুল যখন ব্যাট করছিল, তখনও আশা ছিল। কিন্তু আমরা পরপর কয়েকটি উইকেট হারাই। ফলে রান আর বাড়ানো যায়নি।” যন্ত্রণাকাতর হৃদয়ে রবি শাস্ত্রীকে কথাগুলো বললেন রোহিত। খেলার মাঠে একেকটা দিন সব ঠিকঠাক চলে না। ফাইনালও সেরকমই একটা দিন ছিল। গোটা টুর্নামেন্ট জুড়ে আলো ছড়ালেও আসল দিনে ব্যর্থ হল ভারত। চ্যাম্পিয়ন্স লাকও সঙ্গে ছিল না।
শেষ ল্যাপে এসে ছন্দ হারালেও উচ্চমানের ক্রিকেটই গোটা টুর্নামেন্টে খেলে এসেছে ভারত। এতকিছুর পরেও নিন্দুকরা নখ-দাঁত বের করবেন। তীব্র সমালোচনায় দেশের নায়কদের রক্তাক্ত করবেন। ক্রিকেটারদের শাপশাপান্ত করবেন। একবার ভেবে দেখবেন প্লিজ, এই সমালোচনা কি আদৌ প্রাপ্য রোহিতদের।
ফাইনালের অব্যবহিত পরে রোহিত-বিরাট কোহলির মুখ দেখে সহজেই অনুমেয় কতটা যন্ত্রণাকাতর তাঁরা। তাঁদের এই হারের ক্ষতে প্রলেপ পড়বে না কোনওদিন। আজ থেকে বহু বছর পরেও স্মৃতিরোমন্থন করে বসলে রোহিত শর্মার চোখ দিয়ে জলের ধারা বইতে পারে। আবেগের বাষ্প গলায় জড়িয়ে কোহলিও হতাশা প্রকাশ করতে পারেন। তার জন্য উগ্রতা-উন্মত্ততা দেখানোর কি খুব দরকার?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.