Advertisement
Advertisement

Breaking News

ODI World Cup 2023

ODI World Cup 2023: ফাইনালের আগে তুমুল নাটক পিচ নিয়ে, চর্চায় অশ্বিনও

রোহিত-দ্রাবিড়দের সঙ্গে কথাবার্তার পর পিচে ‘হেভি রোলার’ চালানো শুরু হয়।

ODI World Cup 2023: Before mega final, there is a lot of drama over the pitch । Sangbad Pratidin
Published by: Krishanu Mazumder
  • Posted:November 18, 2023 9:52 am
  • Updated:November 18, 2023 10:02 am  

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়, আহমেদাবাদ: ঝুমকা গিরা রে/বরেলি কে বাজার মে/ঝুমকা গিরা রে…।
আশা ভোঁসলের প্রখ‌্যাত গানের জনপ্রিয় অধুনা রিমেকের সঙ্গে আমেদাবাদের মাঝ দুপুরের গরমে এই মুহূর্তে সোৎসাহে নাচছেন যাঁরা, তাঁরা কেউ স্থানীয় নন। গুজরাতেরই নন। এঁরা প্রায় পাঁচশো জন উড়ে এসেছেন মুম্বই থেকে, প্রত্যেকে এক ‘ডান্স ট্রুপে’-র সদস‌্য। রবিবাসরীয় বিশ্বকাপ ফাইনালে পারফর্ম করার অভিলাষে। সংগঠকদের কার্ড ঝোলানো এক বছর পঁয়ত্রিশের যুবককে দেখলাম, শশব‌্যস্ত হয়ে সমগ্র ‘ডান্স ট্রুপ’কে এটা-ওটা বোঝাচ্ছেন, নানাবিধ নির্দেশ দিচ্ছেন।
শুনলাম, রোববারের বিশ্বকাপ সমাপ্তি অনুষ্ঠানকে তিন দফায় ভাগ করে ফেলা হয়েছে। টসের আগে ন’টা ফাইটার জেট নিয়ে ভারতীয় বায়ুসেনার ‘সূর্যকিরণ অ‌্যারোবেটিক টিমে’র মিনিট দশেকের শো। যার চোখ ঝলসানো মহড়া এ দিন হয়ে গেল একপ্রস্থ। এরপর প্রথম ইনিংসের প্রথম ড্রিঙ্কস ব্রেকে অচিন্ত‌্য ও আদিত‌্য গাধভির গান। শেষে তৃতীয় দফা, দু’ইনিংসের মধ‌্যবর্তী সময়ে। বলিউড গায়ক প্রীতম গল্ফ কার্ট করে মাঠে ঢুকবেন তখন, পিছু পিছু এই জনা পঁাচশোর ‘ডান্স ট্রুপ’। সর্বমোট সাড়ে বারো মিনিটের অনুষ্ঠান। যেখানে ‘দেবা দেবা’ থেকে ‘ঝুমকা গিরা রে’– উত্তুঙ্গ জনপ্রিয় হিন্দি গান পরপর শোনা যাবে। এক লক্ষ চৌত্রিশ হাজারের স্টেডিয়ামের আবেগ-কুণ্ডে যা অগ্নিসংযোগ করতে যথেষ্ট! 

 

Advertisement

[আরও পড়ুন: ODI World Cup 2023: ‘২০১১-র থেকেও এই টিম অনেক বেশি নিখুঁত খেলছে’, বন্ধুদের সঙ্গে ঘরোয়া আড্ডায় বললেন ধোনি]

বিস্মিতই লাগবে সময়-সময়। এত বড় একটা ম‌্যাচ। আবার বছর কুড়ি পর বিশ্বকাপে ভারত-অস্ট্রেলিয়া ফাইনাল। নিষ্ঠুর প্রতিশোধের অসীম লিপ্সায় ছেয়ে গিয়েছে আসমুদ্রহিমাচলের আবহাওয়া। অসম্ভব তেতে রয়েছে ভারতবর্ষ। এ দিনও কলকাতা থেকে ফোন করে এক ক্রিকেট-উৎসাহী বলছিলেন যে, কুড়ি বছর আগের জোহানেসবার্গ ফাইনালে সৌরভের ভারতের হারের জ্বালা অনুধাবন করার মতো বোধ তখন তঁার ছিল না। ছোট ছিলেন। কিন্তু বাবা-কাকাকে অঝোরে কাঁদতে দেখেছিলেন সে দিন। যে জ্বালা সুদে-আসলে জুড়োবে রোববারের আমেদাবাদে প‌্যাট কামিন্সের অস্ট্রেলিয়াকে চূর্ণবিচূর্ণ করে রোহিতের ভারত বিশ্বকাপ ট্রফিটা তুললে! কিন্তু সেই খুনে স্পৃহার সঙ্গে মাননসই ক্রিকেটীয় স্ফুরণ কোথায়? কোথায় তার উপযুক্ত মহড়া? কোথায় সদলবলে ভারতীয় টিমের শস্ত্রবিদ‌্যা-পাঠ, শেষ বারের মতো সমর-জ্ঞান ঝালিয়ে নেওয়া? কোথায় বদলার সেই বুনো খিদে? যা দেখছি, যা শুনছি, সবই তো বাহ্যিক আড়ম্বরের খবরাখবর। নাচ। গান। ভিভিআইপিদের সম্ভাব‌্য আগমনের খবরাখবর। দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আসার কথা। ঝঁাকে-ঝঁাকে পুলিশ নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রী অ‌্যান্থনি অ‌্যালবানিসকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আট রাজ্যের মুখ‌্যমন্ত্রী নাকি আসছেন। এ সবের মধ্যে ক্রিকেট কোথায়, ক্রিকেট?
আছে, ক্রিকেট আছে। আছে অদৃশ‌্য প্রতিশোধস্পৃহাও। শুধু দেখার চোখ থাকলে তা দেখা যায়। উপযুক্ত মন থাকলে করা যায় অনুধাবন।
জোহানেসবার্গে কুড়ি বছর আগে রিকি পন্টিংয়ের অস্ট্রেলিয়ার কাছে যখন ধরাশায়ী হয়েছিল সৌরভের ভারত, রোহিতের বয়স তখন খুব কম নয়। সতেরো। সব মনে থাকা উচিত বর্তমান ভারত অধিনায়কের। মনে থাকা উচিত রাহুল শরদ দ্রাবিড়েরও। তিনি যে খেলেছিলেন সে দিন, শরিক ছিলেন সেই কালান্তক ফাইনাল হারের। যন্ত্রণার কম রক্তক্ষরণ, কম উপাখ‌্যান জুড়ে নেই যার সঙ্গে। আজও সামগ্রিক হাহাকার চলে দু’দশক পূর্বের সেই ফাইনালে টস জিতে সৌরভের ফিল্ডিং নেওয়া নিয়ে। নীল জার্সির সন্তপ্ত হৃদয় আজও বুঝতে চায় না যে, টস জিতে ফিল্ডিং নেওয়ার সিদ্ধান্ত সৌরভের একক ছিল না। সম্মিলিত ভাবে ভারতীয় টিম সেটাই ঠিক মনে করেছিল। ভেবেছিল জাহির খান-আশিস নেহরারা যেহেতু এত ভাল বোলিং করছেন, তাই টস জিতলে আগে বল করে নিলে সুবিধে হবে। যা নিয়ে পরে শচীন তেণ্ডুলকর বলেছেন। বইয়ে লিখেওছেন। লিটল মাস্টারের অভিমতে, ভারত জো’বার্গ ফাইনালে শেষে হেরেছিল অতিরিক্ত তেতে গিয়ে। সৌরভ আবার পরবর্তী সময়ে জনান্তিকে বলেছেন যে, অতিরিক্ত চার্জর্ড হয়ে যাওয়া-টাওয়া নয়। একবিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে পন্টিংয়ের অস্ট্রেলিয়া বিশ্বের বাকি টিমের চেয়ে দু’হাত এগিয়ে থাকলে, ভারতের চেয়ে এগিয়ে ছিল একহাত। কিন্তু বাস্তব হল, তারা এগিয়ে ছিল!
ইতিহাস নিয়ে অরণ‌্যপ্রবাদ হল, সে ফিরে-ফিরে আসে। শুক্রবারের আমেদাবাদে দঁাড়িয়ে মনে হচ্ছে, ক্রিকেট ইতিহাসও ফিরে আসে, পরিবর্তিত আঙ্গিকে, যুগ পরিবর্তনে। নইলে দেখুন না, অস্ট্রেলিয়া বাদে পৃথিবীর বাকি টিমের সঙ্গে ভারতের পার্থক‌্য পঁাচ হাত হলে, অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে রোহিতরা এগিয়ে নিদেনপক্ষে একহাত! এবং কুড়ি বছর পর অস্ট্রেলিয়া-যুদ্ধে যাতে কোনও ফঁাকফেঁাকর না থাকে, তার নিরন্তর প্রচেষ্টায় লেগে রয়েছেন দ্রাবিড়-রোহিত। এ দিন দেখা গেল, টিম টিমের মতো প্র‌্যাকটিস করছে। কিন্তু তঁারা দু’জন পড়ে রয়েছেন পিচের পাশে। বাইশ গজের দুনিয়ায়।
এ দিন দুপুর সাড়ে তিনটে নাগাদ প্র‌্যাকটিসে এসে সোজা আমেদাবাদ পিচের কাছে চলে যান রোহিত-দ্রাবিড়। কভার সরিয়ে হালহকিকত দেখতে থাকেন তাঁরা। আইসিসির প্রধান কিউরেটর অ‌্যান্ডি অ‌্যাটকিনসকে মাঠ চত্ত্বরে দেখা যায়নি এ দিন। বিকেলের দিকে শোনা গেল তিনি নাকি ভারত ছেড়ে দেশে ফিরে গিয়েছেন। ফাইনালের পিচ প্রস্তুতির যাবতীয় দায়দায়িত্ব সামলাবেন দুই বোর্ড কিউরেটর– আশিস ভৌমিক ও তাপস চট্টোপাধ্যায়। ওয়াংখেড়ের সেমিফাইনালের পিচ বদলে দেওয়ার অভিযোগ তুলে অ্যাটকিনসন এমনিতেই ভারতীয় বোর্ডের চক্ষুশূল হয়ে গিয়েছিলেন। তাই বোর্ডের তরফে কেউ কেউ তখন বলেও দেন, বিশ্বকাপ ফাইনালে আইসিসি-র প্রধান কিউরেটরকে থাকতেই হবে তেমন মাথার দিব্যি তো কেউ দেয়নি। অ্যাটকিনসনের কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে, তাই তিনি ফিরে গিয়েছেন। কিন্তু রাতের দিকে অ্যাটকিনসন-নাটক আরও ঘনীভূত হল। জানা গেল, তিনি নাকি দেশে ফিরে যাননি! বরং শনিবার সকালে উড়ে আসছেন আমেদাবাদ। পিচের দায়িত্ব নিতে। যা ফাইনালের পিচ নিয়ে বিতর্ককে আরও ধূমায়িত করল।
এদিনের মতো রোহিত-দ্রাবিড়দের সঙ্গে কথাবার্তার পর পিচে ‘হেভি রোলার’ চালানো শুরু হয়ে গেল। সঙ্গে বারবার পাশের পিচে বল হিট করে বাউন্স ‘চেক’ করে নেওয়া হল। আমেদাবাদের বাইশ গজ, কালো মাটির বাইশ গজ। পিচ সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞানগম্যি আছে এমন কেউ কেউ সন্ধেয় বললেন যে, কালো মাটির পিচে ভারি রোলার চালানোর অর্থ, রান আসবে কিন্তু প্রপাতের মতো আসবে না। বরং চকিত টার্ন হবে। বাউন্স থাকবে।
অতঃকিম? তা হলে কি রবিচন্দ্রন অশ্বিন? টিমের যে ছ’জন নেটে এসেছিলেন এদিন, তঁাদের মধ্যে কিন্তু ছিলেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। যিনি লম্বা সময় নেটে বোলিং ও ব‌্যাটিং, দু’টোই করে গেলেন। এই অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধেই বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের প্রথম ম‌্যাচে খেলেছিলেন অশ্বিন। সেই প্রথম, সেই শেষ। তা হলে? তিনি কি শেষ ম‌্যাচে নামবেন আবার? ফিরবেন ফাইনালে? ফিরলে স্মিথ-ওয়ার্নারদের কপালে যে অশেষ দুর্গতি লেখা থাকবে, না বললেও চলে। বেঙ্গালুরুতে স্পিন কিংবদন্তি এরাপল্লি প্রসন্নকে ফোনে ধরা হলে তিনি বললেন, “জানি না ভারত কী করবে? কিন্তু আমি চাই, ফাইনালটা অশ্বিন খেলুক। ওদের টিমে কয়েক জন বাঁ হাতি ব‌্যাটার আছে।”

হে অস্ট্রেলিয়া, তোমরা বুঝলে কিছু? জমি কিন্তু তৈরি হচ্ছে, বেশ মন দিয়েই তৈরি হচ্ছে। বদলার বারুদে ঠাসা প্রতিশোধের জমি! 

[আরও পড়ুন: ODI World Cup 2023: ‘পয়মন্ত’ নন, তবু সেই আম্পায়ারই ফাইনালে! খুশি নন ভারতীয় ফ্যানরা]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement