রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়: আজ লক্ষ্মীপুজোর ইডেনে, বিশ্বকাপ বোধনে নেদারল্যান্ডস-বাংলাদেশ (Netherlands-Bangladesh) খেলা দেখতে গিয়ে যদি এক বঙ্গসন্তানকে ডাচ পতাকা নিয়ে আবিষ্কার করেন, যদি দেখেন ভ্যান ডার মারউইদের ভাল পারফরম্যান্সে উল্লসিত হয়ে পড়তে, চমকাবেন না। অবশ্য চমকে গেলে দোষেরও কিছু নেই। বিশ্বকাপের ইডেনে আর্জেন রবেনদের দেশের পতাকাবাহক যদি হন এক বঙ্গসন্তান, যিনি মহাসপ্তমী থেকে পড়ে রয়েছেন শহরে, নেদারল্যান্ডস বনাম বাংলাদেশ ম্যাচ দেখার অভিলাষে, চমকানোই স্বাভাবিক! তার উপর তিনি যদি আবার প্রাক্তন সিএবি সদস্যের পুত্র হন, তা হলে তো আরও! এ জিনিস যে দেখা যায় না রোজ, কালেভদ্রে ঘটে। আর ঘটে যখন, তখন তাকে ব্যতিক্রমী বলে!
বছর পঁয়ত্রিশের বঙ্গসন্তানের নাম– শাক্যব্রত দত্ত। নিবাস– গত ছ’বছর ধরে আমস্টারডাম। পিতার নাম–শিবব্রত দত্ত। সিএবি-র প্রাক্তন সদস্য যিনি।
শুক্রবারের ইডেনে শিবব্রতকে দেখা গেল, প্রবল ব্যস্তসমস্ত হয়ে ঘুরছেন। কী ব্যাপার? না, ছেলের চাহিদা অনুযায়ী নেদারল্যান্ডসের পতাকার বন্দোবস্ত করা গেলেও জার্সির যায়নি। ময়দান মার্কেটও ডাহা ফেল মেরেছে! পরে শাক্যব্রতকে ফোন করায় তিনি বললেন, ‘‘ভেবেছিলাম, জার্সি আর পতাকা নিয়ে সমর্থন করতে যাব নেদারল্যান্ডসকে। কিন্তু জার্সি পাওয়া গেল না। পুরনো একটা অরেঞ্জ টি শার্ট পরেই যাব।’’
সে যান। কারণ, শাক্যব্রত যে ভাবেই আজ যান না কেন ইডেনে, তা বড় অভিনব হবে। কলকাতায় জন্মগ্রহণ করা এক বাঙালি, নেদারল্যান্ডসকে আপন করে নিয়ে, তাদের ক্রিকেটের টানে পড়ে রয়েছেন কলকাতায়, সচরাচর হয় কি?
‘‘আসলে নেদারল্যান্ডসে থাকতে থাকতে ওই দেশ, ওই দেশের খেলাধুলোকে ভালবেসে ফেলেছি আমি। ফ্র্যাঙ্কি দে জংকে অসম্ভব ভাল লাগে। আবার ক্রিকেট টিমেরও খোঁজখবর নিয়মিত রাখি।’’ তা, বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়ারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং গ্রুপ পর্বের ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানোর পর ডাচ-ভূমিতে ক্রিকেট নিয়ে আগ্রহ বেড়েছে নিশ্চয়ই? ‘‘নাহ্। সে ভাবে নয়,’’ সংক্ষেপে সারেন শাক্যব্রত। দ্রুতই তাঁকে আবার উৎফুল্ল শোনায় যখন বলেন, ‘‘তবে বিশ্বকাপে আমরা ভাল কিছু করলে, আরও কয়েকটা ম্যাচ জিতলে বাড়বে আগ্রহ। নেদারল্যান্ডসে সমস্ত ক্লাব-টাব মিলিয়ে পাঁচ হাজার রেজস্টার্ড ক্রিকেটার মাত্র। ভারতীয় ও পাকিস্তানি যাঁরা ও দেশে কর্মসূত্রে যান, তাঁরাই ডাচ ক্রিকেটে জোয়ার আনার নেপথ্যে। অনেকে তো খেলাও শুরু করে দেন গিয়ে।’’
কিন্তু ইডেনে আসছেন নাকি বঙ্গসন্তানের আরও বন্ধুবান্ধব? সমবেত ভাবে তাঁরাও গলা ফাটাবেন নাকি আজ স্কট এডওয়ার্ডসদের সমর্থনে? শাক্যব্রত এবার বলেন, ‘‘না, বন্ধুরা আসছে না। কিন্তু তাতে কী? আমি তো আছি। আপডেট তো আমিই দিতে থাকব।’’
যা শোনামাত্র দূরত্ব কমতে থাকে আমস্টারডাম আর কলকাতার, আবছা ভাবে, আচম্বিতে। পৃথিবীর ক’টা খেলা পারে এমন অত্যাশ্চর্য আত্মার বন্ধন সৃষ্টি করতে, ভিটেমাটির দলিলকে অগ্রাহ্য করে? জানা নেই, তবে ক্রিকেট পারে। আর পারে বলেই সে রাজার খেলা!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.