বোরিয়া মজুমদার: এমসিজি-তে কোহলি-ক্ল্যাসিকের ঘোর তখনও কাটেনি। ঘুমজড়ানো চোখ আর ক্লান্তিকে উপেক্ষা করে বেরিয়ে পড়েছিলাম এক বিশেষ উদ্দেশে, এক অমোঘ টানে। যার নাম নিল হার্ভে (Neil Harvey)।
হ্যাঁ। রবার্ট নিল হার্ভে। ডন ব্র্যাডম্যানের (Don Bradman) সেই ১৯৪৮-এর অপরাজেয় দলের জীবিত শেষ সদস্য। শুধু তাই নয়, ব্র্যাডম্যানের সমসাময়িক ও পরবর্তী সময়ের চর্চিত অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান, যাঁকে খোদ ব্র্যাডম্যান চিহ্নিত করেছিলেন তাঁর সমতূল্য প্রতিভা হিসেবে। এই অক্টোবরেই হার্ভে পা দিয়েছেন ৯৪-এ। বয়সের সঙ্গে শরীরে থাবা বসিয়েছে বার্ধক্য। বিশেষ করে দুই হাঁটু। পারতপক্ষে কারও সঙ্গে দেখা করেন না। ফলে এক বন্ধু মারফত যখন সেই কিংবদন্তির সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ এল, মনে হচ্ছিল দীপাবলির এরচেয়ে বড় উপহার আর কী হতে পারে! কাকতালীয় ব্যাপার, সেই সাক্ষাৎ পর্ব ঘটল মেলবোর্নে বিরাট কোহলির অতিমানবীয় ইনিংসটার ঠিক ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে।
আর শুরুতেই চমক। প্রথমেই সৌজন্যবশত অশীতিপর হার্ভেকে শুভেচ্ছা জানালাম দিওয়ালির। সেই উৎসব আমাদের কাছে কী, সেটা বোঝাতেই খুশির ঝলক তাঁর চোখেমুখে। মুচকি হেসে বললেন, ‘‘গত রাতে বিরাট কোহলি (Virat Kohli) যে ইনিংসটা খেলল, তারপর নিশ্চয় এই দীপাবলি তোমার কাছে আরও স্পেশাল হবে। কী অসাধারণ প্লেয়ার! যে ভঙ্গিমায় এই ইয়ংম্যান একাই পাকিস্তানকে হারাল, সেটা সত্যি স্পেশাল। আমি ম্যাচটা দেখেছি। ভাল লেগেছে বিরাটের ব্যাটিং। বিশেষ করে ম্যাচের শেষদিকে ওর ওই ছয় দু’টো।’’
শুনছিলাম, আর অবাক হয়ে যাচ্ছিলাম। বিরাট-স্তুতি কে করছেন? না, নিল হার্ভে। ক্রিকেটের সবচেয়ে সনাতনী ঘরানা, টেস্ট ক্রিকেটের কৌলিন্যের সঙ্গে সমোচ্চারিত হয় যে নামগুলো, সেই ব্র্যা়ডম্যান-গোত্রে বিরাজমান হার্ভে প্রশংসায় ভরিয়ে দিচ্ছেন বিরাটকে। চোখের সামনে দুই ক্রিকেটীয় যুগের মেলবন্ধন ছাড়া একে আর কী বলব! আরও বেশি করে যেটা মনে হচ্ছিল সেটা হল, কোহলির ওই ম্যাচ জেতানো ইনিংস ও অতিমানবীয় ইনিংস আসলে জীবনের সায়াহ্নে পৌঁছে যাওয়া হার্ভের বেঁচে থাকার শেষ রসদ। রবিবার মেলবোর্নে ব্যাট হাতে শুধু ভারতকে জেতানো নয়, বিরাট যেন হার্ভের জীবনের শেষ প্রদীপটাও জ্বালিয়ে দিয়েছেন।
কেন কোহলি স্পেশাল? প্রশ্নটার অপেক্ষাই যেন করছিলেন ’৪৮-এর অস্ট্রেলিয়ার সেই ‘ইনভিন্সিবল’ টিমের শেষ জীবিত সদস্য। স্বপ্রতিভ ভঙ্গিমায় বললেন, ‘‘দুই ধরনের ক্রিকেটার আছে। গুড প্লেয়ার আর গ্রেট প্লেয়ার। পার্থক্যটা খুব সূক্ষ্ম। কিন্তু সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বিরাট কোহলি ওই গ্রেটদের পর্যায়ে। পার্থক্যটা এবার বুঝে নিন।’’ শুধু বিরাটের ব্যাটিং দেখাই নয়, সকালে কোহলিকে নিয়ে প্রতিবেদনও খুঁটিয়ে পড়েছেন। বলেন, ‘‘ভাল লেখনীর গুণে এমন ইনিংসের মাহাত্ম্য আরও বেড়ে যায়। এমন মানের ক্রিকেটার থাকাটা ক্রিকেটের জন্য দারুণ ব্যাপার।’’
লক্ষ্য করছিলাম, কথা বলার সময়ে যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যাচ্ছে হার্ভের মুখ। শারীরিকভাবে কষ্ট পাচ্ছেন। হাঁটাচলাও প্রায় বন্ধ হতে বসেছে। একসময় তো বলেও বসলেন, এভাবে বেঁচে থাকা যায় না। বিরাটের ব্যাটিং যেন হার্ভের কাছে সেই যন্ত্রণা উপশমের একমাত্র অব্যর্থ দাওয়াই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.