স্টাফ রিপোর্টার: দু’টো রাত। একটা গোটা দুপুর। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে মহেন্দ্র সিং ধোনির (Mahendra Singh Dhoni) বিদায়ের পর এতগুলো ঘণ্টা, এতগুলো মিনিট-সেকেন্ড কেটে গেল। কিন্তু তাঁকে ঘিরে উথাল-পাথাল আবেগ, ঘোর ঘোর লাগা নস্ট্যালজিয়া– কোথায় থামছে সে সব? কেউ বলছেন, ধোনিকে পাশে পেলে আমি আজও যুদ্ধে যেতে পারি। কেউ বলছেন, ধোনি তুমি এমন অনাড়ম্বরে, নিঃশব্দে চলে গেলে কেন? তুমি তো পারতে বোর্ডকে বলতে যে, একটা বিদায়ী ম্যাচ দিতে। তুমি তো পারতে, মাঠে আর একবার নেমে চিরতরে সরে যেতে।
আর এসবের মধ্যেই ধোনির অবসর ঘিরে সবচেয়ে বড় রোম্যান্টিক কাহিনিটার জন্ম দিলেন এমন একজন মানুষ, যিনি ধোনির বন্ধু নন। এমনকী এদেশের বাসিন্দাই নন! পাকিস্তানি (Pakistan) এক সমর্থক। বিখ্যাত ‘বসির চাচা’। যাঁকে ভারত–পাকিস্তান ম্যাচে গ্যালারিতে সব সময় দেখা যায়, যিনি পাকিস্তানি হয়েও ধোনির অসম্ভব ভক্ত। সেই বসির চাচা এ দিন বলে দিয়েছেন, আর নয়। এবার তিনিও অবসরে! “কী হবে আর ম্যাচ দেখতে গিয়ে? ধোনিই নেই। আমিও তাই আজ থেকে আর তিনিও নেই!” তবে এখন অনেকে আবার মনে করাচ্ছেন, পুরানো সেই দিনের কথা। তুলে আনছেন পুরনো সব সম্পর্কের কথা, তাঁদের স্মৃতির কথা। এই তো বছর দেড়েক আগে প্রাক্তন বিহার অধিনায়ক আদিল হোসেনের বাড়িতে নৈশভোজের নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে গিয়েছিলেন ধোনি। ধোনিকে দেখামাত্র আদিল উত্তেজিত হয়ে পড়েন। দু’বারের বিশ্বজয়ী অধিনায়ককে নামতে হয় উত্তেজনা প্রশমনে। ধোনি বলেন, “আরে তুমি এত উত্তেজিত হচ্ছ কেন? আমি কি তোমার অতিথি নাকি? এটা যেমন তোমার বাড়ি, তেমন আমারও বাড়ি!” সব আজ মনে পড়ছে, সব।
সবচেয়ে বড় হল, মহেন্দ্র সিং ধোনি নামক এ হেন বানভাসি আবেগের স্রোতস্বিনী স্রোতের সামনে বাঁধ দেওয়ার কোনও লোক নেই। যাবতীয় সীমানা খড়কুটোর মতো ধুয়েমুছে যাচ্ছে। ওয়াঘার এ পার। ওয়াঘার ও পার। দেশ। বিদেশ। রাজনীতি। সিনেমা। খেলার অন্য জগত। সব কিছু, সবাই। গুরু গ্যারি যেমন এ দিন টুইট করেছেন তাঁর বিশ্বজয়ের অধিনায়ককে নিয়ে। কার্স্টেন লিখেছেন, ‘এমএস, তোমার সঙ্গে কাজ করাটা বিরাট গর্বের। তোমাকে পাশ পেলে আমি আজও যুদ্ধে যেতে পারি।’ স্বাভাবিক, খুব স্বাভাবিক। কার্স্টেন-ধোনির রসায়ন লোকের তো আর অজানা নয়। ওই রসায়ন না থাকলে আঠাশ বছর পর ভারত বিশ্বকাপটাই (World Cup) জিতত না ২০১১ সালে। ওয়াঘার ও পারও একই রকম আবেগ আক্রান্ত, একই রকম শোকার্ত। নিজের ইউটিউব ভিডিওতে শোয়েব আখতার (Shoaib Akhter) যেমন বলেছেন, ‘ধোনি তুখোড় লোক। এ ভাবে নিঃশব্দে চলে যাওয়া একমাত্র ওর পক্ষেই সম্ভব। কিন্তু ভারতীয় বোর্ডকে অনুরোধ করছি, ধোনিকে একটা ফেয়ারওয়েল ম্যাচ দিতে। এত বড় একজন কিংবদন্তির বিদায় এত নিঃশব্দে হবে কেন?” প্রাক্তন পাকিস্তান অধিনায়ক ইনজামাম-উল-হক (Inzamam-UL-Haq), তিনিও বলে দিয়েছেন, “ধোনির এত বড় ফ্যানবেস। এত লোক ওকে পাগলের মতো ভালবাসে। সেই লোকটা কেন এমন চুপচাপ চলে যাবে? ধোনির উচিত ছিল, মাঠ থেকে অবসর নেওয়া। বাড়ি বসে নয়।”
কত গল্প তো নানা দিক থেকে পাগলপারা হয়ে ছুটে আসছে, আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরছে সোনার সব স্মৃতি নিয়ে। তরুণ বয়স থেকেই যে তিনি কী রকম মাস্টার স্ট্র্যাটেজিস্ট ছিলেন, সেই কাহিনিও শোনা যায়। কোচবিহার ট্রফিতে একবার সেমিফাইনালে দিল্লির বিরুদ্ধে একবার ম্যাচ পড়েছিল বিহারের। দিল্লি টিমে তখন গৌতম গম্ভীর (Goutam Gambhir)। গম্ভীরের পা তখন বারবার অ্যাক্রস চলে যেত। তরুণ ধোনি সর্বপ্রথম খেয়াল করেন। বোলারকে বলে দেন, কোথায় বলটা রাখতে হবে। এবং গম্ভীর আউট! সেই গম্ভীর এ দিন বাজি ধরে বলেছেন, ধোনির তিনটে আইসিসি ট্রফি জেতার রেকর্ড চিরকাল অক্ষুণ্ণ থেকে যাবে। কোনও ভারত অধিনায়ক কখনও ভাঙতে পারবে না!
কিন্তু ধোনির অবসর ঘিরে সবচেয়ে বড় রোম্যান্টিক কাহিনিটার জন্ম দিলেন হয়ত সেই বসির চাচা। ভাবা যায়, একজনের অবসর নিয়েছেন বলে আরও দু’জন আবেগে সেটা নিয়ে নিলেন! রায়না, বসির চাচা। কেউ নিজের কেরিয়ার ভুলে, কেউ দেশজ সীমানার গণ্ডি ভুলে। দেখলে শুনলে মনে হয়, মহেন্দ্র সিং ধোনিকে আর নিছক নেতা ডাকার উপায়ই নেই! আগে আরও দু’টো অক্ষর বসবে।
জননেতা!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.