স্টাফ রিপোর্টার: কলকাতা ময়দান অনেকটাই ফুটবল কেন্দ্রীক। মোহনবাগান ক্লাবও তার ব্যতিক্রম নয়। সবুজ-মেরুনের প্রধান পরিচয় ফুটবল ক্লাব হিসাবেই। সেজন্যই গোষ্ঠ পাল, চুনী গোস্বামীর ফুটবলার পরিচয়ে ঢাকা পড়ে যায় তাঁদের ক্রিকেটার সত্ত্বা। এরমধ্যে চুনী গোস্বামী তো আবার রনজি ট্রফির ফাইনালও খেলেছিলেন বাংলার হয়ে। সে তথ্য একেবারে অসূর্যম্পশ্যা না হলেও কিছুটা ব্যাকফুটেই থাকে। যেমন আড়ালে থেকে যায় গোষ্ঠ পালের নেতৃত্বে মোহনবাগান ক্রিকেটারদের ধুতি পরে ক্রিকেট খেলতে চাওয়ার বৈপ্লবিক দাবির কথা।
বুধবার দুপুরে সবুজ-মেরুন তাঁবুতে উদযাপন করা হল সেই ক্রিকেটকে। বুধবার ছিল কিংবদন্তি চুনি গোস্বামীর জন্মদিন, যাঁকে শুধু ফুটবলার নয়, সর্বকালের অন্যতম সেরা বাঙালি ক্রীড়াবিদ হিসাবে গণ্য করা হয়। আর তাই তাঁর জন্মদিনটাই ক্রিকেট দিবস হিসাবে উদযাপনের জন্য বেছে নিয়েছিল মোহনবাগান। এদিন যে উদযাপনের মধ্যমণি হিসাবে থাকলেন ’৮৩-র বিশ্বজয়ী ভারতীয় ক্রিকেট দলের উইকেটকিপার-ব্যাটার সৈয়দ কিরমানি। তিনি সাড়ে তিনটের দিকে ক্লাবে এসে প্রথমেই গেলেন মাঠে। র্যাম্পার্টের দিকে কোনায় থাকা নতুন ক্রিকেট পরিকাঠামোর উদ্বোধন করলেন ফিতে কেটে। আর একজন আদর্শ টিমম্যানের মতো ফিতে কাটার আগে পাশে থাকা সকলকেই ডেকে হাত ধরতে বললেন কিরমানি। তারপর নেটে ঢুকে দেখালেন একজন আদর্শ উইকেটকিপারের ‘মুভমেন্ট’ ঠিক কেমন হওয়া উচিত উইকেটের পিছনে। ফেরার পথে গ্যালারির নিচে থাকা অমর একাদশের মূর্তিতে ফুল দিলেন কিরমানি। তারপর লনে এসে মঞ্চের পাশে থাকা চুনি গোস্বামীর ছবিতে শ্রদ্ধা জানালেন।
কিংবদন্তি ফুটবলারকে নিয়ে কিরমানির স্মৃতিচারণা, “চুনি গোস্বামীর কথা আমি খেলা শুরুর সময় থেকেই শুনেছি। তিনি আমার হিরো। ওঁর বিরুদ্ধে খেলার সৌভাগ্য আমার হয়নি। তবে বেশ কয়েকবার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ওঁর সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়েছে।” পরে গৌতম ভট্টাচার্যের সঙ্গে টক-শোয়ে নিজের কেরিয়ার এবং টিম ইন্ডিয়ার বিভিন্ন অজানা কথাও তুলে ধরলেন তিনি। একদিকে যেমন জানালেন, ‘৮৩’ সিনেমায় জিম্বাবোয়ে ম্যাচে দেখানো অধিনায়ক কপিল দেবের স্নান করতে যাওয়ার ঘটনা আসলে তাঁর সঙ্গে হয়েছিল। আবার কীভাবে অস্ট্রেলিয়া সফরের মাঝে তাঁর কেরিয়ার শেষ করার চক্রান্ত হয়েছিল, জানালেন সেকথাও। অনুষ্ঠানে কিরমানির হাতে ক্লাবের সদস্যপদ তুলে দেওয়া হয়। কিরমানি আবার নিজের লেখা আত্মজীবনীর কপি তুলে দেন ক্লাব সচিবের হাতে।
এদিন ক্রিকেট দিবস উপলক্ষে ক্লাবের বর্তমান ক্রিকেট দল বা মোহনবাগান থেকে ভারতীয় দলে সুযোগ পাওয়া অনেকে না এলেও রীতিমতো চাঁদের হাট বসেছিল তাঁবুতে। মলয় ঘটক, অরূপ রায়, কুণাল ঘোষ, অসিত চট্টোপাধ্যায়, সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়, মানস ভট্টাচার্য, স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়, তন্ময় চট্টোপাধ্যায়, শুভাশিস পাল, পিন্টু বিশ্বাসের মতো কর্মসমিতির পদাধিকারীরা সংবর্ধনা দিলেন ক্লাবের প্রাক্তন ক্রিকেটারদের। যাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দেব মুখোপাধ্যায়, জলি সরকার, পলাশ নন্দী, সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রণব নন্দী, প্রণব রায়, সৌরভ বসু, সফি আহমেদ, গৌতম সোম জুনিয়র, মলয় বন্দ্যোপাধ্যায়, দেবু মিত্র, শরদিন্দু মুখোপাধ্যায়, বরুণ বর্মন, সুব্রত পোড়েল, অমিতাভ রায়, উদয়ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, স্বপন দে, সাগরময় সেনশর্মা, কল্যাণ ঢাল, মদন ঘোষ, ফারাসাতুল্লা, অজয় ভার্মা, আবদুল মোনায়েমরা। শুভময় দাস, লক্ষ্মীরতণ শুক্লা, মনোজ তিওয়ারি, ঋদ্ধিমান সাহা, অনুষ্টুপ মজুমদারদের নাম ডাকা হলেও তাঁরা উপস্থিত ছিলেন না। যেমন ছিলেন না ক্লাবের বর্তমান সিনিয়র দলের বহু ক্রিকেটারই। বিশেষ সম্মান দেওয়া হল একদা ক্রিকেট সচিব দীপঙ্কর হাজরাকে। এই বিভাগে আরও দুই কর্তা চিত্রক মিত্র ও রবি টোডিকে সম্মানিত করার কথা থাকলেও ব্যক্তিগত কারণে তাঁরা অনুষ্ঠানে আসতে পারেননি। শহরের বাইরে থাকায় আসেননি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও।
অনুষ্ঠানে ছিলেন আরও একজন। চুনি গোস্বামীর অর্ধাঙ্গিনী বাসন্তী গোস্বামী। যিনি বললেন, “আজ মোহনবাগান চুনিকে যেভাবে সম্মান জানাল, তাতে আমি আপ্লুত।” সত্যিই, ক্রিকেটারদের নিয়ে এমন উদযাপন আগে দেখেনি ময়দান।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.