৭৭-এ থামলেও নিজের কীর্তি রেখে গেলেন স্পিন লেজেন্ড।
সব্যসাচী বাগচী: মহানবমী বলে কথা। আর মাত্র কয়েক ঘন্টা। মা দুর্গা এবারের মতো কৈলাসে চলে যাবেন। বঙ্গ সমাজের মন-মেজাজ বেশ খারাপ। অবশ্য বাঙালি ও গোটা দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের মন খারাপের আরও একটি কারণ আছে। কারণ বিষাণ সিং বেদী (Bishan Singh Bedi)। বর্ণময় চরিত্র বলতে যা বোঝায় সেটা ছিলেন ভারতের (India) প্রাক্তন অধিনায়ক ও স্পিন লেজেন্ড। সঙ্গে তিনি ছিলেন বিতর্কিত। মুথাইয়া মুরলীধরনকে (Muttiah Muralitharan) ‘চাকার’ বলে কটাক্ষ করার পাশাপাশি হরভজন সিংয়ের (Harbhajan Singh) সমালোচনা করেছিলেন প্রবাদপ্রতিম বাঁহাতি স্পিনার। যিনি বিপক্ষের ব্যাটারদের ফ্লাইট দেওয়ার জন্যও বিখ্যাত ছিলেন।
এহেন বেদী থামলেন ৭৭ রানে। শেষ টেস্ট খেলেছিলেন সেই ১৯৭৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। এর পর ১৯৯০ সালে ভারতীয় দলের কোচ হিসাবেও কাজ করেছেন। তবে ক্রিকেটকে বিদায় জানালেও, তিনি কিন্তু সবসময় প্রচারের আলোতেই ছিলেন। এহেন বিষাণ সিং বেদীর প্রয়াণে স্বভাবতই শোকস্তব্ধ গোটা দেশ। প্রিয় অধিনায়ক ও কিংবদন্তি স্পিনারের জীবনের একাধিক আনটোল্ড স্টোরি তুলে ধরলেন গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথ, মোহিন্দর অমরনাথ (Mohinder Amarnath), সৈয়দ কিরমানি (Syed Kirmai), দিলীপ বেঙ্গসরকররা (Dilip Vengsarakar)। সংবাদ প্রতিদিন.ইন-এর পাঠকদের জন্য সেগুলো তুলে ধরা হল।
গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথ: এত বছর পর স্বীকার করতে দ্বিধা নেই। বিষাণ সিং বেদীর মতো স্পষ্ট বক্তা আমি জীবনে দেখিনি। স্থান, কাল না বুঝে অনেক কথা বলে ফেলতেন। সেইজন্য ওঁকে অনেকেই ভুল বুঝতেন। তবে এতে বিষাণ কিন্তু নিজেকে বদলে ফেলেননি। এক্ষেত্রে একটা ঘটনার উদাহরণ দিতে পারি। ১৯৭৬ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ পরের টেস্টে চার পেসারকে মাঠে নামিয়েছিল। তাদের বোলিংয়ে আমাদের কয়েকজন ব্যাটার আহত হন। বেদী ৩০৬ রানে ইনিংস ডিক্লেয়ার দিয়ে দেন। পরের ইনিংসেও একই ব্যাপার। ক্যারিবিয়ান পেসারেরা একের পর এক বাউন্সার দিতে থাকেন। তখনও আমাদের কয়েকজন চোট পান। মাত্র ২টি উইকেট হারানোর পর বেদী ভারতের দ্বিতীয় ইনিংস ডিক্লেয়ার করে দেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের কৌশল মেনে নিতে পারেননি তিনি। বেদীর ওই সিদ্ধান্তে সেই সময় ভারতীয় ক্রিকেটে ঝড় উঠে গিয়েছিল।
মোহিন্দর অমরনাথ: আমার চোখে দেখা প্রথম কমপ্লিট ক্রিকেটার। ভারতীয় দল ছাড়াও আমরা দিল্লি ও উত্তরাঞ্চলের হয়ে অনেক বছর ধরে খেলেছি। সেই সব স্মৃতি মনের মধ্যে ভিড় করে আসছে। বেদী ৭৭ বছর বয়সে থামলেও, মনেপ্রাণে একজন আধুনিক মনের মানুষ ছিলেন। আর একটা ব্যাপারে আমাদের মধ্যে মিল ছিল। কেরিয়ারে বহুবার আমরা বিতর্কে জড়িয়েছি। তবে সেগুলো নিয়ে এমন দিন আলোচনা করতে চাই না। বরং সেই ১৯৭৭-৭৮ সালের অস্ট্রেলিয়া সফরের কথা বলাই ভালো। সেই সফরে গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথ, দিলীপ বেঙ্গসরকর ও আমার উপরেই মূলত মিডল অর্ডার টিকে ছিল। দলের অনেকেই চাইছিল আমি যেন বিশ্বনাথ ও বেঙ্গসরকরের পরে ব্যাট করতে নামি। তবে বিষাণ ভাই সবার সঙ্গে প্রায় ঝগড়া করে তিন নম্বরে ব্যাট করতে পাঠিয়েছিল। বাকিটা ইতিহাস। সুনীল গাভাসকর সেই সিরিজে ৪৫০ রান করেছিল। ৫ টেস্টে বিশ্বনাথের ব্যাট থেকে এসেছিল ৪৭৩ রান। তবে আমিও পিছিয়ে ছিলাম না। ১টি শতরান ও ৩টি অর্ধ শতরানের সৌজন্যে করেছিলাম ৪৪৫ রান। বিষাণ সেদিন পাশে না থাকলে এতটা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে জেফ থমসন-ব্রুস ইয়ার্ডলিদের মোকাবিলা করতে পারতাম না।
দিলীপ বেঙ্গসরকর: আমার মতে বিষাণকে শুধু বিতর্কিত মানুষ বললে ভুল বলা হবে। ওর মধ্যে প্রচুর মাত্রায় হিউমার লুকিয়ে ছিল। সঙ্গে ছিল বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার সাহস। দুটি ঘটনার কথা বলতে পারি। ১৯৯৭-১৯৮৭ মরশুমের কথা। ভারত সফরে এসে শচীন তেন্ডুলকরকে বাগে আনতে চেয়েছিল শেন ওয়ার্ন। সেইজন্য বিষাণের সাহায্য চেয়েছিল ওয়ার্ন। অন্য কোনও ভারতের প্রাক্তন স্পিনার হলে সেই ঝুঁকি হয়তো নিতে চাইত না। তবে বিষাণ নিয়েছিল। নিজের সাধ্যমতো শেন ওয়ার্নকে সাহায্য করেছিল। এর পর ২০০১ সালের ভারতের মাটিতে এসেছিল অস্ট্রেলিয়া। হরভজনের বিরুদ্ধে কীভাবে খেলা যায়, সেইজন্য বিষাণের কাছে চলে গিয়েছিল ম্যাথু হেডেন। আমার অধিনায়ক ওকেও সাহায্য করেছিল।
সৈয়দ কিরমানি: সানির অধিনায়কত্বে আমার টেস্ট অভিষেক ঘটলেও, একদিনের ক্রিকেটে বিষাণ ছিলেন আমার প্রথম অধিনায়ক। আমার মতে বিষাণ এখনও সেরা বাঁহাতি স্পিনার। আমি সৌভাগ্যবান যে বিষাণ, এরাপল্লী প্রসন্ন, ভাগবত চন্দ্রশেখর ও ভেঙ্কটরাঘবনের বলে কিপিং করতে পেরেছি। বলের প্রতি ওঁর নিয়ন্ত্রণ ছিল অসামান্য। একটানা অনেক ক্ষণ বল করে যাওয়ার ক্ষমতা ছিল তাঁর। সারা দিন বল করলেও ক্লান্ত হতেন না। এমন অধিনায়কের চলে যাওয়া সত্যি খুব দুঃখের।
এমন একজন কিংবদন্তি চলে গেলেন। অনেকেই শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। আগামী কয়েক ঘন্টা আরও অনেকেই আনটোল্ড স্টোরি শেয়ার করবেন। তুলে ধরবেন সদ্য প্রয়াত ডাকাবুকোর জীবনের বিভিন্ন দিক। মানুষের শরীর পুড়ে যায়। থেকে যায় কীর্তি। আর সেই ব্যক্তির নাম বিষাণ সিং বেদী হলে চর্চা তো হবেই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.