রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়, চেন্নাই: আইপিএল (IPL) ফাইনাল জয়ের পর কেটে গিয়েছে মোটামুটি চার প্রহর। তখনও মিচেল স্টার্কের (Mitchell Starc) মায়াবী বোলিং নিয়ে মুগ্ধতা কাটেনি চন্দ্রকান্ত পণ্ডিতের (Chandrakant Pandit)। বিশেষত অজি পেসার যে ডেলিভারিটায় ফিরিয়ে দিয়েছিলেন অভিষেক শর্মাকে। একই সঙ্গে চিপকের মেগা-ফাইনালে প্রশস্ত করে দিয়েছিলেন কলকাতা নাইট রাইডার্সের (KKR) জয়ের পথটা।
রবিবার রাতে যে ডেলিভারিতে অভিষেককে ফিরিয়েছেন স্টার্ক, বলা হচ্ছে আইপিএলের সেরা। কেকেআর হেডস্যরও বিশ্বাস করেন সেটা। ‘পণ্ডিতমশাই’ বলছিলেন, “আমাদের মনে রাখতে হবে, ভারতীয় উইকেটে এমন বোলিং করেছে স্টার্ক। ইংল্যান্ডের পিচে নয়। আগের ম্যাচে হেডকে যেভাবে ফেরাল, সেই ডেলিভারিটার কথাও মনে রাখতে হবে। ও যে বলটা দু’দিকেই মুভ করাতে পারে, সেটা বুঝিয়ে দিয়েছে। ঠিক যেন তরুণ বয়সের ওয়াসিম আক্রম। দুর্দান্ত, দুর্দান্ত।” এবারের আইপিএলে সবচেয়ে বেশি কটাক্ষের শিকার হওয়া ক্রিকেটারদের তালিকার প্রথম দিকেই থাকবে স্টার্কের নাম। তাঁর পৌনে পঁচিশ কোটি টাকার ‘প্রাইস ট্যাগ’-এর জন্য। চন্দ্রকান্ত মনে করছেন, যোগ্য হিসাবেই এই দাম পেয়েছেন স্টার্ক। “স্টার্ক বিশ্বমানের বোলার। ওর আর কিছু প্রমাণ করার নেই। পরিস্থিতি বুঝতে ও একটু সময় নিয়েছে। তারপর বুঝিয়েছে, কেন ওকে প্রায় ২৫ কোটি দিয়ে কেনা হয়েছে,” বলছিলেন কেকেআর কোচ, “এমন তো নয় যে একা কেকেআর ওকে কিনতে চেয়েছে। অন্য ফ্র্যাঞ্চাইজিরাও দৌড়ে ছিল। তাই দামটা প্রায় ২৫ কোটি হয়েছে। দক্ষতার জন্যই স্টার্কের এত দাম উঠেছে। ফলে সেটা নিয়ে কথা বলার মানে নেই। নকআউটের দু’টো ম্যাচেই সেরা হয়ে ও প্রমাণ করেছে, এই দাম ওর প্রাপ্য।”
অবশ্য শুধু স্টার্ক নয়, গোটা নাইট শিবির নিয়েই একইরকম মুগ্ধ চন্দ্রকান্ত। অকপটে বললেন, “দলের জয়ে সবাই অবদান রেখেছে। সুনীল ভালো খেলেছে। সল্টও তাই। ওর বিষয়টি আমাদের কাছে অপ্রত্যাশিত ছিল। পরের দিকে বাকিরাও ভালো খেলে। গুরবাজও সুযোগ পেয়ে অবদান রেখেছে। রিঙ্কু-রাসেলকে সেভাবে সুযোগই দেওয়া যায়নি। বোলিংয়ে রানা-বৈভব ভালো করেছে। স্টার্ক পরের দিকে বুঝিয়েছে, ও কেমন বোলার। সুনীল তো ব্যাটের পাশাপাশি বলেও দুর্দান্ত।” গত বছরের ব্যর্থতা কোন মন্ত্রে কাটাল কেকেআর? চন্দ্রকান্ত মনে করছেন না, শেষ সংস্করণে তাঁর দল খারাপ খেলেছে। বলছিলেন, “গত বছর শ্রেয়সকে পাইনি। আরও কয়েকজনের চোট ছিল। তাছাড়া কিছু অল্প ব্যবধানে হেরেছি। নয়তো প্লে অফে চলে যেতাম। সেখানে এবার কয়েকটা ক্লোজ ম্যাচ জিতেছি। ১ রানে। ৪ রানে। সঙ্গে বিশেষ চোট সমস্যা পোহাতে হয়নি। দলে ঠিকঠাক পরিবর্ত ছিল। এগুলোই তফাত গড়ে দেয়।” ক্যাপ্টেন শ্রেয়সকে নিয়েও বাড়তি উচ্ছ্বাস আছে নাইট কোচের। বলেই দিলেন, ভারতীয় অধিনায়কদের মধ্যে নাইট সেনাপতিই রোলমডেল। মেন্টর গৌতম গম্ভীরের সঙ্গে নিজের রসায়ন নিয়ে পণ্ডিত-উবাচ, “গৌতমের অনেক অভিজ্ঞতা। আইপিএল আর আন্তর্জাতিক মঞ্চে বহু ম্যাচ খেলেছে। ট্রফিও জিতেছে। সেই অভিজ্ঞতা দলের কাজে লেগেছে। আমাদের মধ্যে বোঝাপড়াও ভালো ছিল।”
এবারের আইপিএলে একটা বিশেষ দৃশ্য নজর কেড়েছে বারবার। তা হল, কেকেআর-এর সঙ্গে মালিক শাহরুখ খানের একাত্ম হয়ে যাওয়া। ভালো সময়ে তো বটেই, দলের খারাপ সময়ে ছুটে গিয়েছেন ক্রিকেটারদের কাছে। ড্রেসিংরুমে সান্ত্বনা দিয়েছেন, ডেকে নিয়েছেন খাওয়ার টেবলে। চন্দ্রকান্তও বলছিলেন, “শাহরুখ আমাদের কাছে শুধু মালিক নন। পরিবারের অংশ। আমাদের সঙ্গে যেভাবে মিশে গিয়েছেন, যেভাবে আমাদের সময় দিয়েছেন। গত দু’বছরে আমি কোনও চাপের মুখে পড়িনি মালিকপক্ষের। মনে করতে পারছি না মালিকরা কেউ দল পরিচালনায় নাক গলিয়েছেন বলে। শাহরুখ সবসময় দলকে উৎসাহ দেন। জয় মেহতা, জুহি ম্যাম বা ওঁদের পরিবারও তাই।”
সত্যিই তো। পরিবার ছাড়া এমন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই আর কারাই বা করে?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.