বোরিয়া মজুমদার: লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিকে (Los Angeles) ক্রিকেটের অন্তর্ভুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি নয়, এই মুহূর্তে প্রবল। যত দিন যাচ্ছে, যত সময় যাচ্ছে, তত যেন সম্ভাবনাকে আরও বেশি উজ্জ্বল দেখাচ্ছে। সম্প্রতি আইসিসি চেয়ারম্যান গ্রেগ বার্কলে বলেছেন যে, লস অ্যাঞ্জেলেস আর ক্রিকেট–দুইয়ের জন্যই ব্যাপারটা ‘উইন-উইন সিচুয়েশন’। যা শোনার পর থেকে সম্ভাবনাকে আরও জোরালো দেখাচ্ছে। আইসিসি-র এক কর্তাকে জিজ্ঞাসা করায় তিনিও বললেন যে, লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিকে ক্রিকেটের (Cricket) অন্তর্ভুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা ভাল রকম রয়েছে। আগামী জুন মাসে পুরো ব্যাপারটা পরিষ্কার হওয়ার সম্ভাবনা। আর যা শেষ পর্যন্ত হলে, খেলাধুলোর পক্ষে বড় ব্যাপার হবে। অলিম্পিকের জন্যও। কারণ অলিম্পিকও ভারতের সুবিশাল বাজারে ঢোকার প্রবেশপত্র পেয়ে যাবে।
দর্শক সংখ্যা, উত্তুঙ্গ আগ্রহ যদি বিচার্য হয়, ক্রিকেটের অলিম্পিকে অন্তর্ভুক্ত হওয়া মোটেই আশ্চর্যের কিছু নয়। সবচেয়ে বড় কথা, আইওসি-র কাছে এটা একটা বিশাল বড় সুযোগ। কারণ, দক্ষিণ এশিয়ার লক্ষ লক্ষ মানুষ ক্রিকেট দেখেন, খেলাটাকে উপভোগ করেন। যে বাজারটা এখনও আইওসি-র (IOC) অধরা। মনে রাখতে হবে, দক্ষিণ এশিয়ায় এখনও সে ভাবে পা রাখতে পারেনি অলিম্পিক। এখনও সে ভাবে মানুষের মন কাড়তে পারেনি। ক্রিকেট যে সদর দরজাটা খুলে দেবে।
অলিম্পিকে ক্রিকেটের অন্তর্ভুক্তির ‘বিড’ করছেন যাঁরা, তাঁদেরও সমগ্র ব্যাপারটা নিয়ে বেশ আশাবাদী দেখাচ্ছে। এঁরা বলছেন যে, অলিম্পিকে ক্রিকেট একবার ঢুকে গেলে, অলিম্পিকের আধিপত্য পৃথিবীতে আরও বেড়ে যাবে। আর তাতে, আগামী অক্টোবরে ভারতে আইওসি সেশন খুব গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। কেউ কেউ বলতে পারেন যে, অক্টোবরে আইওসি সেশন আয়োজন মোটেও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় নয়। কারণ, তখন দেশজুড়ে ক্রিকেট বিশ্বকাপ চলবে। ভারতে ক্রিকেট বিশ্বকাপের সঙ্গে লড়াই করে আইওসি সেশনের জায়গা করে নেওয়া বা মিডিয়ার নজরে পড়া–দু’টোর একটাও সহজ হবে না। কিন্তু একবার ক্রিকেট যদি সমীকরণে ঢুকে পড়ে, তা হলে সব কিছু মোটেই তেমন থাকবে না। ভেবে দেখুন না, ভারতের আইওসি সদস্য নীতা আম্বানি দেশে ক্রিকেট বিশ্বকাপের ভরা বাজারে লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিকে ক্রিকেটের অন্তর্ভুক্তির ঘোষণা করছেন! আগ্রহ বাড়বে না তখন মিডিয়ায়? লিখবে না কাগজ? আর সময়ের দিক থেকেও ব্যাপারটা নিখুঁত হবে। কারণ, আইসিসি আবার ভারতীয় বোর্ড সচিব জয় শাহকেই দায়িত্ব দিয়েছে এই ব্যাপারটা দেখতে।
এখনও সব কিছু চূড়ান্ত নয়। কিন্তু ‘সম্ভাবনা’ শব্দটার পরিধি ছাড়িয়ে অনেক এগিয়ে গিয়েছে ব্যাপারটা। কয়েকটা ফ্যাক্টরও কাজ করছে। যেমন ২০৩৬ অলিম্পিক আয়োজন করতে চায় ভারত। আবার ২০৩২ অলিম্পিক যেখানে হবে, সেই ব্রিসবেনেও ক্রিকেটের বিশাল একটা বাজার আছে। প্রশ্ন হল, কেন এত দিন অলিম্পিকে অন্তর্ভুক্তি ঘটেনি ক্রিকেটের? এক্ষেত্রে অনেকটাই বাহবা দিতে হবে বর্তমান ক্রীড়া প্রশাসকদের। যাঁরা মনে করেন, শুভমান গিল বা হ্যারি ব্রুকের গলায় অলিম্পিক পদক থাকলে তাতে আদতে লাভ হবে খেলাটারই। স্মৃতি মান্ধানা আর তাহিলা ম্যাকগ্রা যদি অলিম্পিক ফাইনালে টস করতে যান, টিভি ‘ভিউয়ারশিপ’ কোথায় যেতে পারে, ভাবতে পারছেন? আজ পর্যন্ত অলিম্পিকে ক্রিকেটের স্থান একবারই হয়েছে। ১৯০০ সালের প্যারিসে। অংশ নিয়েছিল মাত্র দু’টো টিম ইংল্যান্ড আর ফ্রান্স। খেলাও হয়েছিল একটা–শুধুই ফাইনাল! ১৯০৪ সালে ফের অলিম্পিকে ক্রিকেটকে রাখতে চেয়েছিলেন ব্যারন পিয়ের দি-কুবার্তিন। কিন্তু ক্রিকেট ততদিনে নিজের জায়গা হারিয়ে ফেলে।
লস অ্যাঞ্জেলিসে ক্রিকেট তার হারানো জায়গা ফিরে পাবে?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.