সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মহম্মদ শামি। গত কয়েক মাস যাঁকে নিয়ে যাবতীয় আলোচনা হয়েছে খেলার মাঠ কেন্দ্রিক। কিন্তু দিন দুই আগে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুটা হঠাৎ করেই বদলে গিয়েছে। খেলার মাঠ রাতারাতি বদলে গিয়েছে রাজনীতির ময়দানে। সূত্রের খবর মানলে, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে (Lok Sabha 2024) বিজেপির হয়ে ভোট ময়দানে নামতে চলেছেন ভারতীয় দলের পেসার। তাঁর লোকসভা কেন্দ্র সম্ভবত বাংলার বসিরহাট। যদিও শামির (Mohammad Shami) নিজের ইচ্ছা উত্তরপ্রদেশের কোনও আসন থেকে দাঁড়ানোর।
অনেকের মনেই প্রশ্ন, কেরিয়ারের মধ্যগগনে কেন খেলার মাঠ ছেড়ে রাজনীতির ময়দানে শামি? এই তো কদিন আগে বিশ্বকাপের (ICC World Cup 2023) মঞ্চে দাপিয়ে খেলে গিয়েছেন তিনি। এই তো কদিন আগে তাঁর পেস আর সুইং সামলাতে নাকানিচোবানি খেতে হয়েছে বিশ্বের তাবড় তাবড় ব্যাটারকে। এই তো কদিন আগে সব ম্যাচ না খেলেও বিশ্বকাপের সেরা বোলারের তকমা পেয়েছেন তিনি। তাহলে গত কয়েক মাসে কী এমন হয়ে গেল, যাতে মহম্মদ শামিকে খেলার মাঠ ছেড়ে রাজনীতির ময়দানে নেমে পড়তে হল? অনেকে বলবেন, এই তিন-চারমাসে অনেক কিছুই ঘটেছে শামির জীবনে। রাতারাতি ক্রিকেটার হিসাবে তাঁর জনপ্রিয়তা অনেক বেড়ে গিয়েছে। বিশ্বকাপ ফাইনালে হারের পর নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi) তাঁকে জড়িয়ে ধরেছেন, সেই নরেন্দ্র মোদির সরকারই তাঁকে অর্জুন পুরস্কার দিয়েছে, এবং সর্বোপরি প্রবল প্রতাপশালী বিজেপির তরফে সংসদীয় রাজনীতিতে প্রবেশ করে ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত করার প্রস্তাব গিয়েছে। কিন্তু মহম্মদ শামির রাজনীতি ময়দানে প্রবেশের নেপথ্যে বোধ হয় দৃশ্যমান এই ফ্যাক্টরগুলির বাইরেও বেশ কিছু ফ্যাক্টর কাজ করছে।
ক্রিকেটার হিসাবে শামির সর্বোচ্চ স্তরে উঠে আসাটা রূপকথার চেয়ে কম কিছু নয়। উত্তরপ্রদেশের আমরোহা থেকে কলকাতা আগমন। চরম অর্থকষ্টের মধ্যে বাংলার হয়ে ঘরোয়া ক্রিকেট সার্কিটে। তার পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখা। এই দীর্ঘ যাত্রাপথে কম উপেক্ষিত হতে হয়নি তাঁকে। প্রথমে উত্তরপ্রদেশের হয়ে রনজি খেলার ইচ্ছা ছিল, পূরণ হয়নি। তার পর নিজ যোগ্যতায় যখন জাতীয় দলে সুযোগ পেলেন, তখনও বারবার পরীক্ষার মুখে পড়তে হয়েছে। নিজের নামের জন্য, নিজের পদবির জন্য। জাতীয় দলে টিকে থাকতে হলে প্রত্যেকে ক্রিকেটারকেই প্রতিমুহূর্তে পরীক্ষা দিতে হয়, কিন্তু অস্বীকার করার কোনও জায়গা নেই যে সেই পরীক্ষা মহম্মদ শামি বা অর্শদীপ সিংদের জন্য অনেক কঠিন। কারণ, কোনও এক ম্যাচে খারাপ পারফর্ম করলেই শামিকে পেতে হয়েছে ‘দেশবিরোধী’ তকমা। প্রশ্ন তোলা হয়েছে তাঁর পাক প্রীতি নিয়ে। দেশের মাটিতে বিশ্বকাপ খেলতে নেমেও ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগানের শাসানি শুনতে হয়েছে বার বার। এমনকী পুজোর দিন ছবি পোস্ট করায় তাঁর দুধের শিশুকে দেওয়া হয়েছে ‘গণধর্ষণে’র হুমকি। উগ্র হিন্দুত্ববাদী থেকে শুরু করে উগ্র মৌলবাদীরা, কেউই রেয়াত করেনি তাঁকে। সেই সঙ্গে সোশাল মিডিয়ায় নিত্য কটাক্ষ, নিত্য সমালোচনা তো রয়েইছে। এর বাইরে ব্যক্তিগত জীবনেও তাঁকে কম ঝক্কি পোয়াতে হয়নি। পরিত্যক্তা স্ত্রী হাসিন জাহান বারবার তাঁর নামে ব্যক্তি কুৎসা করে গিয়েছেন। হাসিনের করা মামলার বেড়াজাল এখনও ভেদ করতে পারেননি শামি।
রাজনীতির ময়দানে পা দেওয়াটা হয়তো শামির জন্য এই সব যন্ত্রণা থেকে পরিত্রাণের রাস্তা। কারণ এমন একটা দলে তিনি যোগ দিতে যাচ্ছেন, যে দলে যোগ দিলে আলাদা করে আর দেশপ্রেমের প্রমাণ দিতে হবে না তাঁকে। দেশের বর্তমান রাজনীতির প্রেক্ষিতে অন্তত হিন্দু জাতীয়তাবাদী বিজেপির কোনও সদস্যের দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারবে না কেউ। কারণ দেশপ্রেমের ‘সার্টিফিকেট’ দেওয়ার কাজটা শাসকদলের সদস্যরা নিজেদের ‘উত্তরাধিকার সূত্রের অধিকার’ বলেই মনে করেন। বিজেপিতে যোগ দেওয়ার অর্থ, এর পর আর মহম্মদ শামিকে খেলার মাঠে বাড়তি পরীক্ষা দিতে হবে না। বিজেপিতে যোগ দিলে আর হয়তো তাঁকে দেখে হিন্দুত্ববাদীরা ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দেবেন না। শাসক শিবিরের কল্যাণে স্ত্রী হাসিন জাহানের করা মামলার বেড়াজাল থেকে পরিত্রাণের রাস্তাও খুঁজে পেয়ে যেতে পারেন তিনি। সব মিলিয়ে রাজনীতির ময়দানই শামির জীবনের যাবতীয় শাপমোচনের রাস্তা হয়ে যেতে পারে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.