Advertisement
Advertisement
প্রয়াত কাদির

প্রয়াত আব্দুল কাদির, খসে গেল পাকিস্তান ক্রিকেটের রূপকথার এক গাছ

হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলেন এককালে বিশ্বের সেরা লেগস্পিনার।

Legendary Pakistan spinner Abdul Qadir passes away
Published by: Sulaya Singha
  • Posted:September 7, 2019 8:52 am
  • Updated:September 7, 2019 8:52 am  

গৌতম ভট্টাচার্য: পেশোয়ারে পাক ড্রেসিংরুমের নিচে সেই ছোট ঘরটা দ্রুত মনে পড়ে যাচ্ছে। মৃত্যু আর ক্রিকেট মাঠে কোনও তুলনাই হয় না। তবুও আন্দাজ করতে পারছি আব্দুল কাদিরের মরদেহের পাশে দাঁড়িয়ে থাকবে যে সব বিস্ফারিত মুখ প্রায় তারই প্রতিচ্ছবি। আমরা কেউ সাহস করে কোনও কথা বলতে পারছি না। কিন্তু একটা উদ্ধৃতি যে এখুনি না নিলেই নয়। খবর পাঠানোর ডেডলাইন চলে যাচ্ছে। কিন্তু তিনি আব্দুল কাদির যে স্তব্ধবাক। এমন মূহ্যমান ভাবে বসে রয়েছেন যে কেউ নীরবতা ভঙ্গের সাহস পাচ্ছে না।

আমাদের মতো ভারতীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে তাঁর দুর্ধর্ষ সম্পর্ক। একইসঙ্গে তিনি যে আবার ভয়ংকর মেজাজি। একটু আগে ষোলো বছরের শচীন তেণ্ডুলকরের কাছে এক ওভারে চারটে ছয় খেয়ে উঠেছেন। কীভাবে জিজ্ঞেস করা যায় তাঁকে? বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাধার লোক পাওয়া যাচ্ছে না। এই অবস্থায় কাদির নিজেই মুখ তুলে বললেন, “মিলিয়ে নেবেন আমার কথা। এই ছেলেটা একদিন ভিভ রিচার্ডসের মতোই বড় হবে।”

[আরও পড়ুন: পাকিস্তানের হয়ে খেলছেন কোহলি! ভিডিওটি দেখলে ভারতীয় হিসেবে ক্ষুব্ধ হবেন আপনিও]

শুক্রবার রাত পৌনে এগারোটায় লাহোর থেকে আচমকা পাকিস্তানের সর্বকালের সেরা লেগ স্পিনারের মৃত্যুসংবাদ পেয়ে প্রথমেই শচীনের মুখটা মনে পড়ল। যোগাযোগ করব তাঁকে? কী বলতে পারেন শচীন? আর সবার মতোই বিহ্বল হতভম্ব হয়ে যাবেন। নিশ্চয়ই মনে পড়ে যাবে সেই অমর ডুয়েল। যেখানে কাদির তাঁকে উসকে দিয়ে বলেছিলেন, “আরে অন্য বোলারটাকে মারছিস কেন? যদি বড় ব্যাটসম্যান হোস আমায় মেরে দেখা।” এরপরেই চারটে ছক্কা আর পেশোয়ার ড্রেসিংরুমের কাচ ভাঙা! ষোলো বছর বাদে ভারত যখন আবার পেশোয়ারে ওয়ানডে ম্যাচ খেলছিল সাংবাদিকরা প্রথমেই খুঁজছিলেন সেই কাচের ভাঙা জানালাটা। কিন্তু ২৬৭ টেস্ট উইকেটের কাদির তো কেবল ছক্কা খাওয়া বোলার নন। এটা তাঁর কোনও পরিচিতিই না। তাঁর সময়ে তিনি বিশ্বের সেরা লেগস্পিনার। ভিভ রিচার্ডসকে একবারও রান করতে দেননি তাঁর বিরুদ্ধে। আর বন্ধু ইমরান খান তো মনে করেন তিনি শেন ওয়ার্নের চেয়েও বড় লেগস্পিনার। এত ম্যাচ জিতিয়েছেন পাকিস্তানকে দেশে এবং বিদেশে যে রূপকথার একটা গাছ খসে গেল বললে কিছুই বলা হয় না।

Advertisement

qadir-sachin

কিন্তু তারও আগে পাক ক্রিকেট ইতিহাসে তিনি কি করুণতম নায়ক? দাবিদার তো বটেই। কোনও রোগভোগ ছিল না। পরশু দিনও গদ্দাফি স্টেডিয়ামের পিছনে নিজের অ্যাকাডেমিতে কোচিং করিয়েছেন। পাক দলের কোচ হিসেবে মিসবা উল হকের নির্বাচন নিয়ে গলা ফাটিয়েছেন। অতর্কিত কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট সেভাবে তাঁকে জীবন থেকে সরিয়ে দিল যেভাবে তাঁর ফ্লিপারগুলো বিশ্বসেরা ব্যাটসম্যানদের নিঃশব্দে মাঠ থেকে সরিয়ে দিয়েছে।

ঊননব্বইয়ে শচীনদের পাকিস্তান সফর চলাকালীন কাদির তাঁর বাড়ি নিয়ে গিয়েছিলেন আমাদের। অসম্ভব বিলাসবহুল বাংলো। ওয়াল টু ওয়াল কার্পেট। বিদেশি গাড়ি। ঐশ্বর্য্যের এত সব উপকরণ দেখে তখন কল্পনাই করতে পারিনি। পরে জেনেছি কাদিরের উত্থান লাহোর শহরতলির সবজি মাণ্ডি থেকে। বাবা বাজারে শাকসবজি বিক্রি করতেন। সেখান থেকে রূপকথার উত্থান। পাকিস্তানের হয়ে দুর্ধর্ষ সব সাফল্য। তারপর আবার স্বীকৃতি না পাওয়া। ওয়ার্ন-মুরলীদের প্রতাপে তাঁর ক্রিকেট-ঐশ্বর্য্যের গ্রহণ হয়ে যাওয়া। সবশেষে অকালমৃত্যু। দুর্ভাগ্যের আর কী বাকি থাকল?

imran-qadir

কাদিরের মৃত্যু প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের মনকে কাশ্মীর সমস্যা থেকে অন্তত ঘণ্টাখানেক সরিয়ে আনবে কোনও সন্দেহ নেই। একটা সময় হরিহর আত্মা ছিলেন দু’জনে। ইমরানকে চোখ বুজে বিশ্বাস করতেন কাদির। আমায় একটা লেখা ডিক্টেট করেছিলেন যার বক্তব্য ছিল, ইমরান পাকিস্তান ক্রিকেটের মহম্মদ আলি। ওর কখনও এমন কিছু করা উচিত নয় যেখানে লোকে প্ল্যাকার্ড নিয়ে বেরোতে পারে- ইমরান খান কো নিকালো। চাননি ইমরান রাজনীতিতে নামু্ন। এই ভয়ে যে তাঁকে কেউ না অসম্মান করে দেয়। সেই ইমরানই তাঁকে ভারতের বিরুদ্ধে স্পিনিং উইকেটে ব্যাঙ্গালোর টেস্টে খেলাননি। গাভাসকরের অমর ৯৬ সত্ত্বেও যে টেস্ট জিতে পাকিস্তান সিরিজ ছিনিয়ে নেয়। বিরানব্বইয়ের বিশ্বকাপজয়ী পাকিস্তান টিমে? ক্যাপ্টেন ইমরান কিন্তু কাদির মিয়াঁ সেখানেই বা কোথায়? ১৩২ ওয়ানডে উইকেট নিয়েও তাঁকে জায়গা করে দিতে হয় মুস্তাক আহমেদকে। ট্র্যাজেডির ঘনঘটা ছাড়া কী বলব?

[আরও পড়ুন: স্মিথ না কোহলি? সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে কাকে বাছলেন শেন ওয়ার্ন?]

বরাবরের স্পষ্টবক্তা বলে পাক ক্রিকেট প্রশাসনে যে জায়গাটা পাওয়া উচিত ছিল সেটাও অবসরোত্তর জীবনে পাননি। মিয়াঁদাদের মতো কোনও মন্ত্রী-আমলাকে ধরতে পারেননি। একটা সময়ের পর অপেক্ষা করেছিলেন কবে তাঁর বন্ধু রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী হবেন? কবে মাঠের মতোই তাঁর হাত ধরবেন? সেই ইমরান যিনি আজও বলে থাকেন, “কাদিরের আমলে আম্পায়াররা ফ্রন্টফুটে এলবিডব্লিউ দিলে ওরও ওয়ার্নের মতো ৭০০ উইকেট হত।” সেই ইমরান ওয়াজির-এ-আজম। আর তাঁকে কাদিরকে কিনা এগিয়ে যেতে হচ্ছে সমাধির দিকে। দাবিদার নন। তিনি আব্দুল কাদির পাক ক্রিকেটের অবিসংবাদী সর্বকালীন ট্র্যাজিক নায়ক!

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement