সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিরাট কোহলির (Virat Kohli) সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে চর্চায় এখন আফগানিস্তানের ক্রিকেটার নবীন উল হক (Naveen ul Haq)। সোমবারের ঘটনার অব্যবহিত পরে আফগান বোলারকে বলতে শোনা গিয়েছে, ”আমি আইপিএল খেলতে এসেছি। গালমন্দ হজম করতে আসিনি।”
নবীন ছোটবেলা থেকেই একটু অন্যরকমের। কেউ তাঁকে কিছু বললে পালটা দিতে ছাড়েন না আফগান ক্রিকেটার। তাই বিরাট কোহলি ম্যাচ চলাকালীন যখন লাগাতার তাঁকে গালমন্দ করছিলেন, নবীনও কোহলিকে সব চুকিয়ে দেন খেলার শেষে।
আফগান ক্রিকেটার একবার বলেছিলেন, ”কেউ কিছু বললে আমি চুপ করে থাকতে পারি না। আমি যদি বলি আগামিকাল থেকে আমার স্বভাব বদলে যাবে, কেউ কিছু বললেও আমি চুপ করে থাকব, তাহলে মিথ্যা কথা বলা হবে। আমি নিজেকে বদলাতে পারব না। চুপ করে সহ্য করা আমার ডিএনএ-তে নেই। ছেলেবেলা থেকেই আমি এরকম। কেউ কিছু বললে চুপ করে থাকতে পারি না।”
নবীনের সঙ্গে মাঠের ভিতরে ঝামেলা নতুন কোনও ব্যাপার নয়। লঙ্কান প্রিমিয়ার লিগেও নবীন উল হক ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েছিলেন পাকিস্তানের মহম্মদ আমির ও শাহিদ আফ্রিদির সঙ্গে। উল্লেখ্য, নবীনের বাবা যুদ্ধ-বিধ্বস্ত কাবুলের চিকিৎসক। একসময়ে শরণার্থী হয়ে পাকিস্তানে চলে গিয়েছিল নবীনের পরিবার। সেই সময়ে নবীন টেপ বল ক্রিকেট খেলতেন। পরে চলে আসেন নিজের দেশ আফগানিস্তানে। লঙ্কা প্রিমিয়ার লিগে তাঁর সঙ্গে আফ্রিদি ও আমিরের ঝামেলা প্রসঙ্গে নবীন বলেছিলেন, ”কেউ যদি আমাকে বলে তোমরা চিরকাল আমাদের পায়ের নিচে ছিলে এবং থাকবে, তাহলে আমি চুপ করে থাকার বান্দা নই।”
যদিও আমির পরবর্তীতে নবীনকে ‘মিথ্যাবাদী’ বলেন। আমির দাবি করেন, তিনি আফগানিস্তানকে অসম্মান করেননি। বরং বলেন, ”নবীন আমাকে ক্রমাগত গালাগাল করছিল। আমাকে বিশ্বাসঘাতক বলে। তোমার তো পাঁচ বছর জেলে থাকা উচিত।”
ম্যাচ ফিক্সিংয়ের জন্য নির্বাসিত ছিলেন আমির। সেই প্রসঙ্গ উত্থাপ্পন করে আমিরকে স্লেজিং করেছিলেন নবীন। এদিকে আফগান ক্রিকেটারটি বলেছিলেন, ”আমির ব্যাট করতে নেমেছিল। ম্যাচটা হেরে যায় ওরা। আমার প্রথম বলে খুব জোরে ব্যাট চালিয়েছিল আমির। কিন্তু বলের লাইন মিস করেছিল। আমি রসিকতা করে আমিরকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, কত বড় ছক্কা হাঁকাতে চাও তুমি? আমি মজা করেছিলাম কিন্তু আমির বিষয়টাকে সিরিয়াসলি নিয়ে নেয়। প্রথম বল থেকে শুরু করে শেষ বল পর্যন্ত আমি লড়াকু একজিন ক্রিকেটার। কিন্তু খেলার শেষে কারওর প্রতি আমার কোনও খারাপ অনুভূতি থাকে না। আমির অত্যন্ত ভাল একজন ক্রিকেটার।”
ছোটবেলা থেকে নবীন ভারতীয় ক্রিকেটের ভক্ত। তিনি বলেছিলেন, ”ভারতের খেলা দেখতাম। ওটাই ছিল আমার প্যাশন। ভারতের খেলা দেখতে দেখতেই আমার ক্রিকেটের প্রতি ভালবাসা জন্মায়। সপ্তাহান্তে আমরা ক্রিকেট খেলতাম। সপ্তাহের অন্য দিনে মা-বাবা আমাদের ক্রিকেট খেলতে দিতেন না। সপ্তাহান্তে আমাদের বাড়ি থেকে দু-আড়াই ঘণ্টা দূরে গিয়ে টেপ বল ক্রিকেট খেলতাম।”
সেই সময়ে নবীন ছিলেন ব্যাটসম্যান-উইকেট কিপার। বোলার ছিলেন না। বল করতে ঘৃণা করতেন তিনি। নবীন বলেছেন, ”টেপ বল ক্রিকেটে আমি ব্যাটিং করতে পছন্দ করতাম। আমার বড় ভাইয়ের সঙ্গে ঘরে সবসময়ে ক্রিকেট নিয়ে লড়াই হত।”
আফগানিস্তানে ফেরার পরে একদিন নবীন তাঁর চিকিৎসক বাবাকে বলেছিলেন, লেদার বলে ক্রিকেট খেলা শুরু করতে চান তিনি। পেশাদার ক্রিকেটার হতে চান। কিন্তু নবীনের বাবা বলেছিলেন, ”না, তুমি নিজের পড়াশোনার দিকে মন দাও।” নবীনের বাবা ডাক্তার হওয়ায় ছেলেকে সবসময়ে পড়াশোনার কথা বলতেন।
কিন্তু নবীনের দাদা তাঁদের বাবাকে রাজি করান। নবীনকে খেলতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। নেটে বোলিং করার সময়ে প্রথম বলটিই বিমার করেছিলেন নবীন। নেটের একেবারে উপরের দিকে বলটা আছড়ে পড়েছিল। ছাত্র নবীনের দিকে তাকিয়ে ছিলেন তাঁর কোচ। নবীন কোচকে বলেছিলেন, “ঠিকঠাক জুতো না থাকায় আমার পা পিছলে গিয়েছিল। আমাকে জুনিয়রদের নেটে পাঠিয়ে দেন কোচ।”
সেই নবীন আইপিএলে খেলছেন। কোহলির সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে তিনিই এখন শিরোনামে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.