ফাইল ছবি।
আলাপন সাহা: বছর দশেক আগেও আইপিএলে (IPL 2024) কলকাতা নাইট রাইডার্স বনাম পাঞ্জাব ম্যাচটা নিয়ে আলাদা একটা স্ফুলিঙ্গ থাকত। ক্রিকেট মাঠে গৌতম গম্ভীর বনাম বীরেন্দ্র শেহবাগ ব্লকবাস্টার থাকত। মাঠের বাইরের আকর্ষণও কম থাকত না। কারণ সেখানে ‘বীর-জারা’-র আবেগের যুদ্ধ থাকত। বি ব্লকে ‘বীর’ ওরফে শাহরুখ খান একাই আকর্ণের কেন্দ্রবিন্দুতে। ‘জারা’ (প্রীতি জিন্টা) আবার এক নাগাড়ে পাঞ্জাবের পতাকা উড়িয়ে যেতেন। টেনশনের একটা শিরশিরানি থাকত সব সময়।
কিন্তু সময়ের বদলের সঙ্গে সঙ্গে আগের পাঞ্জাব (Punjab Kings) আর নেই। এই ম্যাচ ঘিরে আগের সেই উত্তাপের নামগন্ধও নেই। দিন কয়েক আগেই ইডেনে বিরাট কোহলি বনাম কেকেআর নিয়ে আবেগের স্রোত বয়ে গিয়েছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার কেকেআর (Kolkata Knight Riders) বনাম পাঞ্জাব ম্যাচের ( KKR vs PBKS) আগের দিন ইডেনে চত্বরের আশেপাশে ঘুরে কোথাও আবেগের ‘আ’ খুঁজে পাওয়া গেল না। শাহরুখ ইতিমধ্যেই শহরে ঢুকে পড়েছেন। প্রীতি আসছেন ম্যাচের দিন দুপুরে। কিন্তু তাতেও অদ্ভুতরকম নিরুত্তাপ শহর।
বৃহস্পতিবার মহামেডান মাঠের সামনে টিকিট খুঁজতে এসেছিলেন জনা কয়েক ঠিকই, কিন্তু সেই উন্মাদনা কোথায়? আসলে বিপক্ষে শিখর ধাওয়ান বাদে সে অর্থে কোনও তারকা নেই। শিখর আবার এই ম্যাচে খেলতে পারছেন না। চোটের জন্য এর আগে বেশ কয়েকটা ম্যাচে খেলেননি তিনি। নেটে নকিং করেছিলেন আগের দিন। আশা করা হচ্ছিল, এই ম্যাচে তিনি খেলতে পারেন। এদিন বেশ খানিকক্ষণ ব্যাটিংও করলেন। কিন্তু পাঞ্জাবের স্পিন বোলিং কোচ সুনীল যোশী জানিয়ে দিয়ে যান যে, শিখর পরের ম্যাচে ফিরবেন। অর্থাৎ কেকেআর-যুদ্ধে ক্যাপ্টেনকে পাচ্ছে না পাঞ্জাব।
যদিও কেকেআর ওসব নিয়ে মাথাই ঘামাতে চাইছে না। বরং গৌতম গম্ভীরদের অসম্ভব সিরিয়াস দেখাচ্ছিল। আসেল কেকেআরও খুব ভাল করে জানে, দুটো হোম ম্যাচ এখন খুব গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। জিততে পারলে প্লে-অফের দোরগোড়ায় চলে যাওয়া যাবে। যদিও কেকেআর শিবির থেকে বলা হল, তারা ম্যাচ ধরে-ধরে এগোতে চাইছে। রমনদীপ সিং বলে গেলেন, “দেখুন আমরা বেশি কিছু ভাবছি না এখনই। ম্যাচ বাই ম্যাচ এগোতে চাই।”
সাত ম্যাচের মধ্যে পাঁচটায় জিতে গিল টেবিলের দু’নম্বরে থাকলেও কেকেআর মূল সমস্যা যে বোলিং, সেটা অ্যাদ্দিনে সবারই মোটামুটি বোঝা হয়ে গিয়েছে। বিশেষ করে মিচেল স্টার্কের অফ ফর্ম প্রবল ভোগাচ্ছে কেকেআরকে। শেষ দুটো ম্যাচে দু’শো কুড়ি প্লাস রান করেও একটা ম্যাচে হেরেছেন শ্রেয়স আইরায়রা। আরসিবির বিরুদ্ধেও শেষ ওভারেও কার্যত হারা ম্যাচ জেতে কেকেআর। যা নিয়ে প্রশ্নও করা হয়েছিল রমনদীপকে। যার উত্তরে কেকেআর ক্রিকেটার বলে গেলেন, “সবাই নিজেদের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করছে। যেরকম পরিকল্পনা হয়, সেই অনুযায়ী খেলতে হবে আমাদের।” তবে কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে, অধিনায়ক শ্রেয়সের নাকি হালকা চোট রয়েছে। পিঠের সমস্যা আবার নাকি ভোগাচ্ছে তাঁকে। এদিন ইডেনে একটা ফিটনেস টেস্টও হয় শ্রেয়সের। যদিও পাঞ্জাব ম্যাচে নাইট অধিনায়কের খেলা নিয়ে মনে হয় না কোনওরকম সংশয় আছে।
খাতায়-কলমে দেখতে গেলে শুক্রবার ইডেনে প্রতিপক্ষের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে নামছে কেকেআর। ওপেনিংয়ে সুনীল নারিন আর ফিল সল্ট যে কোনও টিমের কাছে দুঃস্বপ্ন হয়ে যাচ্ছেন। পাঞ্জাবও খুব ভালো করেই জানে, নাইট ওপেনারদের দ্রুত ফেরাতে না পারলে অশেষ দুঃখ রয়েছে কপালে। যা নিয়ে তারা ইতিমধ্যে পরিকল্পনাও শুরু করে দিয়েছে। যোশিও বলে গেলেন, “ওদের কীভাবে আটকাব, সেটা না হয় আপনারা মাঠেই দেখতে পারবেন।” একইসঙ্গে প্রচ্ছন্ন একটা হুঙ্কার দিয়ে গেলেন তিনি, “প্রত্যেকটা দিন কিন্তু আলাদা। প্রতি ম্যাচে নতুন করে শুরু করতে হয়। তাই আমরা কী আগে করেছি না করেছি, সেটা নিয়ে ভেবে লাভ নেই।” বাইশ গজের যুদ্ধটা কতটা উত্তাপ ছড়ায়, সেটাই এখন দেখার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.