আলাপন সাহা: ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের জন্য টেস্ট ও ওয়ানডে দল ঘোষণার কথা তিনি জানতেনই না। ঘুণাক্ষরেও জানতেন না টেস্ট ও ওয়ানডে-দুই ফরম্যাটের দলেই তাঁকে রেখেছেন নির্বাচকরা। যখন জানতে পারলেন, তখন নিজেই বিশ্বাস করে উঠতে পারেননি। কিছুক্ষণ স্থবিরের মতো থাকেন। তার পরে ইন্টারেনেট ঘেঁটে যখন দেখলেন নিজের নাম, তখনই বিশ্বাস হয় বাংলার পেসার মুকেশ কুমারের (Mukesh Kumar)।
এই প্রতিবেদককে মুকেশ বললেন, “জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছি, প্রথমটায় বিশ্বাসই হয়নি। ভারতের হয়ে খেলার স্বপ্ন দেখে সব ক্রিকেটারই। আমারও স্বপ্ন ছিল টেস্ট ও ওয়ানডে দলে খেলব। সেই স্বপ্ন আজ সত্যি হল।” জাতীয় দলের দরজা তাঁর জন্য খুলে গিয়েছে, এই খবর জানতে পেরেই মা মালতী দেবীর আশীর্বাদ নেন মুকেশ। মায়ের আশীর্বাদ সঙ্গে নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ যাওয়ার বিমান ধরবেন তিনি। তার আগে অবশ্য দলীপ ট্রফিতে নামতে হবে বাংলার পেসারকে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ নতুন দেশ। নতুন চ্যালেঞ্জ। তার জন্য মনে মনে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন মুকেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সম্পূর্ণ অপরিচিত এক দেশ। অপরিচিত কন্ডিশন। কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন তিনি? মুকেশ বলছেন, ”জার্নি সবে শুরু। এই জার্নিটারই অপেক্ষায় থাকে সবাই। আমিও অপেক্ষায় ছিলাম। কোচ রাহুল দ্রাবিড় আছেন। তাঁর সঙ্গে কথা বলব। সিনিয়র ক্রিকেটাররা রয়েছেন। তাঁদের কাছ থেকেও পরামর্শ পাব।” তার পরে মাঠে নেমে নিজেকে প্রয়োগ করবেন মুকেশ। বলকে কথা বলাবেন তিনি।
এই আবেগঘন দিনে মুকেশের চোখে ভিড় করছে অনেক পুরনো ঘটনা। বাবাকে গতবছর হারান তিনি। মুকেশের বাবা চাইতেন না ছেলে ক্রিকেটার হোক। ক্রিকেট খেলতে যাওয়ার জন্য দিনে তিরিশ কিলোমিটার সাইকেল চালাতেন মুকেশ। সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। একসময়ে পুষ্টির অভাবে ভাল করে হাঁটতে পারতেন না মুকেশ। অভাবের জন্য ভাড়া করা কিট নিয়ে ক্রিকেট খেলতেন। মনোজ তিওয়ারি নিজের কিট দিয়েছিলেন মুকেশকে। ক্রিকেটার হওয়ার পথে বাধা এসেছে, বিপর্যয় নেমেছে। কিন্তু মুকেশকে কোনও কিছুই দিগভ্রষ্ট করতে পারেনি। নিজের লক্ষ্যে অবিচল থেকেছেন। লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন। ঘাম ঝরিয়েছেন।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে যে সুযোগ পেয়েছেন নিজেই জানতেন না। তেমনি দিল্লি ক্যাপিটালস যে তাঁকে নিলামে কিনেছে, সেই লাইভও দেখতে পাননি। অন্যদের কাছে শুনেছিলেন তা।
এই তো কয়েকদিন আগের ঘটনা। রঞ্জি ট্রফি ফাইনালের আগে বাংলার প্রাক্তন কোচ প্রশংসা করেছিলেন মুকেশের। বলেছিলেন, ”ওর জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া উচিত।” বিভিন্ন সময়ে অনেকেই মুকেশকে বলেছিলেন, তিনি জাতীয় দলে সুযোগ পেতে পারেন। সেই ক্ষমতা তাঁর আছে। টেনশন খেলা করত মুকেশের মনে। তিনি বলছেন, ”যতক্ষণ না জাতীয় দলের দরজা খুলে যাচ্ছে, ততক্ষণ চাপা টেনশন কাজ করত।” অবশেষে টেনশন দূর। মুকেশ কুমার নিজের সেরাটা দেওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছেন। বাকিটা দেখা যাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.