স্টাফ রিপোর্টার: এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ২-এর যোগ্যতা অর্জন পর্বে আলটিন আসিরের বিরুদ্ধে হার দিয়ে শুরু। তারপর ডুরান্ড কাপ কোয়ার্টার ফাইনালে শিলং লাজং। আর আইএসএলের প্রথম তিন ম্যাচে যথাক্রমে বেঙ্গালুরু এফসি, কেরালা ব্লাস্টার্স এবং এফসি গোয়া। ১৪ আগস্ট থেকে টানা পাঁচ ম্যাচ হেরেছে ইস্টবেঙ্গল। এই পরিস্থিতিতে সোমবার কোচ কার্লেস কুয়াদ্রাতের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চলেছেন লাল-হলুদ কর্তারা। সেখানেই কোচের থেকে জানতে চাওয়া হবে, কেন দলের এমন হতশ্রী দশা? কেন ম্যাচের পর ম্যাচ এভাবে ছন্নছাড়া ফুটবল খেলে চলেছে দল? কেন ফিটনেসের অভাব ফুটবলারদের মধ্যে? রবিবার দলের ভারতীয় সহকারী কোচ বিনো জর্জ এবং সিটিও অময় ঘোষালের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন লাল-হলুদ শীর্ষকর্তা দেবব্রত সরকার। সেখানে তিনি দলের এই পারফরম্যান্সের কারণ বিনোর কাছে জানতে চেয়েছেন বলে খবর। সেই বৈঠকের উপর ভিত্তি করেই সোমবার কুয়াদ্রাতের সঙ্গে লাল-হলুদ কর্তারা কথা বলবেন বলে জানা গিয়েছে। তবে এই মুহূর্তে ইস্টবেঙ্গলের কোচ বদলের সম্ভাবনা বিশেষ নেই। বরং আরও কয়েকটা ম্যাচ কুয়াদ্রাতের জন্য অপেক্ষা করতে চান কর্তারা। তাঁদের বিশ্বাস, এই দলটা ঠিকই ফর্মে ফিরবে। তবে বেশকিছু পরিবর্তন হতে পারে। এমনকি বর্তমান ফিজিক্যাল ট্রেনার কার্লেস জিমেনেজকে বিদায় জানানো হতে পারে।
বিভিন্ন কারণে কোচের উপর সত্যিই ক্ষোভ বাড়ছে। ঘরে বাইরে সর্বত্র। ইস্টবেঙ্গলের প্রধান সমস্যা হিসাবে উঠে আসছে চোটের কথা। এখনও পর্যন্ত পুরোপুরি ফিট অবস্থায় সব ফুটবলারকে একসঙ্গে হাতে পাননি কোচ কুয়াদ্রাত। মরশুমের শুরু থেকেই বাইরে নিশু কুমার। ক্লেটন সিলভা, প্রভাত লাকড়াও একটা বড় সময় বাইরে ছিলেন। এছাড়া দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকস, মাদিহ তালাল, সল ক্রেসপো, মহম্মদ রাফিপ, নন্দকুমাররা বিভিন্ন সময় চোট পেয়েছেন মরশুমের শুরুতেই। গত মরশুমে দলের ফিজিকাল ট্রেনিংয়ের বিষয়টি দেখতেন কোচ নিজেই। আর এবার তিনি নিজেই পছন্দ করে নিয়ে এসেছেন কার্লোস জিমেনেজকে। সবচেয়ে বেশি সাইডব্যাক নিয়ে। নিশু, প্রভাতরা চোট পুরোপুরি ঠিক হওয়ার বাইরে। আগেই মাঠে নামায় সমস্যা বেড়েছে রাকিপের । তবে প্রশ্নটা সেখানেই। শেষ কয়েকদিনের অনুশীলনে দেখা গিয়েছে, রাইট হিসাবে খেলছেন গুরসিমরত সিং ব্যাক গিল। মনে করা হয়েছিল, কেরালা ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে প্রথম একাদশে থাকবেন তিনি। যদিও শেষ পর্যন্ত ৮২ মিনিটে মাঠে আসেন তিনি। এমনকী এফসি গোয়া ম্যাচের আগেও প্রথম দলের সঙ্গে অনুশীলন করেছেন গুরসিমরত। তবে তাঁকে নামানো হয়নি পুরো শেষ পর্যন্ত ম্যাচেই। বরং মিডফিল্ডার শৌভিক চক্রবর্তীকে রাইট ব্যাক হিসাবে খেলিয়েছেন কুয়াদ্রাত। শুধু এই মরশুম কোচ নয়, গত মরশুমেও দেখা দিয়েছে একই ছবি। দলে থেকে নিয়মিত অনুশীলন করলেও কেন মাঠে নামছেন না গুরসিমরত? তবে কি তাঁর উপর ভরসা নেই কুয়াদ্রাতের? আর যদি ভরসা না-ই থাকে, তবে সার্থক গোলুই আর এডউইন ভন্সপ্যালকে ছেড়ে দিয়ে গুরসিমরতকে কেন রেখে দেওয়া হল? সেক্ষেত্রে কি কোচের প্রিয়পাত্র হিসাবে স্কোয়াডে রেখে দেওয়া হচ্ছে পাঞ্জাবের এই ডিফেন্ডারকে?
কুয়াদ্রতের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠছে দলের অন্দরেও। এই যেমন দলের এক তারকা বিদেশি মিডফিল্ডার। মরশুমের শুরুতে দলে সই করার সময় বড় গলায় জানিয়েছিলেন, কোচই তাঁকে রাজি করিয়েছেন লাল-হলুদ জার্সিতে খেলার জন্য। যদিও এখন দল যেভাবে খেলছে, তাতে বিশেষ খুশি নন তিনি। তিনি সহ দলের মাঝমাঠে একাধিক এমন ফুটবলার আছেন যাঁরা বল ধরে খেলতে পারেন। কিন্তু যেভাবে স্ট্র্যাটেজিতে খেলছে দল, তা পছন্দ হচ্ছে না তাঁর। মাঠে বলের যোগান না পেয়ে বেশ অখুশি তিনি। আর তার প্রভাব পড়ছে মাঠের বাইরেও। সূত্রের খবর, কোচিতে ম্যাচ হারার পর আর ড্রেসিংরুমে টিম মিটিংয়ের জন্য অপেক্ষা করেননি ওই মিডফিল্ডার। সবার আগে একাই বের হয়ে যান। পরে ফের তাঁকে ডেকে এনে টিম মিটিং করা হয়।
এমনিতে দল জয়ের সরণিতে থাকলে এমন অনেক প্রশ্ন সেই সাফল্যের আলোয় ঢাকা পড়ে যায়। তবে বাস্তবটা হল, ইস্টবেঙ্গল সবমিলিয়ে টানা পাঁচ ম্যাচ হারার পর প্রকাশ্যেই উঠছে সেই সব প্রশ্ন। যা তুলছেন সমর্থকরা। দ্রুত ফের জয়ের সরণিতে না ফিরলে হয়তো এই সব প্রশ্নই দ্রুত বাড়ির পথ ধরাবে কোচ কার্লেস কুয়াদ্রাতকে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.