রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়: বিরাট কোহলি (Virat Kohli) মাঠে থাকলে কিছু না কিছু হবে। ঘটবে। ঘটবেই। কেকেআরের আফগান তারকা ওপেনার রহমানুল্লাহ গুরবাজ ঘুরঘুর করছিলেন বেশ কিছুক্ষণ। সন্ধের ইডেনে দু’টো টিমের ট্রেনিং তখন শেষ অধ্যায়ে ঢুকে পড়েছে। বিরাট ব্যাটিং-পর্ব মিটিয়ে তখন কেকেআরের এমন দু’জনের সঙ্গে মনোযোগী আড্ডায় ব্যস্ত, যাঁদের বিরুদ্ধে প্রাক্তন ভারত অধিনায়কের আইপিএল স্ট্যাটস দেখলে বঙ্গদেশের সোনালি-বেগুনি সমর্থকদের কাঁপুনি ধরতে বাধ্য। উমেশ যাদব এবং শার্দূল ঠাকুর। উমেশের বিরুদ্ধে বিরাট আইপিএলে আজ পর্যন্ত ৮৫ বল খেলে করেছেন ১৫০ রান। আর শার্দূলের বিরুদ্ধে একটু কম, ৪২ বলে ৬৭!
গুরবাজকে ইতস্ততঃ করতে দেখে নিজেই এরপর ডেকে নিলেন বিরাট। নিজের বিশাল অভিজ্ঞতা ভাণ্ড থেকে মণি-মুক্তো তুলে আফগান ব্যাটারের ‘অস্ত্রাগার’ সাজিয়ে দিলেন সযত্নে। দেখলে কে বলবে, আর চব্বিশ ঘণ্টা পর নামবেন দু’জন সম্মুখসমরে? উদ্যত হবেন, একে অন্যকে ‘বধ’ করতে! এক-এক সময় মনে হয়, এই ধারণাটাই ভুল। এ সমস্ত ছুটকো হানাহানির আকাশ-সীমানা ফুঁড়ে কোহলি নিজের স্বতন্ত্র দিগন্ত সৃষ্টি করে নিয়েছেন বহু দিন হল। আইপিএলের ক্লাব পরিসর কিংবা দেশের সীমান্ত কাঁটাতার–এ সমস্ত গৌণ এখন। বর্তমানে তিনিই এক ও অদ্বিতীয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট-নেতা। যাঁর গ্রহণযোগ্যতা ও আকর্ষণ ভুবনজোড়া। এই যে, বৃহস্পতিবার সন্ধেয় ইডেনে যুযুধান হবে আরসিবি-কেকেআর, কেকেআরকে হৃদয়ে রেখে বিরাট-বানভাসি শহর হবে না নাকি? আলবাত হবে। নইলে ক্লাবহাউস গেটের সামনে অপেক্ষমান গিজগিজে ভিড়টা মিথ্যে, মিথ্যে বিরাট-দর্শন মাত্র তাদের আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে মেঘমন্দ্র সমর্থনের মন্ত্রপাঠও।
শোনা গেল, কলকাতা আসার পর থেকে ফুরফুরে রয়েছেন কোহলি। কিছু দেখা গিয়েছে, কিছু কানে এসেছে। ভারতীয় দলের প্রাক্তন বোলিং কোচ ভরত অরুণকে (যিনি আবার বর্তমানে নাইটদের (Kolkata Knight Riders) বোলিং কোচও বটে) ইডেনে দেখে যে ভাবে হালকা নাচতে নাচতে এগিয়ে গেলেন কোহলি, সেটা দৃশ্যমান। আবার ইডেনের প্র্যাকটিস পিচ দেখে তাঁর পুলক-প্রকাশের খবরাখবর শোনা। বুধবার আরসিবি টিম লাঞ্চ ও ডিনার–দু’টোই রেখেছিল। এবং সেখানেও কিং কোহলিকে যথেষ্ট ঝরঝরে লেগেছে। অবশ্য উইলো দিয়ে একপেশে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স শাসনের পর প্রাণবন্ত না থাকাই অস্বাভাবিক।
আর ইডেন তো অকাতরে দিয়েওছে তাঁকে। বছর কয়েক আগে এই ইডেনেই এবি ডে’ভিলিয়ার্সের সঙ্গে জুটি বেঁধে নাইট-শাসনের ইতিহাস আছে। দীর্ঘ তিন বছরের রান-নিঃসঙ্গতা পূর্ববর্তী শেষ টেস্ট সেঞ্চুরি ইডেনে। দুঃসময়ের মধ্যেও একটা টি-টোয়েন্টি হাফসেঞ্চুরি আছে। কেকেআরের হাতে বিরাটকে থামানোর দু’টো রাস্তা। এক, লকি ফার্গুসন পুরো ফিট থাকলে তাঁর এক্সপ্রেস গতির সামনে ফেলে দেওয়া। আর দুই, পাওয়ার প্লে-তেই সুনীল নারিনকে আনা। নারিন আজ ইডেনে দেড়শোতম আইপিএল ম্যাচ খেলবেন। আন্দ্রে রাসেল একশোতম। কিন্তু পারিপার্শ্বিকে কোহলি নিয়ে কুচকাওয়াজ এতটাই যে, বাকি সব বড় বর্ণহীন। অথচ তিন বছর পর আইপিএল ফিরছে শহরে। তিন বছর পর ইডেনে কেকেআর। আরসিবিকে তাদেরও এই ইডেনেই ৪৯ অলআউট করে দেওয়ার মতো গর্বের রেকর্ড আছে। কিন্তু সে সব দেখছে কে? শুনছে কে?
উল্টে প্রেস কনফারেন্সে রাশি-রাশি চিমটি কাটা প্রশ্ন। চন্দ্রকান্ত স্যর, এবারের আইপিএলে সবচেয়ে অনভিজ্ঞ ব্যাটিং অর্ডারের প্রথম ছয় কেকেআরের, কিছু বলবেন? বিরাট গনগনে ফর্ম নিয়ে শহরে ঢুকেছেন, কী ভাবে থামাবেন? কেকেআরের ‘পণ্ডিতমশাই’ মাঠে যতটা কঠোর, মাঠের বাইরে ততটা অমায়িক। একগাল হেসে বললেন, ‘‘বিরাটকে কী ভাবে থামাব, সেটাকে এখন কী করে বলি বলুন? আর এটা বলে আমাকে আর বিরাটকে চাপে ফেলে দিচ্ছেন আপনারা।’’
তিনটে জিনিস এক্ষেত্রে বলার মতো। এক, নেটে এ দিন নারিন-ভেঙ্কটেশকে নতুন বলে ব্যাটিং করিয়ে রাখা হল। দুই, লকি ফার্গুসন নেমে যেতে পারেন। তিনি ফিট। আর তিন, পণ্ডিত সহ কেকেআর মনে করে, পাঞ্জাব ম্যাচে হারাটা নিতান্ত দুর্ভাগ্য। বৃষ্টিতে খেলা পণ্ড হওয়া পর্যন্ত কেকেআর প্রবল ভাবে ম্যাচে ছিল। কিন্তু তার পরেও একটা কিছু লাগবে। লাগবে অদৃশ্য এক চালিকাশক্তি, অফুরান পজিটিভ এনার্জি যা সরবারহ করবে অহরহ। পাঞ্জাব কিংস আর আরসিবি এক নয়। ঠিক আছে, খুব সম্ভবত তো আসছেন তিনি। ইডেনের ‘বি’ ব্লকে যাঁর আসা নিয়ে তোড়জোড় শুরু হল। যেখানে দাঁড়িয়ে শহরের দিকে অবিরাম হাত নাড়েন তিনি. ছুঁড়ে দেন উড়ন্ত চুম্বন। কে?কে আর– পাঠান! নাম যাঁর শাহরুখ খান!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.