রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়: সময় বিচারে দশ দিনেরও কম সময়ে শুরু হতে চলা আইপিএলের আগে নাইট বিশ্বাসের জপমন্ত্রটা কী? কোন বিষয়টাই বা টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচের আগে কেকেআরকে প্রভূত ভরসা জোগাচ্ছে? ইয়ন মর্গ্যান-প্যাট কামিন্সদের একদম টুর্নামেন্ট শুরুতেই ঢুকে পড়া? উত্তর অসম্পূর্ণ। আমিরশাহী ট্রেনিংয়ে টিমের শারীরিক ও মানসিক ফিটনেস? কিছুটা। পুরোটা নয়। আসল হল ফর্ম। দুই ক্যারিবিয়ান সুনীল নারিন এবং আন্দ্রে রাসেলের সাম্প্রতিক ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগের ফর্ম। যা শুধুমাত্র ২৩ সেপ্টেম্বর মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ম্যাচের আগে নাইট শিবিরে বিশ্বাসের ঝাড়বাতি জ্বালানোর পাশাপাশি টুর্নামেন্টজুড়ে আশাবাদের আগাম ফুলকি ছোটাচ্ছে।
আর পাঁচটা বছর হলে সিপিএল ফর্ম আইপিএলের (IPL) পারফরম্যান্সের পূর্বাভাস মানদণ্ড হিসেবে ব্যবহার করা যেত না নির্ঘাত। কিন্তু বর্তমান করোনা অধ্যুষিত ক্রিকেট সমাজে যেভাবে হাতে গোনা দু’একটা টুর্নামেন্ট চলছে, তাতে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের ধারণা হল আসন্ন আইপিএলে প্রভূত্ব করবে তারাই, যারা খেলেটেলে আসছে। কারণ ভারতীয় ক্রিকেটাররা পাঁচ মাসের লকডাউনে ব্যাট-বল ছুঁয়েও দেখতে পারেননি। সেদিক থেকে নারিন এবং রাসেল, দু’জনে গনগনে ফর্ম দেখাচ্ছেন। নারিন সিপিএল (CPL) ম্যাচ খেলেছেন পাঁচটা। রান করেছেন ১৪৪। হাফসেঞ্চুরি ২। গড় ২৮.৮। স্ট্রাইক রেট ১৪৮! উইকেট গোটা ছ’য়েক। কিন্তু অবিশ্বাস্য ইকনমি ৪.৫৫! রাসেল আবার ৯ ম্যাচ খেলে রান করেছেন ২২২। হাফসেঞ্চুরি তিনটে। গড় ৪৪ প্লাস, স্ট্রাইক রেট ১৪১! যে হিসেবপত্র রোহিত শর্মার মুম্বই ম্যাচের আগে নাইটদের পেশি আস্ফালনে উদ্যত করছে!
“কত বড় অ্যাডভান্টেজ ভাবুন। কোনও ক্রিকেটার এখন ম্যাচ প্র্যাকটিস নিয়ে আইপিএল খেলতে এলে, সেটা বিশাল প্লাস। সেখানে নারিন-রাসেল তো অবিশ্বাস্য খেললল পুরো সিপিএলটা,” আমিরশাহী থেকে ‘সংবাদ প্রতিদিন’কে সাক্ষাৎকারে বলছিলেন কেকেআর (KKR) মেন্টর ডেভিড হাসি। সঙ্গে দ্রুত যোগ করলেন, “রাসেলকে তিন নম্বরে খেলাতে পারলে সেটা সেরা হবে। সেক্ষেত্রে মর্গ্যান ফিনিশারের কাজটা করবে। তবে এসব সিদ্ধান্ত সবাই মিলে বসে নেওয়া হবে। এটুকু বলতে পারি নারিন-রাসেলের ফর্ম আশীর্বাদ আমাদের কাছে। কেকেআর এর ফলে এগিয়েও থাকবে অনেক।” টিমের ফিটনেস গ্রাফ, মনন– সবকিছু নিয়েই যাঁর গলা বেশ সন্তুষ্ট শোনাল। “আমি তো দেখলাম প্র্যাকটিস। কাল ম্যাচে নামিয়ে দিন, কোনও অসুবিধে হবে না। এই যে কুলদীপ যাদব, ওর গতবারের পারফরম্যান্স নিয়ে কত কথাই হচ্ছে। একটা প্র্যাকটিস ম্যাচে তো খেলল, স্রেফ উড়ছে ছেলেটা। এক একটা স্লাইডার দিচ্ছে, যা খেলা যাচ্ছে না। তা হলে?”
সব ঠিক আছে। কিন্তু এবার তো শুরুতেই রোহিত শর্মার মুম্বই। ঐতিহাসিকভাবে যে টিম বছরের পর বছর কেকেআরের সামনে অভিশাপ হিসেবে পেশ করেছে নিজেদের। তারা একেবারে প্রথম ম্যাচে। “তো? কে বলতে পারে এবার কী হবে? মনে রাখবেন, মুম্বই এবং কেকেআর দু’টো টিমই কিন্তু এবার নতুনভাবে শুরু করবে। তাছাড়া ওদের লাসিথ মালিঙ্গা নেই। যা শুধু কেকেআর নয়, সমস্ত টিমের সুবিধে। ওরা দারুণ টিম নিঃসন্দেহে। এটাও জানি, ওদের থামাতে গেলে আমাদের সেরাটা বার করে আনতে হবে। কিন্তু আমরা ঠিকঠাক খেললে, সম্ভব। পুরো টুর্নামেন্টজুড়ে দাপট দেখানোই সম্ভব।” গড়গড়িয়ে বলে চলা নাইট মেন্টরের কথাবার্তা শুনলে মনে হয়, এ এক সম্পূর্ণ অন্য কেকেআর। যাদের সঙ্গে গতবারের দুর্দশা-বিতর্কে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়া নাইট শিবিরের কোনও মিলই নেই। না থাকলেই ভাল!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.