শিলাজিৎ সরকার: দুজনে এখন এক দলের জার্সিতে। একজন আগুনে ফর্মে, আরেকজন এখনও চেনা ছন্দ খুঁজে বেড়াচ্ছেন। তবে দুজনের মধ্যে একটা দুর্ভাগ্যজনক মিল রয়েছে। পন্থ আর পুরান, দুজনের জীবনেই নেমে এসেছিল ভয়ানক দুর্ঘটনা। ক্রিকেট কেরিয়ার তো বটেই, স্বাভাবিক জীবনযাপনও শেষ হয়ে যেতে পারত। না, এখানেই শেষ নয়। আরও একটা মিল আছে। দুজনেই লড়াই থামাননি। দুজনেই কামব্যাক করেছেন জীবন ও ক্রিকেটের বাইশ গজে। কলকাতায় এসে লখনউ সুপার জায়ান্টসের অধিনায়ক ঋষভ পন্থ ও নিকোলাস পুরান মুখ খুললেন নিজেদের জীবনের উত্থানপতন নিয়ে।
রাত পোহালেই কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিরুদ্ধে মহারণ। সেখানে নজরে থাকবেন পন্থ। একেবারেই রানের মধ্যে নেই তিনি। যা নিয়ে প্রবল সমালোচনা। অন্যদিকে লখনউ ব্যাটিংকে টানছেন নিকোলাস পুরান। তাঁর যখন ১৯ বছর বয়স, তখন ভয়ানক গাড়ি দুর্ঘটনার মুখোমুখি হয়েছিলেন। প্রায় ছ’মাস হুইলচেয়ারে থাকতে হয়েছিল। সদ্য তখন অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলে সুনাম হচ্ছে। তার মধ্যেই সংশয়ে পড়ে যায় ক্রিকেট কেরিয়ার। টানা ১২ দিন হাসপাতালে থাকতে হয়েছিল। সেই পুরান এখন বলছেন, “আমার জীবন ঘটনাবহুল। ১৯ বছর বয়সে আমি ক্রিকেটে আঁকড়ে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখতাম। কিন্তু অ্যাক্সিডেন্টে অনেককিছু বদলে গিয়েছিল। হাসপাতালে জ্ঞান আসার পর শুধু নিজের স্বপ্নের কথা ভাবতাম। আজ আমি বলতে পারি, সেই স্বপ্ন অনেকটাই পূর্ণ হয়েছে।”
আর পন্থের গল্প তো রূপকথার থেকে কম কিছু নয়। ২০২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর তাঁর গাড়ি দুর্ঘটনার খবরে শিউরে উঠেছিল ক্রিকেটবিশ্ব। মৃত্যুর মুখ থেকে কোনওক্রমে রক্ষা পান ঋষভ পন্থ। দীর্ঘদিন হাসপাতালে থাকতে হয় তাঁকে। একাধিক অস্ত্রোপচার করতে হয়। তারপর ধীরে ধীরে সুস্থ হতে শুরু করেন তিনি। ক্রাচ নিয়ে চলতে হত তাঁকে। খেলতে পারেননি একাধিক টুর্নামেন্ট। বলা যায়, গতবার আইপিএল থেকে তাঁর প্রত্যাবর্তনের গল্প শুরু।
সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে পন্থ বলছেন, “ছোট থেকেই আমি নিজের সব কাজ নিজেই করে এসেছি। কিন্তু অ্যাক্সিডেন্টের পর নড়তেই পারতাম না। সেই সময়টার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া কঠিন ছিল। কারণ সবকিছুতেই অন্যের সাহায্য নিতে হত। তবে আমি নিজেকে বুঝিয়েছিলাম, এই সময়টা লম্বা হবে। আমাকে ধৈর্য হারালে চলবে না।”
এখনও রোজ সকালে উঠে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দেন। আর নিজের কাজটা মন দিয়ে করতে ভালোবাসেন। স্পষ্টতই এখন তাঁর সমস্ত নজর ফর্মে ফেরায়। কে কী বলছেন, তাতে কানই দিতে রাজি নন। আরও কিছু বিষয় খেয়াল রাখেন তিনি। যেমন পন্থ নিজেই বলছেন, “আশপাশের মানুষের জন্য ভালো কিছু করার চেষ্টা করি। পড়তে ভালোবাসি। নতুন নতুন বিষয় জানার চেষ্টা করি।” বিভিন্ন সংস্কারেও বিশ্বাস করেন। যেমন নিজেই জানালেন, বাঁ পা আগে দিয়ে মাঠে ঢোকেন। ক্রিকেট দুনিয়ায় বহু ক্রিকেটারের এরকম সংস্কার আছে। তবে কিছুটা রসিকতার সঙ্গেই লখনউ অধিনায়ক জানান, “সৌরভ স্যরের অনেক সংস্কারের কথা শুনেছি। তবে আমার তত নেই।”
আর ক্রিকেটার না হতে পারলে? বিকল্প রাস্তাও খুলে রাখছেন তিনি। পন্থ বলছেন, “ক্রিকেটার না হলে টেনিস প্লেয়ার হতাম। খেলাটা এখন ভালো খেলতে পারি না। তবে প্র্যাকটিস করলে উন্নতি করব।” শুধু ক্রিকেট নয়, ফুটবল নিয়েও মতামত দিলেন পন্থ। তিনি বলছেন, “আমি মেসিকে পছন্দ করি। কিন্তু আমার মনে হয় রোনাল্ডোর থেকে অনেক বেশি শেখার আছে।” লড়াইয়ের মন্ত্রও কি সেখান থেকেই শিখেছেন? ক্রিকেটভক্তরা তাঁর ব্যাটে ঝড় দেখতেই অভ্যস্ত। আবার সেটাই দেখতে চান তাঁরা। জীবনযুদ্ধ জয় করে এসেছেন, ক্রিকেটের লড়াইয়েও নিশ্চিতভাবে জিতবেন। আর নাইট রাইডার্সের বিরুদ্ধে যদি পন্থ-পুরান ঝড় একসঙ্গে ওঠে, সেটা তো একপ্রকার জীবনের জয়গানও হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.