Advertisement
Advertisement

Breaking News

Harshit Rana

বাবার লড়াইয়ে স্বপ্নপূরণ হর্ষিতের, জেদ আর সাধনায় নতুন লক্ষ্যের দিকে ছুটছেন নাইট পেসার

'নিজের উপর বিশ্বাস রাখতে পারলে, সব কিছু করা যায়', হর্ষিতকে প্রতিনিয়ত উদ্বুদ্ধ করে বাবা প্রদীপ রানার কথা।

IPL 2025: KKR pacer Harshit Rana opens up about his struggle before LSG match

হর্ষিত রানা। ফাইল চিত্র

Published by: Arpan Das
  • Posted:April 8, 2025 11:56 am
  • Updated:April 8, 2025 1:41 pm  

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়: ট্রাকের সিএনজি ট‌্যাঙ্ক ফেটে আহত দুই।

গরীব-গুর্বোদের পুনর্বাসনের উদ্দেশ‌্যে আড়াই হাজার ফ্ল‌্যাটের মেরামতির কাজ শুরু করল ‘দিল্লি আরবান শেল্টার ইমপ্রুভমেন্ট বোর্ড’।

Advertisement

নয়াদিল্লির প্রান্তিক গ্রামে বাস ডিপো তৈরি করার কথা ভাবছে সরকার। ইতিমধ‌্যে দরপত্র নেওয়াও শুরু হয়ে গিয়েছে।

গুগলে ‘ঘেবরা’ দিয়ে সার্চ দিলে আসছে যা যা, লিখে দিলাম উপরে। কোনওটা গত মার্চ মাসের। কোনওটা বছর দেড় কিংবা দুই পুরনো। যা দেখলে অনুধাবন করতে সময় লাগে না যে, রাজধানীর অন্তিম এলাকায় অবস্থিত এ গ্রামকে নিয়ে লোকের বিশেষ হেলদোল নেই। খরচ করার মতো সময় নেই। আর তার সুবিধে-অসুবিধে নিয়ে সাংবাদিকের নিয়মিত লেখালেখির প্রসঙ্গই অবান্তর! ভারতবর্ষের অজ্ঞাতকুলশীল গ্রামগঞ্জ নিয়ে ভাববে কে? তা নিয়ে লিখলেও বা পড়বে কে?

অষ্টাদশ আইপিএলের (IPL 2025) মধ‌্যিখানে নয়াদিল্লির ঘেবরা গ্রাম নিয়ে গোটা চারেক অনুচ্ছেদ লেখার প্রয়োজন পড়ত না, যদি না বছর তেইশের এক যুবক সে অঞ্চল থেকে ভারতীয় ক্রিকেটের ঐশ্বর্যমণ্ডিত পথে রাতারাতি আবির্ভূত না হতেন! যদি না তাঁর সিআরপিএফে কর্মরত পিতা (বর্তমানে প্রপার্টি ডিলার) প্রতিদিন ভোর চারটেয় ছেলেকে ঘুম থেকে টেনে না তুলতেন, ঘণ্টায় দেড়শো কিলোমিটার গতিতে বল করানোর অভিলাষে! ঘেবরা নিয়ে লেখার আজ কোনও দরকারই পড়ত না, যদি না সেই লম্বা-দোহারা যুবার মধ‌্যে প্রতিভার বিচ্ছুরণ দেখতে পেতেন নীতীশ রানা! ঘেবরা নিয়ে বোধহয় জীবদ্দশায় কোনওদিনই লেখার দরকার পড়ত না, যদি না সেই ছ’ফুট তিন ইঞ্চির ডাকসাইটে যুবক পিতার প্রথম শর্ত পূর্ণ করে দ্বিতীয় স্বপ্নপূরণের উদ্দেশ‌্যে আলোকবেগে ধাবিত না হতেন!

রানা। ছেলেটার নাম, হর্ষিত রানা (Harshit Rana)!

“বাবার দু’টো ইচ্ছে, জানেন। একটা পূর্ণ হয়েছে, আর একটা বাকি। বাবা চাইতেন, আমি যেন ঘণ্টায় দেড়শো কিলোমিটার গতিবেগে একদিন বোলিং করি। ইংল‌্যান্ডের বিরুদ্ধে সেটা করে দিয়েছি। দ্বিতীয়টা এখনও বাকি রয়েছে। লর্ডসে বসে আমাকে টেস্ট খেলতে দেখা,” সোমবার বাইপাসের ধারের টিম হোটেলে বসে বলার সময় দেখলাম, স্মিত হাসি হর্ষিতের মুখে। দেখলে কে বলবে, মাঠে নামলে এ ছেলেই সম্পূর্ণ বিপরীত। হর্ষিতের আগ্রাসন, তাঁর ফ্লাইং কিস সেলিব্রেশন কম ‘টুইটার সেনসেশন’ হয়েছে নাকি আজ পর্যন্ত? দ্রুত জিজ্ঞাসা করি হর্ষিতকে, পেসারের আগ্রাসন কি এতই জরুরি? শান্ত থাকলে চলে না? উত্তরে পুনরায় চিলতে হাসিতে হর্ষিত বলেন, “পেসারের আগ্রাসন ছাড়া কী করে চলবে, স‌্যর?”

IPL 2025: KKR pacer Harshit Rana opens up about his struggle before LSG match

কিন্তু কোথা থেকে এ হেন আগ্রাসনের উদ্ভাবন, এ ভয়াল গতিবেগের জন্ম, অনুধাবন করতে গেলে ‘হান্ড্রেড অ‌্যান্ড ফিফটি কিলোমিটার্স পার আওয়ার, আ ড্রিম’ নামক এক উপন‌্যাসের অন্দরমহলে যেতে হবে! ঘুরতে হবে তার অলি-গলিতে, প্রত‌্যক্ষ করতে হবে অখ‌্যাত এলাকা থেকে উঠে আসা এক লড়াকু যুবকের উত্থান-পতন। জাঠ অধ‌্যুষিত ঘেবরা গ্রাম থেকে হর্ষিতের পূর্বে কখনও আন্তর্জাতিক মানের কোনও ক্রিকেটার আসেননি। তিনিই প্রথম। এবং সেটাও হত না, যদি না প্রদীপ রানা ছেলেকে নিয়ে আদাজল খেয়ে লেগে থাকতেন শৈশব থেকে।

“ভোর চারটেয় তুলে দিতেন বাবা। ইচ্ছে করত না। কিন্তু উনি জোর করে আমাকে মাঠে নিয়ে যেতেন। বাবা অসম্ভব দূরদৃষ্টিসম্পন্ন, জানেন? উনি আমার সামনে একটা লম্বা রাস্তা দেখতে পেয়েছিলেন। বাবা একটা কথা খুব বিশ্বাস করেন। উনি বলেন যে, কেউ যদি কোনও জিনিস নিয়ে দিনের পর দিন পড়ে থাকে, তা হলে ঈশ্বরও তাকে তার অভীষ্ট দিয়ে দেন,” এবার যেন ঈষৎ আবেগতাড়িত লাগে হর্ষিতকে। এবং দীর্ঘদেহী পেসারের শিরা-উপশিরায় আগ্রাসনের আগমনও পিতা প্রদীপের হাত ধরে। আসলে ছোটবেলায় ক্লাব ক্রিকেট খেলতে গিয়ে, মাঝেসাঝে প্রতিপক্ষ ব‌্যাটারদের দেখে ভেতরে ভেতরে ভয় পেতেন হর্ষিত। বাবাকে এসে বলতেন, “আজ না অমুক খেলবে। রনজি প্লেয়ার!” প্রত‌্যুত্তরে সিনিয়র রানা ছেলেকে পাল্টা বলতেন, “যদি তুমি বিপক্ষের বাঘা বাঘা ব‌্যাটার নিয়ে পড়ে থাকো, যদি ভাবতে থাকো যে উল্টোদিকে অমুক আছে, তমুক আছে, তোমার পক্ষে ক্রিকেট খেলা আর সম্ভব হবে না। নিজের উপর বিশ্বাস রাখতে পারলে, সব কিছু করা যায়। কিন্তু সবার আগে সেটা তো করতে হবে!”

শিহরিত লাগে শুনলে। এ দেশে ক্রিকেট খেলা, ক্রিকেট নিয়ে স্বপ্ন দেখা, দেশের শ্রেষ্ঠ এগারোয় জায়গা করে নেওয়া, সহজ নয়। কিন্তু সাফল‌্য প্রাপ্তির অক্লান্ত ইচ্ছে আর নির্নিমেষ ক্ষুধা থাকলে এ পৃথিবীতে আজও কী করা যায়, তার জলজ‌্যান্ত উদাহরণ ঘেবরার পিতা-পুত্র। প্রদীপ রানা এবং হর্ষিত রানা। একটা সময় গিয়েছে, সাত-আট বছর বলার মতো কিছু করতে পারেননি হর্ষিত। চোখের সামনে দেখতেন, সমসাময়িকদের কেউ কেউ বড় পর্যায়ে সুযোগ পেয়ে খেলতে চলে যাচ্ছেন। তীব্র হতাশায় আক্রান্ত হয়ে বাবাকে বলতেন, “সবাই তো সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে। আমার কী হবে বাবা?” পিতা প্রদীপ একটাই কথা বলতেন ছেলেকে। বলতেন, “জিস দিন বেটা তু দেড়শো কিলোমিটার পে ডালেগা, তুঝে কোই নহি রোক পায়েগা!”

IPL 2025: KKR pacer Harshit Rana opens up about his struggle before LSG match
ছবি: দেবাশিস সেন।

অভীষ্টের প্রতি একাগ্রতা ঠিক কতটা থাকলে, নিত‌্য এ মন্ত্রোচ্চারণ ছেলের সামনে করা যায়? শুনলাম, হর্ষিতের ছোট থেকে শোয়েব আখতারের গতিশীলতার প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়ার নেপথ‌্যেও তাঁর বাবা। “বাবা বলতেন এত জোরে তোমাকে বোলিং করতে হবে যে, যাতে তোমাকে কেউ থামাতে না পারে! কেউ খেলতে না পারে!” কিন্তু শোয়েবের ভক্ত হয়ে এমন মারাত্মক স্লোয়ার কোথা থেকে আমদানি করলেন? যদ্দুর জানি, শোয়েব তো স্লোয়ার-টোয়ার দিতেন না! আবার হেসে ফেলেন হর্ষিত। বলেন, “স্লোয়ার তো দিতেই হবে। আজকালকার ক্রিকেট অনেক বদলে গিয়েছে। এখন খেলতে হলে, ভালো স্লোয়ার হাতে থাকা জরুরি।”

পরবর্তীতে হর্ষিতের কাঁধে ভরসার হাত রেখেছেন অনেকে। যেমন নীতীশ রানা। গৌতম গম্ভীর। জসপ্রীত বুমরা। বিরাট-রোহিত। বছর কয়েক আগে নীতীশই তাঁকে প্রথম আবিষ্কার করেন বলতে গেলে। সেই সময় যিনি কেকেআরে। নীতীশ তৎকালীন কেকেআর সহকারি কোচ অভিষেক নায়ারকে ফোন করে বলেন, হর্ষিতকে একবার দেখা যেতে পারে। শেষে বছর তিন আগে রশিক সালাম চোট পেয়ে ছিটকে যাওয়ায় হাতে কেকেআর জার্সি পান হর্ষিত।

“নীতীশ ভাই আমাকে পুশ স্টার্ট দিয়েছিল। যেখান থেকে আমি কিছু একটা হতে পারি। একটা স্বপ্ন দেখতে পারি। কেকেআরে ডাক পাওয়ার দিন আমি কেঁদে ফেলেছিলাম।” তাই? তা হলে ভারতীয় টিমে ডাক পাওয়ার দিন কী করেছিলেন? “সে দিন বাবা কেঁদে ফেলেছিলেন,” অকপটে এবার বলেন দিল্লি পেসার। গত আইপিএলে গম্ভীর কেকেআর মেন্টর হয়ে আসার পর হর্ষিতের ক্রিকেটীয় উত্তরণ পরবর্তী পর্যায়ে পৌঁছোয়। ভারতীয় ক্রিকেটের ‘ডাবল জি’ তাঁকে বোঝান যে, টি-টোয়েন্টিতে একদিন তুমি চার ওভারে ৬০ রান দিতে পারো। আবার একদিন চারটে উইকেটও নিতে পারো। কিন্তু বুঝতে হবে, ক্রিকেটে সব দিন সমান যায় না। তাই চার ওভারে ৬০ গললে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে পড়লে চলবে না। আবার চার উইকেট নিয়ে ভাবলে চলবে না যে, দারুণ কিছু করে ফেলেছি! “ক্রিকেটকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গিই আমার বদলে দিয়েছিলেন গৌতম ভাইয়া (গৌতম গম্ভীর),” বলতে থাকেন হর্ষিত। কিন্তু এই যে দুর্জনেরা বলে, নেপথ‌্য গম্ভীর না থাকলে তাঁর এত দ্রুত দেশের হয়ে তিনটে ফর্ম‌্যাট খেলা হত না? খারাপ লাগে না তখন? “এ সমস্ত নিয়ে আমি ভাবি না। ভারতের হয়ে যে ক’টা ম‌্যাচ খেলেছি, পারফর্ম করেছি। আমি বিশ্বাস করি, লোকের কথায় কান না দিয়ে, পারফরম‌্যান্স দিয়ে জবাবটা দাও,” নিরুত্তেজ গলায় এবার জবাব আসে।

IPL 2025: KKR pacer Harshit Rana opens up about his struggle before LSG match
হর্ষিত রানা। ফাইল চিত্র

ওহ্, দেখুন দেখি। বুমরাহরটাই এতক্ষণ বলা হল না। শুনলাম, অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট খেলতে খেলতে হর্ষিতকে একটা কথা বলেছিলেন তিনি। বলেছিলেন, “সব সময় স্কোরবোর্ডের দিকে খেয়াল রাখবে। যদি দেখো, তোমার ইকোনমি রেট দুইয়ের নিচে, তার মানে তুমি ভালো বোলিং করছো। না হলে করছো না। মাথায় রাখবে, তোমার ইকোনমি ভালো থাকলে সেটা টিমের এবং তোমার– দুইয়ের পক্ষেই ভালো। আর তাতে তোমার উইকেট পাওয়ার সুযোগও বাড়বে আরও।’’

কিন্তু তার পরেও কোথাও গিয়ে মনে হয়, হর্ষিতের উপাখ‌্যানে নীতীশ-গম্ভীর-বুমরাহ এঁরা নিছক পার্শ্বচরিত্র মাত্র। মুখ‌্য চরিত্র আদতে দুই, শুধুই দুই। যাঁরা পিতা-পুত্র কিংবা দ্রোণ-একলব‌্য! যাঁদের অদম‌্য জেদ আর একনিষ্ঠ সাধনা কোনও এক ঘেবরা গ্রামকে ভারতীয় ক্রিকেটের মানচিত্রে সসম্মানে জায়গা ছেড়ে দিয়েছে!

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement