দেবাশিস সেন, আমেদাবাদ: ক্রিকেটের চারণভূমিতে জীবন্ত বিগ্রহের রূপ পরিগ্রহ করে অনুরাগীদের হদয়পদ্মাসনে বিরাজ করেছেন, ভালবাসার অর্ঘ্য লাভ করেছেন। এমন ক্রিকেটব্যক্তিত্ব বলতে কার কথা মনে পড়ে? ক্রিকেট অনুরাগীদের মুদিত চোখে এক মুহূর্তে ভেসে উঠবে শচীন তেণ্ডুলকরের মুখ। আর? অন্য কোনও নাম? ক্রিকেট অনুরক্ত কাউকে জিজ্ঞাসা করুন, নিঃসন্দেহে তার মানস কল্পনায় ভাস্বর হবেন যিনি, তাঁর নাম মহেন্দ্র সিং ধোনি (MS Dhoni)।
ক্রিকেটীয় লোকগাথায় তিনি চলমান কিংবদন্তি। এক অনন্য আবেগের স্ফুলিঙ্গ। ক্রিকেট পাগল এক অপেক্ষমান জাতিকে বিশ্বকাপ নামক অমৃতকুম্ভের সন্ধান দিয়ে যার অভিযাত্রা শুরু তারপর ক্রিকেটের রাজপথে যত সাফল্যের হীরকখণ্ড সঞ্চয় করেছেন ধোনি, ততই রক্তমাংসের ক্রিকেটব্যক্তিত্ব থেকে তিনি উন্নীত হয়েছেন দেবত্বের দেউলে। রবিবারের আহমেদাবাদ, ১,৩২,০০০ দর্শকাসন বিশিষ্ট মোতেরার গমগমে স্টেডিয়াম কি সেই মহীরুহকে অর্ঘ্যপ্রদানের শেষ ক্রিকেটীয় মঞ্চ? আইপিএলের ফাইনালের আগের দিন আমেদাবাদ জুড়ে ধোনি-আবেগের বিকিরণ দেখলে সেটাই মনে হতে বাধ্য।
সাফল্যময় কেরিয়ারে এই আইপিএল (IPL 2023) ধোনির ক্রিকেট-অভিযানের শেষ ‘স্টেশন’। টুর্নামেন্ট শুরুর প্রাক্কালে এই আশঙ্কাকে সঙ্গী করেই মাহি-উদযাপনের মঞ্চ প্রস্তুত করেছিলেন ক্রিকেট অনুরাগীরা। ধোনির মন্তব্য কখনও কখনও সেই আশু-কল্পনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তাই তো আইপিএলের ম্যাচ খেলতে ভারতের যে প্রান্তেই পা রাখুন না কেন, সেই স্টেডিয়াম আচ্ছন্ন থেকেছে ধোনি-আবেগে, হয়ে উঠেছে সিএসকে-সুলভ হলুদময়। ব্যতিক্রম নয় ফাইনালের মঞ্চও। একে তো ‘হোম টিম’ গুজরাট টাইটান্স (Gujarat Titans) ফাইনাল খেলছে। টানা দ্বিতীয়বার আইপিএল জয়ের হাতছানি হার্দিকদের সামনে। ‘ঘরের ছেলে’দের ঘিরে বাড়তি আবেগ, উত্তেজনার অ্যাড্রিনালিন ক্ষরণ হবে সেটাই প্রত্যাশিত। কিন্তু ধোনি-আবেগের লাভাস্রোতে চাপা পড়ে গিয়েছে সে’সব কিছুই। কে বলবে, দু’দলে ফাইনালের রংবদলে দেওয়ার মতো চরিত্রের অভাব নেই।
গুজরাট টাইটান্সের ব্যাটিং দেখুন। শুভমান গিল (Subhman Gill) নামক এক ব্যাটিং-যোদ্ধা উদীয়মান। চলতি আইপিএলে যাঁর নামের পাশে ৮৫১ রান। তিনটি সেঞ্চুরির শেষতমটি এসেছে ফাইনালে ওঠার ‘কোয়ালিফায়ারে’। যে শতরানের তাণ্ডবলীলায় সমাহিত হয়েছে পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন মুম্বই ইন্ডিয়ান্স (Mumbai Indians)। ইতিমধ্যে ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ হিসাবে তিনি নিজেকে চিনিয়ে দিয়েছেন জগৎ-মাঝারে। রবিবাসরীয় মোতেরায় ধোনি-আবেগের স্ফুলিঙ্গকে তিনি নিভিয়ে দিতেই পারেন ব্যাটিং-বিক্রমে। বোলিংয়ে মহম্মদ শামি-রশিদ খান-মোহিত শর্মার মিলিত উইকেট সংখ্যা ৭৯। যা আইপিএল জুড়ে গুজরাট-বোলার ত্রয়ীর দাপট বোঝানোর জন্য যথেষ্ট। পালটা জবাব দেওয়ার অস্ত্র মজুত সিএসকে শিবিরেও। ব্যাটিংয়ে ডেভন কনওয়ে থেকে রুতুরাজ গায়কোয়াড়, বোলিংয়ে মাথিশা পাথিরানা থেকে রবীন্দ্র জাদেজা ‘ম্যাচউইনার’ মজুত। কিন্তু সব ছাপিয়ে যেন শুধু প্রতীয়মান ধোনি, বাকি সব মিথ্যে!
বিয়াল্লিশ বছরের এক ক্রিকেটযোদ্ধা তাঁর সাফল্যের মুকুটে আরও একটা পালক যোগের অভিপ্রায়ে মাঠে নামছেন। হয়ত শেষবার। ফাইনালে গুজরাট টাইটান্সকে হারালে পঞ্চমবার আইপিএল জয় করবেন ধোনি (MS Dhoni) ও তাঁর সিএসকে। ভাগ বসাবেন মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের আইপিএল-জয়ের শ্রেষ্ঠত্বে। সেই শেষটুকুকে রাঙিয়ে দিতে যেন কার্পণ্যে নারাজ গোটা আমেদাবাদ। ব্রহ্মমুহূর্তের সঙ্গী হতে হাজির দেশের অন্যান্য প্রান্তের ক্রিকেট অনুরাগীরাও। ইতিমধ্যে টিকিট নিয়ে হাহাকার তুঙ্গে। সকাল ছয়টা থেকে টিকিটের লম্বা লাইন। টিকিট প্রায় নিঃশেষিত। মুম্বই থেকে এক ক্রিকেট পাগলভক্ত তাঁর মাকে সঙ্গে নিয়ে ছুটে এসেছেন ফাইনালের সাক্ষী থাকতে। টিকিটের সন্ধানে হন্নে হয়ে ঘুরছেন। এমন দৃশ্য এক নয়, অনেক।
এর পাশে মাঠের ছবি রাখুন। প্রাক্ ফাইনাল পর্বে চেন্নাই সুপার কিংস (Chennai Super Kings) কিংবা গুজরাট টাইটান্স, আবেগের লাভাস্রোতের ছিটেফোঁটাও নেই। যাঁকে ঘিরে এই উন্মাদনা-সেই সিএসকে অধিনায়ক ধোনি এদিন এলেনই না প্র্যাকটিসে। যেমন এলেন না গুজরাটের হার্দিক পাণ্ডিয়া, গিল। ২০২০, ১৫ আগস্ট। অনুরাগীদের বিদায়ের অর্ঘ্যদানের সুযোগটুকু না দিয়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর ঘোষণা করেছিলেন এমএসডি, আচমকাই। স্তম্ভিত ক্রিকেটবিশ্বকে উপহার দিয়েছিলেন একবুক বিষাদসিন্ধু। রবিবার আইপিএলে ফাইনাল শেষে যদি ‘অগস্ত্য যাত্রা’ই বেছে নেনে ধোনি? সেই আশঙ্কাতেই বিদায়ের অর্ঘ্য-অর্পণের সুযোগ হাতছাড়া করতে চায় না ‘মাহিকুল’। ক্রিকেট বিধাতা কি সেই আকুতি শুনতে পারছেন?
আজ আইপিএলে
চেন্নাই সুপার কিংস বনাম গুজরাট টাইটান্স
আহমেদাবাদ
সন্ধ্যা ৭.৩০
স্টার স্পোর্টস
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.