রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়: প্রাক্তন নাইট কুলদীপ যাদব (Kuldeep Yadav) কেকেআরের (KKR) গত কয়েক বছর ভুলবেন না। প্রাক্তন নাইট কুলদীপ যাদব দিল্লি ক্যাপিটালসের চলতি বছর বহু দিন মনে রাখবেন।
কয়েক বছর আগেও ‘চায়নাম্যান’কে ভারতবর্ষের সেরা স্পিন সম্ভাবনা ধরা হত। সোজা কথা বললে, কুলদীপের বল পড়ে কোন দিকে ঘুরবে, বুঝতেই পারত না ব্যাটার! ভারতীয় টিমে তাঁর সঙ্গে যুজবেন্দ্র চাহালের জুটি নিয়ে চর্চাও চলত প্রচুর। কিন্তু জীবনের মতো ক্রিকেটও যে বড় অনিত্য! সেখানেও চিরদিন কাহারও সমান নাহি যায়! নইলে যে কুলদীপ একটা সময় বিপক্ষের ত্রাস হয়ে উঠেছিলেন, সেই একই স্পিনার ধীরে ধীরে ভারতীয় ক্রিকেটের সৌরজগৎ থেকে বিলুপ্ত হয়ে যান? শাস্ত্রী যাঁকে অতীব সম্ভাবনাময় ধরেছিলেন, সেই একই স্পিনার সব রকম ফর্ম্যাট থেকে বাদ পড়ে যান। টেস্ট। ওয়ান ডে। টি-টোয়েন্টি। আইপিএলেও (IPL 2022) তো। দিনের পর দিন কুলদীপকে ‘ব্রাত্য’ করে বসিয়ে রাখত কেকেআর। খেলাত না। ছেড়েও দিত না। অপরাধ? অপরাধ– মইন আলির কাছে একবার ইডেনে বেধড়ক মার খাওয়া।
গত আইপিএল নিলামের সময় কেকেআর শেষ পর্যন্ত ছেড়ে দিয়েছিল কুলদীপকে। এবং নিলাম থেকে তাঁকে তুলে নিয়েছিল দিল্লি। আর কী আশ্চর্য! ফ্র্যাঞ্চাইজি বদলানোর সঙ্গে সঙ্গে পারফরম্যান্সেও তো কত পরিবর্তন নাইট প্রাক্তনীর। আবার হাত থেকে বেরোচ্ছে সেই বিষাক্ত সব ডেলিভারি, আবার বিভ্রান্ত হচ্ছে ব্যাটার। গুজরাত টাইটান্সের বিজয়শঙ্কর যেমন দিল্লি ক্যাপিটালস ম্যাচে বুঝতেই পারেননি কুলদীপের বল অতটা ঘুরে তাঁর অফস্টাম্প নড়িয়ে দেবে! বাকিরাও যে ধরতে পারছেন, তা নয়। এখনও পর্যন্ত দু’টো ম্যাচ খেলে কুলদীপের উইকেট সংখ্যা ৪। ইকনমি আরও মারাত্মক ৬.২৫! টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে যা কোটি টাকার পারফরম্যান্স।
কিন্তু কী ভাবে হল এই পরিবর্তন? কুলদীপকে আবার পুরনো কুলদীপ দেখাচ্ছে কী করে?
ভারতীয় চায়নাম্যানের ঘনিষ্ঠমহলে খোঁজ চালিয়ে জানা গেল, ফ্লাইট দেওয়াটা আগের চেয়ে অনেক কমিয়ে দিয়েছেন কুলদীপ। বরং রান আপ একটু বাড়িয়েছেন। তাতে গতিটা আসছে। “আসলে ফ্লাইট দিতে গেলে বলের গতি কমাতে হয়। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে আপনাকে তো শুধু উইকেট তুললে চলবে না। একই সঙ্গে রানও আটকাতে হবে। আইপিএলের আগে আমরা দু’জন সেশন করেছিলাম। সেখানে ঠিক হয়, ফ্লাইট দেওয়া বন্ধ করতে হবে। গতি বাড়াতে হবে। যে কারণে রান আপটা আর একটু লম্বা করা দরকার,” সোমবার সন্ধেয় ফোনে বলছিলেন কুলদীপের কোচ কপিল দেব পাণ্ডে। সঙ্গে যোগ করলেন, “আর একটা জিনিস ঠিক করি আমরা। গুগলি দেওয়া নিয়ে। গুগলি এখন কুলদীপ দিচ্ছে স্টাম্প লাইনে। আগের মতো এ দিক ও দিক আর পড়ছে না।”
শোনা গেল, শুধু নিজের পুরনো ফর্ম নয়, কুলদীপের আরও একটা ব্যাপার ফিরেছে– আত্মবিশ্বাস। যা ফিরিয়েছেন দিল্লি ক্যাপিটালস কোচ রিকি পন্টিং। কেকেআরে যা চুরমার হয়ে গিয়েছিল। “দীনেশ কার্তিকের মনে হত কুলদীপের চেয়ে বেটার স্পিনার ওর হাতে আছে। ইয়ন মর্গ্যানের মনে হত। ভাল। তা হলে ছেড়ে দিত। অহেতুক কুলদীপকে যন্ত্রণা দেওয়ার দরকারটা কোথায় ছিল?” বলে দেন কপিল। সঙ্গে শেষে জুড়ে দেন, “পন্টিং সে দিক থেকে প্রথম থেকে বিশ্বাস জুগিয়েছিল কুলদীপকে। বলেছে, তুমি পারফর্ম করার চাপ নিও না। ওটা আমার চিন্তা। শুধু নিজের বোলিংটা করে যাও। একজন ক্রিকেটারের আর কী লাগে? এটা করতে পারত না কেকেআর?”
না, করেনি কেকেআর। তবে দিল্লি করছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.