মুম্বই ইন্ডিয়ান্স: ১৫৫/৭ (তিলক-৫১*, সূর্যকুমার-৩২, মুকেশ-১৯/৩)
চেন্নাই সুপার কিংস: ১৫৬/৭ (রায়ডু-৪০, ধোনি-২৮*, স্যামস-৩০/৪)
৩ উইকেটে জয়ী সিএসকে
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: শেষ ওভারে জেতার জন্য চেন্নাই সুপার কিংসের দরকার ছিল ১৭ রান। অতি বড় চেন্নাই ভক্তও ভাবেননি ম্যাচটা জিততে পারবে সিএসকে। ক্রিজে তখন বহুযুদ্ধের সৈনিক মহেন্দ্র সিং ধোনি এবং প্রিটোরিয়াস। শেষ ওভার করার জন্য রোহিত শর্মা বল তুলে দিলেন জয়দেব উনাদকড়ের হাতে। প্রথম বলেই উনাদকড় ফেরালেন প্রিটোরিয়াসকে। চেন্নাই ভক্তদের হৃদকম্প শুরু হয়ে গিয়েছে তখন। নতুন নামা ব্রাভো দ্বিতীয় বলে এক রান নিয়ে স্ট্রাইক দিলেন ধোনিকে। তৃতীয় বল ধোনি ওড়ালেন গ্যালারিতে। চতুর্থ বল থেকে এল চার রান। পঞ্চম বলে ধোনি নিলেন দু’ রান। আর শেষ বলে বাউন্ডারি মেরে ধোনি চেন্নাই সুপার কিংসকে জিতিয়ে দিলেন। গ্যালারি তখন ফুটছে। এভাবেও যে কেউ জয় এনে দিতে পারেন, তা না দেখলে কারওর পক্ষেই বিশ্বাস করা সম্ভব নয়। মহেন্দ্র সিং ধোনি আরও একবার প্রমাণ করে দিলেন, বয়স থাবা বসালেও এখনও তিনি ফিনিশারই। প্রায় হাত থেকে বেরিয়ে যাওয়া ম্যাচ সিএসকে জিতে নিল তিন উইকেটে। পারল না মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। খলনায়ক বনে গেলেন জয়দেব উনাদকড়। ধোনি তাঁকে মারছেন দেখে একবার অধিনায়ক রোহিত শর্মা এসে ভর্ৎসনাও করে গেলেন। কিন্তু বাকি বলগুলোতেও তিনি সম্মোহিত করতে পারলেন না ধোনিকে। রোহিতকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে হল ম্যাচ নিয়ে চলে যাচ্ছেন ধোনি।
অথচ ড্যানিয়েল স্যামস মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে (Mumbai Indians) জয়ের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। চার-চারটি উইকেট নিয়ে তিনি ভেঙেছিলেন সিএসকে-র (Chennai Super Kings) ব্যাটিং মেরুদণ্ড। কিন্তু শেষ ওভারে সব হিসেব ওলটপালট করে দিলেন একা ধোনি।
বৃহস্পতিবার টস জিতে প্রথমে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে ব্যাট করতে পাঠায় চেন্নাই সুপার কিংস। ২০ ওভারে মুম্বই করে ৭ উইকেটে ১৫৫ রান। জবাবে চেন্নাই সাত উইকেটে ১৫৬ রান করে ম্যাচ জিতে নেয়।
বৃহস্পতিবার রান পেলেন না মুম্বই অধিনায়ক রোহিত শর্মা। খাতা না খুলেই ফিরতে হল হিটম্যানকে। ঈশান কিষাণও ফিরে গেলেন কোনও রান না করেই। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের ইনিংসে কাঁপুনি ধরিয়ে দেন অখ্যাত, অনামী এক বোলার মুকেশ চৌধুরী। ব্রেভিসকে নিয়ে সূর্যকুমার যাদব সদ্য লড়াই শুরু করেছেন, তখনই ফের উইকেট পতন মুম্বইয়ের ইনিংসে। ব্রেভিস (৪) ফিরলেন সেই মুকেশ চৌধুরীর বলে। ২৩ রানে তিন-তিনটি উইকেট পড়ে যায় মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের। দ্রুত ফুরিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে তখন মুম্বই। ঘরোয়া ক্রিকেটের অন্যতম লড়াকু ব্যাটসম্যান সূর্যকুমার যাদব চটজলদি ২১ বলে ৩২ রান করেন। মুম্বইয়ের রান তখন ৪ উইকেটে ৪৭।
পরপর উইকেট যাচ্ছে, এমন পরিস্থিতিতে ক্যারিবিয়ান দৈত্য পোলার্ডকে ব্যাটিং অর্ডারে পিছিয়ে দেওয়া হয়। তিলক ভার্মা অন্য মেজাজে ধরা দেন। চেন্নাই বোলারদের কাছে কিছুতেই বশ মানতে চাননি তিনি। শেষপর্যন্ত ৫১ রানে অপরাজিত থেকে যান তিলক। তাঁর ৪৩ বলের ইনিংসে সাজানো ছিল তিনটি চার ও দুটি ছক্কা। তিলককে সঙ্গত দেন হৃত্বিক শোকিন (২৫)। শেষের দিকে জয়দেব উনাদকড় ৯ বলে ১৯ রান করে অপরাজিত থেকে যান। মুম্বই ইন্ডিয়ান্স করে ৭ উইকেটে ১৫৫ রান।
মুম্বইয়ের রান তাড়া করতে নেমে শুরুতেই ফেরেন চেন্নাইয়ের ঋতুরাজ গায়কোয়াড় (০)। মিচেল স্যান্টনারকে (১১) দ্রুত ফেরান ড্যানিয়েল স্যামস। চেন্নাই সুপার কিংসও শুরুতেই হোঁচট খায়। রবিন উথাপ্পা ও অম্বতি রায়ড়ু ৫০ রানের পার্টনারশিপ গড়েন। উথাপ্পাকে (৩০) ফেরান উনাদকড়। ৬৬ রানে তিন উইকেট হারিয়ে কিছুটা হলেও চাপ অনুভব করতে শুরু করে চেন্নাই সুপার কিংস। উথাপ্পা ও শিবম দুবে ২২ রান জোড়ার পরে ফের উইকেট হারায় চেন্নাই সুপার কিংস। শিবম দুবের (১৩) ক্যাচ শরীর ছুঁড়ে ধরেন মুম্বইয়ের উইকেট কিপার ঈশান কিষান। মোক্ষম সময়ে ফিরে যান ক্রিজে জমে যাওয়া রায়ডু (৪০)। লং অফে দীর্ঘদেহী পোলার্ড তালুবন্দি করেন রায়ডুকে। চাপ বাড়ছিল চেন্নাইয়ের উপরে। রবীন্দ্র জাদেজা (৩) ব্যর্থ হন। সব যখন শেষ বলে মনে হচ্ছে ঠিক তখনই জ্বলে উঠলেন সেই মহেন্দ্র সিং ধোনি। ১৩ বলে ২৮ রান করে অপরাজিত থেকে যান তিনি। হাসতে হাসতে তিনি যখন মাঠ ছাড়ছেন, তাঁকে দেখে তখন মনে হওয়াই স্বাভাবিক, তিনিই আসল রাজা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.