সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ৯ জুলাই ২০১৯। ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০। আর আন্তর্জাতিক নারীদিবসে ভারতীয় প্রমিলাবাহিনীর ৯৯। নয়ের গেরোতেই যেন আটকে গেল ভারতীয় ক্রিকেটের ভাগ্য। এক বছরের মধ্যে তিন-তিনবার স্বপ্নভঙ্গ হল ক্রিকেটভক্তদের। তিন-তিনবার বিশ্বজয়ের কাছাকাছি গিয়েও পথ হারাল ভারতীয় দল।
ক্রিকেটকে এ দেশ ধর্ম বলেই মেনে এসেছে। আর সেই ধর্মে দীক্ষিত ভক্তদের অনেকেই ভেবেছিলেন মার্চেই অকাল দিওয়ালি উদযাপন করবেন। দিল্লির হিংসা, করোনার আতঙ্ক এক নিমেষে ভুলিয়ে দেবে নীল জার্সি গায়ে চাপানো কিশোরী শেফালি বর্মা। গোটা টুর্নামেন্টে যার দাপুটে ব্যাটিং প্রত্যেক প্রতিপক্ষের বোলারকে চমকে দিয়েছিল। কিন্তু রবিবার চূড়ান্ত পরীক্ষায় পাশ করা হল না তার। সে ব্যর্থ হতেই ছবিটা আস্তে আস্তে পরিষ্কার হতে থাকে। শেফালির ব্যর্থতার দিন আর কেউ সেভাবে দায়িত্ব নিয়ে লড়াই করতে পারলেন না। ফলস্বরূপ, ২০০৩ বিশ্বকাপের যন্ত্রণার দিনটাই ভেসে উঠল দেশবাসীর চোখের সামনে। ক্যাঙারুদের ডেরায় ঢুকে সেবারও ক্যাঙারু বধ করা হয়নি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের। এবার হল না হরমনপ্রীতের। তবে হরমনপ্রীতের থেকেও যেন দিনটা শেফালির কাছে বেশি কষ্টের। কারণ ভারতকে ফাইনালে পৌঁছে দেওয়ার নেপথ্যে তার অবদান ক্যাপ্টেনের থেকেও বেশি। তাই তো এদিন ভারতের দশ নম্বর উইকেটটা পড়তেই কান্নায় ভেঙে পড়ল দলের কনিষ্ঠতম সদস্য। চুরমার হয়ে গেল তার বিশ্বজয়ের স্বপ্ন।
অথচ গোটা টুর্নামেন্টে ফর্মেই দেখা যায়নি হরমনপ্রীতকে। দায়িত্ব নিয়ে একটিও ম্যাচ জেতানোর নায়িকা হয়ে উঠতে পারেননি তিনি। এমনকী স্মরণীয় করে রাখতে পারলেন না নিজের জন্মদিনকেও। বরং দলের দুরন্ত পারফরম্যান্সের সৌজন্যেই ইতিহাস গড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন পাঞ্জাবকন্যা। গত বছর ঠিক যে সৌভাগ্য হয়েছিল বিরাট কোহলির। কিংবা চলতি বছর প্রিয়ম গর্গের।
ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে বিরাট কোহলির জন্য নয়, বরং ক্রিকেটপ্রেমীদের চোখের কোণ ভিজেছিল রোহিত শর্মার জন্য। টুর্নামেন্টে নিজেকে উজার করে দিয়েছিলেন হিটম্যান। সর্বোচ্চ রানের মালিকও হয়েছিলেন। কিন্তু সেমিফাইনালেই আউট হয়েছিলেন মাত্র এক রানে। আর সেদিনই মন ভেঙেছিল একশো তিরিশ কোটি ভারতীয়র। বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গিয়েছিল টিম ইন্ডিয়া। ছবিটা পালটায়নি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপেও।
প্রিয়ম গর্গকে সত্যিই কি কেউ মনে রেখেছে? তাঁকে নিয়ে কি চর্চায় মেতেছিল নেটদুনিয়া? না, বরং দুর্দান্ত ব্যাটিং করে সমস্ত লাইমলাইট কেড়ে নিয়েছিলেন যশস্বী জশওয়াল। কিন্তু ফের তীরে এসে ডোবে তরী। ফাইনালে বাংলাদেশের কাছে নতজানু হতে হয় জুনিয়রদের।
এই সব পরাজয়েই আইসিসি টুর্নামেন্টে ভারতীয় দলের সাফল্যের গ্রাফ নিম্নমুখী। সেই ২০১৩ সালে ইংল্যান্ডে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতেছিল ধোনির ভারত। তারপর পুরুষ ও মহিলা দল মিলিয়ে টানা আটটি আইসিসি টুর্নামেন্টে ব্যর্থ ভারত। পুরুষদের ২০১৫ বিশ্বকাপ, ২০১৪ ও ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, ২০১৯ বিশ্বকাপ, ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির খেতাব অধরাই রয়ে গিয়েছিল। আর মহিলারা ব্যর্থ হয়েছিলেন ২০১৮ এবং ২০২০ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং ২০১৭ বিশ্বকাপে।
রবিবার মেলবোর্নে মেঘমুক্ত আকাশে যেন অঝোড়ে বৃষ্টি নামে। চোখের জলের বৃষ্টি। ৯ মাসে ভারতীয়দের মনকে তছনছ করে দিল তিন-তিনটে বিশ্বকাপ। এবার কী নিয়ে স্বপ্ন দেখবে ভারত!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.