দীপ দাশগুপ্ত: বিরাট কোহলির ভারতকে একই দিনে ব্যাটিং- বোলিং- ফিল্ডিং, তিনটেতেই খারাপ করতে খুব একটা দেখা যায় না। বছরে মাঝে মাঝে কয়েকটা ম্যাচে এ রকম হয়। মঙ্গলবার সে রকম একটা দিন ছিল। অথচ সিরিজ জয়ের ম্যাচে কোহলিদের সবচেয়ে ভাল খেলা দরকার ছিল। কিন্ত, চরম খারাপ পারফরম্যান্স কোহলিদের!
[ফুটবলের আলোচনায় হিন্দু-মুসলিম প্রসঙ্গ কেন? নেটদুনিয়ার রোষে ভাজ্জি]
ভারতীয় ইনিংস শেষ হওয়ার পরপরই আমরা, কমেন্টেটররা বুঝতে পারছিলাম আজ আর হবে না। জো রুটদের উপর সেই প্রেশারটাই তৈরি হবে না। ওভারে পাঁচের একটু বেশি আস্কিং রেট। যা এখনকার দিনে কোনও ব্যাপারই নয়। ইংল্যান্ড লর্ডস থেকেই একটা স্ট্র্যাটেজি নিয়েছিল যে, কুলদীপ যাদব-যুজবেন্দ্র চাহালের কুড়িটা ওভার দেখে খেলে পেসারদের টার্গেট করবে। আর মঙ্গলবার শুরু থেকে ভুবনেশ্বর কুমার, হার্দিক পান্ডিয়াদের এমন মার মারতে শুরু করল যে, চাহাল-কুলদীপ যখন বল করতে এল, তখন আর রানের চাপটাই ছিল না। অনায়াসে কিছু ডট খেলে দিতে পারছিল রুট-মর্গ্যানরা। অপেক্ষা করছিল লুজ ডেলিভারির। লুজ ডেলিভারি পেলেই সেটাকে বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে দিচ্ছিল। আর ফিল্ডিং? সেটাও এ দিন বেশ খারাপ হয়েছে। ক্যাচ মিস হয়নি। কিন্তু কোহলির টিমের ফিল্ডিংয়ে যে ঝাঁঝটা আমরা দেখি, সেটা ছিল না।
ভারত পারবে না বুঝে যাওয়ার পর আমরাও মনকে অন্য দিকে ঘোরাতে শুরু করে দিলাম। হতাশার পরিবেশ হালকা করার চেষ্টা করতে শুরু করলাম। আমি আর সঞ্জয় (মঞ্জরেকর)হিন্দি-ইংরেজি দু’টো কমেন্ট্রিই করছিলাম। হঠাৎই সঞ্জয় ইংরেজি কমেন্ট্রি বক্সে ঢুকে হিন্দিতে কথা বলতে শুরু করে দিল। টুকটাক আরও কথাবার্তা চলছিল কমেন্টেটরদের মধ্যে। যেমন, কুলদীপকে যে টেস্ট টিমে নেওয়ার কথা হচ্ছে, সেটা ঠিক হবে কি না? নাম করছি না। কিন্তু অনেককেই বলতে শুনলাম, তাড়াহুড়ো হয়ে যাবে। মঙ্গলবারই দেখার ছিল, কুলদীপ-চাহাল চাপে পড়লে কী করে? যেখানে রান বাঁচালে চলবে না। উইকেট তুলতে হবে। কিন্তু কুলদীপ—চাহাল দু’জনের একজনও সেটা পারেনি। উলটে জো রুট দুর্ধর্ষ সেঞ্চুরি করেছে। ইয়ন মর্গ্যানের (৮৮ ন:আ:) সঙ্গে ১৮৬ রানের পার্টনারশিপ করেছে। টেস্টে কিন্তু রান বাঁচানো স্পিনারের কাজ নয়। উইকেট তুলতে হয়.
[OMG! স্লিপে ফিল্ডিংয়ের সময় এ কী অদ্ভুত ক্যাচ ধরলেন গেইল?]
ব্যক্তিগত ভাবে আমি মনে করি, রায়নাকে ভুলে ভারতের এগনোর সময় এবার এসেছে। মানছি, এ দিন বোলাররা খারাপ করেছে। ফিল্ডিং বাজে হয়েছে। কিন্তু সিরিজ নির্ধারক ম্যাচ ভারতের আট উইকেটে হারের কারণ একটাই। মিডল অর্ডারের দুর্দশা। অবাক হলাম, ভারত মঙ্গলবার লোকেশ রাহুলকে খেলালো না। ডিকে—র (দীনেশ কার্তিকের ক্রিকেট সার্কিটের ডাকনাম) প্রতি সম্মান রেখেই বলছি, কেএল অনেক বেটার ব্যাটসম্যান। ওকে না খেলিয়ে ডিকে চার নম্বরে!
যাক গে, ম্যাচে ফিরি। কোহলি আর ধোনি যখন খেলছিল, মনে হচ্ছিল তিনশো উঠে যাবে হয়তো। কিন্তু আদিল রশিদের অসাধারণ একটা ডেলিভারিতে কোহলি বোল্ড হওয়ার পর প্রায় টানা উইকেট পড়তে শুরু করে দিল। মাঝের ওভারগুলোয় যদি চার-পাঁচটা উইকেট চলে যায়, আটত্রিশ ওভারে যদি নেমে পড়তে হয় টিমের আট নম্বর ব্যাটসম্যান ভুবনেশ্বর কুমারকে, তাহলে রান আর কত উঠতে পারে? ২৫৬ উঠেছে। যা অবস্থা হয়েছিল, তাতে ২৩০—এ ভারত আটকে গেলেও কিছু বলার থাকত না। লর্ডস থেকে লিডস- দু’জায়গাতেই ভারতকে মিডল অর্ডার ডুবিয়ে দিল।
খারাপ লাগছে শুধু দু’জনের কথা ভেবে। কোহলি আর ধোনি। কোহলি পরের পর ম্যাচে রান করে যাচ্ছে। তিনটে ওয়ান ডে খেলে দু’টো ৭০ প্লাস রান। কিন্তু তার পরেও টিম জিততে পারছে না। আর মিডল অর্ডার ডোবাচ্ছে বলে যত গালাগাল সহ্য করতে হচ্ছে ধোনিকে। পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজের আগে তাই একটাই ভাল ব্যাপার হয়ে থাকল। সেটা, বিরাট কোহলির ফর্ম। মনে হচ্ছে গতবারের অভিশপ্ত ইংল্যান্ড সফরের যাবতীয় প্রতিশোধ নিতেই কোহলি এবার নামবে!
[কথা রাখেননি মন্ত্রীরা, অলিম্পিকের সোনা ফেরাচ্ছেন হকি তারকার স্ত্রী]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.