ঝাড়খণ্ডের বিরুদ্ধে অপরাজিত দ্বিশতরান। টেস্ট দলে ফেরার দাবি জানালেন পূজারা। ফাইল ছবি
সব্যসাচী বাগচী: ২০২৩ সালের জুন। তাঁকে শেষবারের মতো টেস্ট খেলতে দেখা গিয়েছিল। অস্ট্রেলিয়ার (Australia) বিরুদ্ধে বিশ্ব টেস্ট ফাইনালে (WTC Final 2023) তাঁর ব্যাট থেকে এসেছিল ১৪ ও ২৭। বাকিরা তাঁর মতো ব্যর্থ হলেও টিম ইন্ডিয়ার (Team India) টেস্ট সংসার থেকে ব্রাত্য হয়ে যান চেতেশ্বর পূজারা (Cheteshwar Pujara)। তবে হাল ছাড়েননি। সেটা এবারও বুঝিয়ে দিলেন বহু যুদ্ধের নায়ক। প্রায় সাড়ে ৮ ঘন্টা ধরে বাইশ গজে টিকে রনজি ট্রফির (Ranji Trophy 2023-24) মঞ্চে ঝাড়খণ্ডের (Jharkhand) বিরুদ্ধে জ্বলে উঠলেন পূজারা। দ্বিতীয় দিন প্রায় ৬ ঘন্টা ও তৃতীয় দিন লাঞ্চের আগে পর্যন্ত ব্যাট করে মাঠ ছাড়লেন। সাজঘরে ফিরে যাওয়ার সময় ৩৫৬ বলে ২৪৩ রানে অপরাজিত তিনি। ৩০টি চার দিয়ে সাজানো ছিল প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তাঁর ১৭তম দ্বিশতরানের ইনিংস। একইসঙ্গে রনজিতে এটা ছিল তাঁর অষ্ঠম দ্বিশতরান।
এত সিনিয়র ক্রিকেটার, জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চাপিয়ে বছরের পর বছর বিপক্ষের আগুনে পেস বোলারদের গোলাগুলি হজম করেছেন। সেই চেতেশ্বরকে বারবার ছেঁটে ফেলা হয়েছিল! মন-মেজাজ খারাপ করে বসে থাকতেই পারতেন। কিন্তু না। নিজেকে গুটিয়ে রাখার বদলে চলে গিয়েছিলেন ইংল্যান্ডে। সাসেক্সের হয়ে কাউন্টি খেলতে। আবার কাউন্টি মরশুম শেষ হয়ে গেলে, নিজের অ্যাকাডেমিতে ব্যাটিং সাধনায় মগ্ন থাকতেন। আর বরাবরের মতো এবারও লড়াইয়ের মঞ্চ হিসেবে বেছে নিলেন রনজি ট্রফিকে। এমনটাই জানালেন গর্বিত বাবা ও ছোটবেলার কোচ অরবিন্দ পূজারা (Arvind Pujara)।
প্রিয় চিন্টুর অনেক লড়াইয়ের সাক্ষী ৭৩ বছরের বৃদ্ধ। ঘরের মাঠ রাজকোটে ছেলের আরও একটা দাপুটে ইনিংস দেখলেন। কেমন ছিল সেই ইনিংস? সংবাদ প্রতিদিন.ইন-কে টেলিফোনে অরবিন্দ বলছিলেন, “একটা সময় চিন্টু দুবেলা মিলিয়ে প্রায় ১০ ঘন্টা ব্যাট করত। এবার প্রায় দুই দিন মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ৮ ঘন্টা ব্যাট করে গেল। বুঝতেই পারছেন ও কতটা ফিট। ২৪৩ রানের ইনিংসে ও ১২৩ রান দৌড়ে নিয়েছে। ফিটনেস সর্বোচ্চ পর্যায়ে না থাকলে এমন ব্যাটিং করা সম্ভব নয়।”
আসন্ন ভারত সফরে পাঁচটি টেস্ট খেলবে ইংল্যান্ড। ২৫ জানুয়ারি থেকে শুরু হবে হাই ভোল্টেজ সিরিজ। চলবে ১১ মার্চ পর্যন্ত। চেতেশ্বর কি সুযোগ পাবেন? প্রশ্ন শুনেই অরবিন্দের প্রতিক্রিয়া, “আমার ছেলেকে নিয়ে যে যাই বলুক, কিছু যায় আসে না। ও মানসিকভাবে কতটা শক্তিশালী সেটা আমার থেকে ভালো কেউ জানে না। আমি কিংবা চিন্টু কেউ দল নির্বাচন নিয়ে কোনওদিন মন্তব্য করতে চাইনি। বাদ গেলে এবারও কাউকে দোষ দেব না। সাসেক্সের হয়ে অনেক রান করার পর ঝাড়খণ্ডের বিরুদ্ধেও দারুণ ব্যাট করছে। এবার বাকিটা টিম ম্যানেজমেন্ট ও জাতীয় নির্বাচকদের ব্যাপার।”
তবে চেতেশ্বর এখন রানের মুখ দেখলেও, অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্ট ফাইনালে করেছিলেন ১৪ ও ২৭। সবচেয়ে বেশি চোখে লেগেছিল তাঁর আউট হওয়ার ধরন। সেই টেস্টের প্রথম ইনিংসে ক্যামেরুন গ্রিনকে জাজমেন্ট দিতে গিয়ে বোল্ড হয়েছিলেন। আর দ্বিতীয় ইনিংসে প্যাট কামিন্সের বাইরে যাওয়া ডেলিভারিকে অহেতুক মারতে গিয়ে, উইকেটকিপার অ্যালেক্স ক্যারির হাতে জমা হয়ে যাওয়া। ফলে এহেন চেতেশ্বরের কামব্যাক নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।
যদিও অরবিন্দের দাবি, “শুধু অধ্যাবসায় ও মনের জোরের উপর ভর করে চিন্টু এতটা পথ পেরিয়ে এসেছে। ওকে আর আটকে রাখা যাবে না। মিলিয়ে নেবেন। আগামী দিনে আরও বড় লড়াই করার জন্য আমার ছেলে রসদ পেয়ে গেল।” আক্ষেপ করে অরবিন্দ ফের বলছিলেন, “দেশের হয়ে খেলতে নামলে সফল হতেই হবে। পেশাদার জগতে এটাই নিয়ম। কিন্তু আমার প্রশ্ন হল গত কয়েক বছর ভারতীয় দল বিদেশে কি শুধু চিন্টু ও অজিঙ্কা রাহানের ব্যর্থ হওয়ার জন্য হেরেছিল! আর কি কোনও তারকা ব্যর্থ হয়নি! তাহলে শুধু ওদের ঘাড়ে কেন কোপ পড়বে? অতীতেও চিন্টুকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তবে আমরা তখনও প্রতিবাদ করিনি। এখনও প্রতিবাদ করব না।”
!
A spectacular 2⃣0⃣0⃣ in Rajkot from the Saurashtra batter!
Follow the match ▶️ https://t.co/xYOBkksyYt#RanjiTrophy | #SAUvJHA | @IDFCFIRSTBank | @saucricket | @cheteshwar1 pic.twitter.com/ofLZSf2qcl
— BCCI Domestic (@BCCIdomestic) January 7, 2024
দেশের হয়ে মাত্র একটি ফরম্যাট খেলার সুযোগ পান। ম্যাচ প্র্যাকটিসের অভাব থাকে। রনজি কিংবা দলীপ ট্রফি খেললেও বিপক্ষের বোলারদের মধ্যে সেই খুনে প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করেন না। এটাও চেতেশ্বরের ব্যর্থ হওয়ার কারণ বলে মনে করছেন সৌরাষ্ট্রের প্রাক্তন ক্রিকেটার। অরবিন্দ যোগ করলেন, “অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ডে সাফল্য পেতে হলে প্রচুর ম্যাচ প্র্যাকটিস দরকার। চিন্টু নিজের অ্যাকাডেমিতে বিভিন্ন ধরনের উইকেট বানিয়ে অনুশীলন করে। এছাড়া সময় সুযোগ পেলে বরাবরের মতো এবারও রাজ্য দলের হয়ে ম্যাচ খেলছে। কিন্তু এভাবে তো বিদেশে গিয়ে পাল্লা দেওয়া যাবে না। তবুও নিজের স্কিলকে আরও ঘষেমেজে ও এগিয়ে যাচ্ছে। আর তো কোনও উপায় নেই। অবসর নিয়ে তো বাড়িতে বসে থাকা যায় না।”
১০৩টি টেস্টের ১৭৬টি ইনিংসে রান ৭১৯৫। গড় ৪৩.৬০। সঙ্গে রয়েছে ১৯টি শতরান ও ৩৫টি অর্ধ শতরান। এহেন চেতেশ্বর প্রচারের আলোয় থাকতেও রাজি নন। গায়ে-গতরে ওই ‘লাল গোলা’ হজম করে যান। টি-শার্ট শরীর থেকে নামিয়ে রাখলে জমাট রক্তের দাগগুলো স্পষ্ট দেখা যায়। তবুও নিজের কাজ নীরবে করে যেতে চান একজন প্রকৃত যোদ্ধার মতো। কিন্তু যশস্বী জসওয়াল, শ্রেয়স আইয়ারদের আগমনে তাঁকে আর রাহুল দ্রাবিড়-রোহিত শর্মার থিঙ্কট্যাঙ্ক মনে রাখছে কোথায়!
তাঁকে রাহুল দ্রাবিড়ের যোগ্য উত্তরসূরি হিসবে ধরা হয়েছিল। নিজেকে সেভাবে প্রতিষ্ঠাও করেছিলেন। কিন্তু সেই ‘দ্য ওয়াল’ হেড কোচ হয়ে টিম ইন্ডিয়ার ড্রেসিংরুমে আসতেই এই নিয়ে বেশ কয়েকবার টেস্ট দল থেকে ছাঁটাই হলেন ‘চে পূজারা’। এটা কি শুধুই ক্রিকেটীয় যুক্তি। নাকি অদৃষ্টের খেল! আর কয়েকটি দিনের জন্য চেতেশ্বরকে অপেক্ষা করতেই হবে। সুযোগ পেলে ভালো। না হলে ‘ব্যাক টু দ্য বেসিক’। সৌরাষ্ট্রের জন্য ফের বাইশ গজে নামবেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.