অপরাজিত থেকে দাপটের সঙ্গে ভারতকে জেতালেন লোকেশ রাহুল ও সূর্য কুমার যাদব। ছবি: টুইটার
অস্ট্রেলিয়া: ৫০ ওভারে ২৭৬ (ওয়ার্নার -৫২, ইংলিশ -৪৫, শামি-৫/৫১)
ভারত: ৫০ ওভারে ৫ উইকেটে ২৮১ (শুভমান- ৭৪, রুতুরাজ-৭১, রাহুল-৫৮*, সূর্য-৫০)
ভারত ৫ উইকেটে জয়ী
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মোহালির এই পিচে ২৭৭ রান তোলাই যায়। তবে সেটা করতে হলে দাপটের সঙ্গে ব্যাট করা দরকার। প্রশ্ন ছিল বিরাট কোহলি (Virat Kohli)-রোহিত শর্মা (Rohit Sharma) বিশ্রামে রয়েছেন। বাকিরা কি পারবেন? সেই ধারণা শুরু থেকেই বদলে দেন শুভমান গিল (Shubman Gill) ও রুতুরাজ গায়কোয়াড় (Ruturaj Gaikwad)। দুই ওপেনার মারমুখী মেজাজে ১৪২ রান তুলে দেন। এরপর দ্রুত চার উইকেট চলে গেলেও, পালটা লড়াই করলেন লোকেশ রাহুল (KL Rahul) ও সূর্য কুমার যাদব (Suryakumar Yadav)। ফলে বিশ্বকাপ (ICC ODI World Cup 2023) অভিযান শুরু করার আগে অস্ট্রেলিয়ার (Australia) বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচ ৫ উইকেট জিতে নিল টিম ইন্ডিয়া (Team India)।
এদিন রান তাড়া করতে নেমে প্রথম থেকেই মারমুখী মেজাজে খেলতে থাকেন শুভমান ও রুতুরাজ। শুভমান এমনিতেই চলতি বছর দারুণ ফর্মে আছেন। অন্যদিকে রুতুরাজের এটি ছিল কেরিয়ারের তৃতীয় একদিনের ম্যাচ। এরমধ্যে আবার অজিদের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচ বলে কথা। তবে তাঁর মধ্যে কোনও জড়তা দেখা গেল না। আর তাই প্রথম উইকেটে দুই তরুণ তুলে দিলেন ১৪২ রান। দল যখন খুব ভালো জায়গায়, ঠিক সেই সময় অজিদের প্রথম সাফল্য এনে দিলেন অ্যাডাম জাম্পা। রুতুরাজ ৭৭ বলে ৭১ রানে ফিরে যান। মারলেন ১০টি চার।
শুভমানের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝির খেসারত দিলেন শ্রেয়স আইয়ার। তিনি অহেতুক ঝুঁকি নিয়ে রান আউট হলেন। ১৪৮ রানে ২ উইকেট হারিয়ে দল পড়ল বিপদে। এর কিছুক্ষণ পর ফের ধাক্কা খায় ভারত। এবারও ভারতকে ধাক্কা দিলেন সেই লেগ স্পিনার জাম্পা। তাঁকে স্কোয়ার কাট করতে গেলে বোল্ড হন শুভমান। ৬৩ বলে ৭৪ রানে ফিরলেন তিনি। আউট হওয়ার আগে তাঁর এই ইনিংস ৬টি চার ও ২টি ছক্কা দিয়ে সাজানো ছিল। সেই সময় ১৫১ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ভারত তখন আরও চাপে। দলের রান যখন ১৮৫, তখন প্যাট কামিন্সের বলে উইকেট ছুড়ে দিয়ে দলের সমস্যা আরও বাড়িয়ে দিলেন ঈশান কিষান।
প্রায় জেতা ম্যাচ তখন ফিফটি-ফিফটি। ঠিক সেই সময় চাপের মুখে না চুপসে রুখে দাঁড়ালেন সূর্য ও রাহুল। এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কামব্যাক ম্যাচে শতরান করেছিলেন রাহুল। এদিনও তিনিই পালটা মার দিতে শুরু করলেন। অন্যদিকে সূর্য ছিলেন কিছুটা শান্ত। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের শীর্ষে থাকলেও ৫০ ওভারের ফরম্যাটে তিনি নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। তবে এবার কিন্তু অন্য সূর্যকে দেখা গেল। এশিয়া কাপে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সুইপ মারতে গিয়ে আউট হয়েছিলেন। এদিন একটি সুইপ মারলেন না। ফলে পঞ্চম উইকেটে উঠে যায় ৮০ রান। আর সেখানেই ম্যাচ ঘুরে যায়। শেষ পর্যন্ত সূর্য তাঁর একদিনের কেরিয়ারের তৃতীয় অর্ধ শতরান পূর্ণ করে ৪৯ বলে ৫০ রানে আউট হলেন। তবে ৬৩ বলে ৫৮ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়লেন রাহুল।
তবে জিতলেও, যেমনটা ভাবা গিয়েছিল, তেমন দুরন্ত স্পিন বোলিং কিন্তু দেখা গেল না। এক বছর আট মাস পর ৫০ ওভারের ফরম্যাটে কামব্যাক করেছিলেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন (Ravichandran Ashwin)। তবে তেমন প্রভাব ফেলতে পারলেন না অভিজ্ঞ অফ স্পিনার। ১০ ওভারে মাত্র ৪৭ রান দিলেও, ঝুলিতে এল মাত্র ১ উইকেট। নিলেন মার্নাস লাবুশানের উইকেট। মহম্মদ শামি (Mohammed Shami) ছাড়া বাকি কেউ আর তেমন নজর কাড়তে পারলেন না। তিনি নিলেন ৫১ রানে ৫ উইকেট। তবে এরসঙ্গে যোগ হল খারাপ ফিল্ডিং ও ক্যাচ ফেলে দেওয়ার বহর। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ৫০ ওভারে ২৭৬ রানে অল আউট হল অস্ট্রেলিয়া। তবে এতে লাভ হল না। শুরুটা করেছিলেন শুভমান ও রুতুরাজ। এবং অজিদের প্রথম একদিনের ম্যাচে হারিয়ে দেওয়ার বাকি দুই কারিগর হলেন রাহুল ও সূর্য। ফলে মোহালিতে পাঁচ উইকেটে জিতে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল ভারত।
তবে শুধু অশ্বিন নন, অজিদের বিরুদ্ধে জিতলেও ভারতের গ্রাউন্ড ফিল্ডিং মোটেও আহামরি ছিল না। এমনকি প্রশ্নের মুখে পড়বে রাহুলের উইকেটকিপিং। দলে ঈশান থাকলেও, ‘স্টপগ্যাপ’ অধিনায়কত্বের পাশাপাশি গ্লাভস হাতে দাঁড়াচ্ছেন তিনি। তবে পারফরম্যান্স করতে পারলেন কোথায়! সহজ বল গ্লাভসবন্দী করতে তিনি ব্যর্থ। এমনকি মার্নাস লাবুশানে তখন সবে ক্রিজে এসেছেন। অজি ব্যাটারকেও রান আউট করতে পারলেন না রাহুল। তাঁর এমন কিপিং দেখে রোহিত ও হেড কোচ রাহুলের দ্রাবিড়ের চিন্তা বাড়বেই।
তবে শুরুটা এমন হয়নি। প্রথম ওভারের চতুর্থ বলেই দলকে সাফল্য এনে দেন শামি। তাঁর আউট সুইং বুঝতে না পেরে খোঁচা দেন মিচেল মার্শ। বলে চলে যায় শুভমানের হাতে। এরপর অবশ্য দুই অভিজ্ঞ অজি ব্যাটার বাইশ গজ দাপাতে থাকেন। দ্বিতীয় উইকেটে ডেভিড ওয়ার্নার ও স্টিভ স্মিথ ৯৪ রান তুলে দেন। তবে শ্রেয়স একটু সজাগ থাকলে এই জুটি অনেক আগেই ভেঙে যেত। ওয়ার্নার তখন ২৯ রানে ব্যাট করছেন, ঠিক এমন সময় শার্দুল ঠাকুরের বলে লোপ্পা ক্যাচ ফেলে শ্রেয়স। যদিও ওয়ার্নারকে (৫২) ফিরিয়ে ভারতকে দ্বিতীয় সাফল্য এনে দেন রবীন্দ্র জাদেজা। ফলে ৯৮ রানে ২ উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। এর কিছুক্ষণ পর আবার সাফল্য পায় টিম ইন্ডিয়া। স্টিভ স্মিথ ফিরে যান ৪১ রানে। দুরন্ত অফ কাটারে তাঁর স্টাম্প ছিটকে দেন শামি।
এরপর নিয়মিত ব্যবধানে উইকেট হারালেও, ভারতীয় দল কিন্তু তেমন সুবিধা করতে পারেনি। কারণ দলের প্রয়োজনে মারকুটে ইনিংস খেলে যান লাবুশানে (৩৯) ও ক্যামেরুন গ্রিন (৩১)। ফলে ১৮৬ রানে বিপক্ষের ৫ উইকেট ফেলে দিলেও, ভারত পুরোপুরি দাপট দেখাতে পারেনি। কারণ লোয়ার অর্ডারে কিপার জস ইংলিশ (৪৫) ও মার্কাস স্টইনিস (২৯) মারকুটে মেজাজে দ্রুত রান তুলে দেন। ফলে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ২৭৬ রানে অল আউট হল অস্ট্রেলিয়া। শামি ৫১ রানে ৫, বুমরাহ ৪৩ রানে ১ উইকেট নিয়েছেন। অশ্বিন ও জাদেজা নিয়েছেন ১টি করে উইকেট। এরপর অজিদের বাকিটা বুঝে নিল ভারতের ব্যাটাররা। ২৪ সেপ্টেম্বর অর্থাৎ রবিবার ইন্দোরের বাইশ গজে দ্বিতীয় একদিনের ম্যাচে মুখোমুখি হবে দুই দল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.