অভিজ্ঞান সাহা: লকডাউনের মাঝে ভারতীয় ক্রিকেট ঘিরে অনেক প্রশ্ন একসঙ্গে উঠে আসছে। যেমন, সৌরভদের কুলিং অফের কী হল? কুলিং অফ না উঠলে সৌরভ কী আইসিসি যাবেন? টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ না হলে আইপিএল হওয়ার সম্ভাবনা কতটা? সেটা হলে আইপিএল বিদেশে নাকি দেশেই হবে? আরও আছে। আড়াই মাস ক্রিকেট বন্ধ থাকলে নানা প্রশ্ন মাথাচাড়া দিয়ে উঠবেই। বাস্তবের জমিতে দাঁড়িয়ে সেগুলি নিয়ে কাঁটাছেঁড়া করেও নিশ্চিত উত্তর পাওয়া যাচ্ছে না। শুধু আভাস মিলছে। সেই জায়গা থেকে আগামিদিনে ভারতীয় ক্রিকেট কীভাবে চলবে তার ছবি একটা পাওয়া যাচ্ছে।
কুলিং অফে বোর্ড সচিব জয় শাহ আটকে গিয়েছেন। সৌরভের কার্যকাল শেষ হতে দেড় মাসের উপর সময় আছে। কুলিং অফ না উঠলে এঁদের বোর্ড থেকে চলে যেতে হবে। তখন দেশের ক্রিকেট প্রশাসনের হাল ধরবেন কে? অনেকে বলছেন, দায়িত্ব নেওয়ার লোক আছে। এখানেও প্রশ্ন, কোথায় লোক? কে তাঁরা? উত্তর নেই। যাঁদের নাম উঠে আসছে তাঁরা কেউ হেভিওয়েট নন। আসলে সৌরভ, জয় শাহদের মতো ব্যক্তিত্ব না থাকলে দেশের ক্রিকেট যে কঠিন জায়গায় চলে যাবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বোর্ডের চেয়ারে থাকা অন্য সদস্যরা (বোর্ড প্রেসিডেন্ট ও সচিবের বাইরে যাঁরা আছেন) সেটা বুঝে শীর্ষ আদালতে নতুন করে সময় চেয়েছেন। সুযোগ পেলে কুলিং অফ তুলে দেওয়ার ব্যাপারে কথা বলবেন। শোনা যাচ্ছে, এ মাসের শেষে এ ছবি পরিস্কার হতে পারে। সৌরভ, জয় শাহরা হয়তো আবার কাজ করার সুযোগ পাবেন।
কুলিং অফ উঠলে কী করবেন সৌরভ? তিনি আইসিসি চেয়ারম্যানের দৌড়ে থাকবেন? নাকি বোর্ড প্রেসিডেন্ট চেয়ারেই আবার বসবেন? সৌরভের চরিত্রের সঙ্গে মানিয়ে কথা বলতে গেলে লেখা যায়, সুযোগ পেলে তিনি বোর্ডেই থাকবেন। বোর্ড প্রেসিডেন্টের চেয়ারে থেকে আইসিসির (ICC) সঙ্গে তিনিই ছুটতে পারবেন।
তবে এর আগে অন্য ব্যাপার সামনে আসছে। ১০ জুন আইসিসির সভায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ নিয়ে কথা হবে। অনেকে বলছেন, এই সভায় টুর্নামেন্ট নিয়ে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবে আইসিসি। কেউ বলছেন, ১০ জুনেও নাকি কিছু হবে না। নতুন করে তারিখ পড়বে। তবে আইসিসির সভায় যাই হোক, অস্ট্রেলিয়ার মাঠে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সংগঠন করা এই মুহূর্তে কঠিন ব্যাপার। তাই এবছর বাতিল হতে পারে বিশ্বকাপ। সেটা হলে বন্ধ হওয়া আইপিএল–এর দরজা খুলে যাবে। একই উইন্ডোতে আইপিএল হয়ে যাবে। এখানেই প্রশ্ন, সবুজ সংকেত মিললেও আইপিএল কোথায় হবে? শ্রীলঙ্কা ও আমিরশাহী নিজেদের দেশে আইপিএল করার প্রস্তাব দিয়েছে। তবে বিশ্বস্তসূত্রের খবর, আইপিএল হলে বিদেশে নয়, দেশেই হবে। দেশের মাঠে নতুন ফরম্যাটে আইপিএল করা যেতে পারে।
শোনা যাচ্ছে, আইপিএল হলে সরকারও দেশের মাঠে করার চেষ্টা করবে। ঘরের মাঠে আইপিএল হলে বিশ্বের কাছে বার্তা যাবে, করোনা ভাইরাস
(coronavirus) থেকে দেশ অনেকটাই মুক্ত। বিদেশে খেলা হলে লোকে বলতে শুরু করবে করোনায় দেশে মানুষ মারা যাচ্ছে, আর ক্রিকেটাররা বিদেশে আইপিএল খেলছে। খেলার উপযুক্ত পরিবেশ বের করতে পারলে মনে হয় এটা সরকারের কাছেও চ্যালেঞ্জের মতো কাজ করবে। গবেষকরা বলছেন, সেপ্টেম্বরে নাকি দেশ করোনা মুক্ত হবে। তাই যদি হয়, তাহলে বিশ্বকাপ বাতিল হলে আইপিএল দেশের মাঠে করতে অসুবিধা হবে না।
আইপিএল না হলে কী হবে? দেশের বিভিন্ন সেক্টরে করোনা সংক্রমণের প্রভাব পড়েছে। অনেক অফিস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কর্মী ছাঁটাই হচ্ছে। বেতন কমছে। ক্রিকেট এর বাইরে থাকে কী করে! আইপিএল না হলে বোর্ডের বিশাল অঙ্কের টাকা লোকসান। আনুমানিক চার হাজার কোটি টাকা। ফরম্যাট বদল করে অন্যভাবে গেলেও পুরো টাকা পাওয়া যাবে না। আর খেলা না হলে বিরাটদের মাইনে কাটা ছাড়াও অনেক কিছু কাটছাঁট হবে।
তবে আইপিএল হলে এগুলি থেকে বেরিয়ে আসা যাবে। বোর্ডের সঙ্গে পা ফেলবে ক্রিকেট সম্প্রচার সংস্থাও। বিরাট অঙ্কের টাকা দিয়ে যারা বোর্ডের কাছ থেকে টিভি স্বত্ব কিনেছে। আইপিএল হলে বিজ্ঞাপন থেকে বড় অঙ্কের টাকা আসবে। মাঠে লোক না ঢুকলে বিজ্ঞাপন রেভিনিউ অনেক বেশি আসবে। তাই লকডাউনের পর ক্রিকেটের বন্ধ দরজা খুললে ক্ষতির পরিমাণও কমবে। শোনা যাচ্ছে, আইপিএল না হলে অনেক কর্মী নাকি ছাঁটাই করবে সম্প্রচার সংস্থা। এ সবের সমাধানে আইপিএল হওয়া দরকার। এবং দেশের মাঠেই করতে হবে। তাহলেই সবকিছু ঠিকঠাক চলবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.