সুমন্ত চট্টোপাধ্যায়: উচ্চতা সাড়ে ছয় ফুট। না, ইনি জটায়ু’র উপন্যাসের সেই গোয়েন্দা প্রখর রুদ্র নন। ইনি, শাহিন শাহ আফ্রিদি (Shaheen Shah Afridi)। পাক ক্রিকেট মসনদের ‘শাহেনশা’। গালভরা কথা নয়। সুদীর্ঘ, সদাহাস্যময় পাক পেসার যে পাকিস্তান ক্রিকেটের ভূত-ভবিষ্যৎ, সেটা প্রতিনিয়ত প্রমাণ করে চলেছেন। এমনকী চলতি বিশ্বকাপে পাক টিমের টালমাহাল অবস্থার মধ্যেও। মঙ্গলবার যেমন ইডেনে প্রমাণ করলেন তিন উইকেট নিয়ে। বুঝিয়ে দিয়েছেন, শাহিন আছেন স্বমেজাজে।
চলতি বিশ্বকাপে (ICC World Cup 2023) সেমিফাইনালে পাকিস্তান (Pakistan) উঠবে কি না, সেটা এখন লাখ টাকার প্রশ্ন। কিন্তু শাহিন? টুর্নামেন্টে ইতিমধ্যে ১৬ উইকেট নিয়ে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারের তালিকা সর্বাগ্রে। ‘দ্রুততম পাকিস্তানি’ হিসাবে ওয়ান ডে’তে একশো উইকেটের ক্লাবেও ঢুকে পড়েছেন। আইসিসির ওডিআই র্যাঙ্কিংয়েও শাহিন এখন ‘এক নম্বর’ বোলার। অথচ বিশ্বকাপে যখন ক্রমাগত হারে যখন ভরাডুবি ঘটছিল বাবর আজমদের, তখন প্রশ্ন তোলা হয়েছিল শাহিনের ফর্ম নিয়ে।
অবশেষে সেই ছন্দ কি খুঁজে পেয়েছেন? ইডেনে বাংলাদেশ ম্যাচের পর সে প্রশ্ন ধেয়ে আসতে যে জবাবটা দিলেন সেটা শুধু শাহিনকেই মানায়, “১৬টা উইকেট হয়ে গেল। এখনও আপনাদের (সাংবাদিকদের উদ্দেশে) সন্দেহ, ছন্দ খুঁজে পেয়েছি কি না!” আর দেশের দ্রুততম হিসাবে ১০০ ওডিআই উইকেট-প্রাপ্তি? স্মিত হাস্যে বাঁ-হাতির উত্তর, “রেকর্ড তৈরি হয় ভাঙার জন্য। তবে রেকর্ডটা পাকিস্তানের হয়ে করতে পেরেছি বলে আরও বেশি ভালো লাগছে।”
কিন্তু ভারতীয় উপমহাদেশের কন্ডিশনে মানাতে যে সমস্যা হচ্ছিল পাক বোলারদের। ম্যাচের আগের দিন ভারতকে তো পাক কোচ গ্র্যান্ট ব্র্যাডবার্ন কার্যত অচেনা, অজানা বিদেশ বলে ত্রাহি রব তুলে দিয়েছিলেন। শাহিন সেই প্রতিবন্ধকতা জয় করলেন কীভাবে? পাক পেসার বলেন, “টিম হিসাবে আমরা বেশ কয়েকটি ম্যাচে ভালো খেলতে পারিনি। ভারতের উইকেট একটু স্লো। মিচেল স্টার্ক, ট্রেন্ট বোল্টদেরও মানিয়ে নিতে সমস্যা হচ্ছে। তবে আমি আইপিএলের অনেক ম্যাচ দেখেছি। খেয়াল করেছি, শুরুর দিকে তেমন সুইং মেলে না। এমন পরিস্থিতিতে লাইন-লেংথ ঠিকঠাক বজার রাখা খুব জরুরি। পাশাপাশি চেষ্টা করেছি বোলিংয়ে বৈচিত্র আনার।” সেই নীল নকশা ধরেই ইডেনের স্লো সারফেসে সাফল্য এসেছে, জানিয়েছেন শাহিন।
অতঃপর? শাহিনের ভাবনায় এখন শুধুই টুর্নামেন্টের ‘টপ ফোর’। বলেছেন, “আমরা টু্র্নামেন্টে এখনও টিঁকে আছি। বাকি দু’টো ম্যাচেও আমাদের জিততে হবে। শুধু জিতলেই হবে না, নেট রান রেটও বাড়াতে হবে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তাই আমরা ম্যাচটা ৩০-৩৫ ওভারে ফিনিশ করার চেষ্টা করেছি। শুধু সেমিফাইনাল নয়, ফাইনাল খেলব। সেটাই আমাদের টার্গেট।”
কিন্তু দলটার নাম যে পাকিস্তান। আনপ্রেডিক্টবল। পাক পেসারের দীপ্ত স্বরের পাশে ম্যাচের সেরা ইনিংস খেলা ফখর জামানের কথা শুনুন। পাক ক্রিকেটে ত্র্যহস্পর্শ টের পাবেন। স্বার্থের সংঘাত প্রশ্নে জাতীয় নির্বাচক কমিটির পদ থেকে ইনজামাম-উল-হক পদত্যাগ করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রথম একাদশ থেকে তাৎপর্যপূর্ণভাবে বাদ পড়েছেন ‘ভাতিজা’ ইমাম-উল-হক। বদলে ছয় ম্যাচ পর টিমে প্রত্যাবর্তন ঘটেছে ফকরের। মঙ্গলবার মাঠে বিস্ফোরণ ঘটানোর পর সাংবাদিক সম্মেলনে যা বললেন সেটাও কম ‘বিস্ফোরক’ নয়। চোটের কথা উঠতেই ফকরের স্টেপ আউট, “চোট লেগেছিল। কিন্তু সেটা এতটাও মারাত্মক ছিল না যে খেলতে পারতাম না। দলের প্রয়োজনে নিশ্চয় মাঠে নামতে পারতাম। টিম ম্যানেজমেন্ট ঝুঁকি নিতে চায়নি। তবে আমি নেটে পরিশ্রম করেছি। চেষ্টা করব বাকি ম্যাচে আরও উন্নতি করার।”
কী বলবেন একে? বিতর্ক নয়? কে থামাবেন এই লাভাস্রোত? পারলে একজনই পারেন বোধহয়। ওই যে, উচ্চতা সাড়ে ছয় ফুট। জটায়ু’র প্রখর রুদ্র নন, ইনি এক ও অদ্বিতীয়ম–শাহিন শাহ আফ্রিদি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.