মনোজ তিওয়ারি: লেখার শুরুতেই একটা কথা বলে রাখি। বিশ্বকাপের (ICC World Cup 2023) গ্রুপ পর্বে ভারতের বিরুদ্ধে যে অস্ট্রেলিয়াকে দেখেছেন, বিশ্বকাপ ফাইনালে কিন্তু সেই অস্ট্রেলিয়াকে দেখবেন না। অনেক বেশি ভয়ংকর, অনেক বেশি খুনে মানসিকতার অস্ট্রেলিয়াকে দেখতে চলেছেন আপনারা।
অস্ট্রেলিয়া সম্পর্কে একটা কথা প্রায়শই বলা হয়। টুর্নামেন্ট যত এগোয়, অস্ট্রেলিয়া তত ক্রমশ ভয়ংকর হতে থাকে। প্যাট কামিন্সের (Pat Cummins) টিমও তাই। অনেকেই বলছেন যে, ফাইনালে স্টিভ স্মিথ (Steve Smith) একটা ফ্যাক্টর। ডেভিড ওয়ার্নার ফ্যাক্টর। কিন্তু আমার মতে, স্মিথ বা ওয়ার্নারের (David Warner) চেয়েও বড় ফ্যাক্টর ট্রাভিস হেড। যে কিনা প্রথম ম্যাচটায় খেলতে পারেনি। ভারতের হয়ে যে ভূমিকাটা নিচ্ছে রোহিত শর্মা (Rohit Sharma)। ইনিংসের শুরু থেকে মারমার শুরু করে দিচ্ছে। হেডও কিন্তু ওই রকমই ধ্বংসাত্মক ব্যাটার। ইনিংসের প্রথম থেকে যে কিনা বিপক্ষ বোলিংকে ছারখার করা শুরু করে দেয়। ঝুঁকি নিতে অনেক সময়ই সুযোগ দিয়ে ফেলে হেড, কিন্তু তার পরেও ওর ঝুঁকি নেওয়া বন্ধ হয় না। তাই বলছি, ফাইনাল জিততে গেলে হেডকে দ্রুত ফেরানো দরকার। তা ছাড়া পেসের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার স্পিন বোলিংও মন্দ নয়। অ্যাডাম জাম্পা তো আছেই। কিন্তু জাম্পা মার খেয়ে গেলে ট্রাভিস হেড বা গ্লেন ম্যাক্সওয়েলও ওর কাজটা ভাগাভাগি করে নিতে পারে। অস্ট্রেলিয়ার বোলাররাও ব্যাটিং মন্দ করে না। স্টার্ক, কামিন্স এরা যেমন প্রয়োজনে মারতে পারে, ঠিক তেমনই আবার সময় নিয়ে ক্রিজে পড়ে থাকতে পারে। কিন্তু আবারও বলছি, ভারতের আসল দুশ্চিন্তা হেড। ট্রাভিস হেড।
আমি জানি না ভারত কী ভাবছে? আমি জানি না, আজ অস্ট্রেলিয়া ব্যাটিংয়ের শুরুর সময় শামিকে ভারত আনবে কি না? মনে রাখা দরকার, আধা নতুন বলে সামিকে যতটা ভয়ংকর দেখাচ্ছে, তার চেয়ে অনেক বেশি দেখাবে নতুন বল পেলে। তার উপর বাঁ হাতি ব্যাটারদের বল করার সময় রাউন্ড দ্য উইকেট আসছে সামি। উইকেটও পাচ্ছে। পরিষ্কার বলছি, আধা নতুন বলে আপনারা শামিকে সাত উইকেট নিতে দেখেছেন। যদি নতুন বলে আনা হয় সামিকে, তা হলে আট-নটা উইকেট নিতে দেখলেও অবাক হবেন না।
দেখুন, ব্যক্তিগত জীবনে কম ঝড়-ঝাপটার মধ্য দিয়ে যেতে হয়নি শামিকে একটা সময়। বাংলা টিমে আমি ওর সতীর্থ ছিলাম। আমার নেতৃত্বে ও খেলেওছে। ব্যক্তিগত জীবনে ঝঞ্ঝাটের পর শামি বুঝে গিয়েছিল যে, ওর হারানো মানসম্মান ফেরাতে পারে একমাত্র ক্রিকেট। অফ সিজনে সেখানে একা একা ট্রেনিং করে শামি। নিজের বোলিং ফিটনেস ধরে রাখে। টেকনিক্যাল ভাবেও শামি অসম্ভব শক্তিশালী। ও আদতে সিম বোলার। আর যে কোনও ব্যাটারের পক্ষে সবচেয়ে কঠিন সিম বোলিং খেলা। শামি সোজাসুজি ছুটে আসছে। ওর কবজির পজিশন ভালো থাকছে। রান আপেও কোনও সমস্যা থাকছে না। প্লাস, লেংথের উপর সামির নিয়ন্ত্রণ। ফাইনালে অসম্ভব গুরুত্বপূ্র্ণ হবে সামির ভূমিকা। একই রকম ভাবে রোহিত শর্মার গুরুত্ব ভুললেও চলবে না।
চলতি বিশ্বকাপে ভারতীয় ব্যাটারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চর্চা, সবচেয়ে বেশি আলোচনা চলছে বিরাট কোহলিকে নিয়ে। ছশো রান করে ফেলেছে, প্রায় সাতশোর দিকে এগোচ্ছে, বিরাটকে নিয়ে আলোচনা হওয়াও স্বাভাবিক। কিন্তু আমার মতে, রোহিত যে ক্রিকেটটা খেলছে, তা পরিস্থিতি-প্রভাব বিচারে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। পুরো নিঃস্বার্থ ক্রিকেট খেলে চলেছে রোহিত (Rohit Sharma)। টিমের অধিনায়ক হওয়া সত্ত্বেও প্রথম বল থেকে মারমার শুরু করে দিচ্ছে। তাতে প্রথম বল থেকে চাপটা সরাসরি চলে যাচ্ছে বোলারের উপর। পরবর্তী ব্যাটারদের উপর চাপও কমতে থাকে। আমি চিরকাল বলে এসেছি যে, রোহিত সময় নিয়ে খেললে বড় রান করবেই। ও ঠিক এতটাই বড় প্রতিভা। কিন্তু চলতি বিশ্বকাপে রোহিত ঠিক করেছে সোজা আক্রমণে চলে যাবে। যার সুফলও পাচ্ছে ও। দেখুন, বোলার একবার মার খেতে শুরু করলে দ্রুত ছন্নছাড়া হয়ে যায়। প্রথম বলটা করার সময় তার যা তাগিদ থাকে, সেটা কমতে থাকে। রোহিত সেই ফায়দাটাই তুলছে। এ রকম ব্যাটিং সচরাচর দেখা যায় না। শুভমান গিলকেই দেখুন। গিল কিন্তু ইনিংসের শুরুতে ঝুঁকি অনেক কম নেয়। একমাত্র ভালো ডেলিভারি বা ও নিজে ভুল করলে তখন গিলকে (Subhman Gill) আউট করা সম্ভব। কিন্তু রোহিত সেটা করছে না। প্রথম থেকে আক্রমণে চলে যাচ্ছে। তা ছাড়া অধিনায়কত্বও খুব ভালো করছে রোহিত। ফাইনালেও যদি একই রকম ক্যাপ্টেন্সি করে ও, ভারত ট্রফি জয়ের স্বপ্ন দেখতেই পারে।
লেখার শেষটা করি এবার। কোথাও একটা পড়লাম যে, ক্রিকেটারদের স্ত্রী-পরিবার আসছে ফাইনাল দেখতে। বিশ্বকাপ ফাইনালের মতো হাই ভোল্টেজ ম্যাচের আগে সঙ্গে পরিবার থাকার সুবিধে হল, মনের উপর নেতিবাচক কোনও দুশ্চিন্তা ঢুকতে পারে না। কারণ, সময়ই পাওয়া যায় না। আর তাই এই যে, বারবার মনে করিয়ে দেওয়া হচ্ছে যে এই ফাইনাল ২০০৩ বিশ্বকাপ ফাইনালের প্রতিশোধ নেওয়ার ম্যাচ, তার প্রভাবও পড়বে না ক্রিকেটারদের উপর। শুধু দুটো জিনিস আজ দেখতে হবে। যতদূর শুনছি, স্লো টার্নার হবে আমেদাবাদে। আর সেটা হলে রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে খেলানোর কথা ভেবে দেখতে পারে ভারত। অস্ট্রেলিয়ার দুই ওপেনারই বাঁ হাতি। ওয়ার্নার-হেড। তা ছাড়া স্টিভ স্মিথ এবং মারনাস লাবুশেনের বিরুদ্ধেও ভালো রকম সাফল্য রয়েছে অশ্বিনের। ফাইনাল জিততে এটুকু ঝুঁকি কিন্তু নেওয়াই যায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.