সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিশ্বকাপ আর হলুদ জার্সি! এ যেন অদ্ভুত প্রেমকাহিনি! যে প্রেম কাহিনিতে অপ্রাপ্তির বেদনার থেকে প্রাপ্তির আনন্দ বেশি। বিশ্বকাপ, নাম শুনলেই যেন অজি রক্তে অন্যরকমের শিহরণ খেলে যায়। বিশ্বকাপ (Cricket World Cup), নাম শুনলেই বিপক্ষকে দুমড়ে-মুষড়ে দেওয়া এক ঔদ্ধত্য কোথা থেকে উড়ে এসে ভর করে অস্ট্রেলীয়দের উপর। জয় ছাড়া যেন আর কিছুই ভাবতে পারে না তারা। যেনতেন প্রকারে চ্যাম্পিয়ন হও, তাতে যদি শত্রুকে ছিন্নভিন্ন করে দিতে হয়, তাতে যদি বিপক্ষকে ছারখার করে দিতে হয়, তাতে যদি ক্রিকেটীয় ব্যকরণ, খেলোয়াড়ি মানসিকতা বিসর্জন দিতে হয়, তাতে কোনওদিন পিছপা হননি অজি কিংবদন্তিরা। সেই অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে বিশ্বজয় যে কতটা কঠিন আরও একবার বোঝা গেল রবিবার। অজিরা বোঝালেন, বিশ্বকাপের আসল রাজা তাঁরাই।
বিশ্বকাপে অজি রূপকথার শুরুয়াত হয় ১৯৮৭ সালে (যদিও ১৯৭৯ বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছিল অস্ট্রেলিয়া)। ঠিক চার বছর আগে ক্যারিবিয়ান মিথ ভেঙে চুরমার করে কপিলদেবের (Kapil Dev) ভারত। ক্যারিবিয়ানদের শূন্যস্থানে নিজেদের সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তনি অজিরা করেছিল সাতাশিতেই। অ্যালন বর্ডারের নেতৃত্বে টুর্নামেন্টের অন্যতম ফেভারিট দল ইংল্যান্ডকে হারিয়ে সেবারই প্রথম বিশ্বজয় অজিদের। তখনও অবশ্য অজি শাসন বা ঔদ্ধত্য কোনওটাই সে অর্থে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়নি সীমিত ওভারের ক্রিকেটে। অজিরা ভাল ফর্ম দেখাচ্ছিলেন, বিশ্বকাপে ফেভারিটও ছিলেন। তবে সে অর্থে সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে আরও একযুগ। স্টিভ ওয়ার (Steve Waugh) হাত ধরে ৯৯-এ অস্ট্রেলীয় যুগ শুরু বিশ্বকাপে। রিকি পন্টিং, অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, মাইকেল বেভানদের মতো একঝাক তরুণ তুর্কি যেন ওয়ানডে ক্রিকেটের সংজ্ঞাই বদলে দিয়েছিলেন। ৭৫ এবং ৭৯-র ওয়েস্ট ইন্ডিজ যে দাপটের সঙ্গে বিশ্ব ক্রিকেটকে শাসন করেছিল, সেই দাপটের ঝলক দেখায় নিরানব্বইয়ের অস্ট্রেলীয় দলও। স্টিভের হাতে প্রতিষ্ঠিত সেই অজি সাম্রাজ্য আগামী এক দশকে আরও ডালপালা বিস্তার করে। পরবর্তীতে রিকি পন্টিংয়ের অধিনায়কত্বে ২০০৩ এবং ২০০৭ দুই বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া এককথায় অপ্রতিরোধ্য ছিল। নয়ের দশকের শেষদিক থেকে ২০০৭-০৮ পর্যন্ত ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং তিন বিভাগেই বাকি বিশ্বের থেকে কয়েকশো যোজন এগিয়ে যায় অজিরা।
ওই অজি দলে নিজেদের কেরিয়ারের সেরা সময়টা কাটিয়েছেন পন্টিং, হেডেন, গিলক্রিষ্ট, মার্টিন্স, শেন ওয়ার্ন, গ্লেন ম্যাকগ্রা, ব্রেট লি-রা। বিশ্বক্রিকেটে হার না মানা মানসিকতার আমদানিটা সেসময়ই করেছিল ব্যাগি গ্রিন। যে কোনও পরিস্থিতি থেকে ম্যাচ জিতে যাওয়াটা অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছিল অস্ট্রেলিয়া। নাহলে পর পর দুটি বিশ্বকাপে একটি ম্যাচও না হারা, ওয়েস্ট ইন্ডিজের পর আর কোনও দল যা কল্পনাও করেনি কখনও, সেটা করে দেখাবেন কী করে পন্টিংরা (Ricky Ponting)! এর মধ্যে ২০০৩ বিশ্বকাপের স্মৃতি এখনও ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে দগদগে ক্ষতর মতো রয়ে গিয়েছে। সেবার ফাইনালে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ভারতকেই ১২৫ রানের বিশাল ব্যবধানে দুরমুশ করেন অস্ট্রেলিয়া। আর শুধু সেবার কেন, ১৯৮৭ ছাড়া বাকি যে চারবার অস্ট্রেলিয়া বিশ্বজয় করেছে প্রতিবারই ফাইনালে জয়ের ব্যবধান বিশাল। ২০০৭ ফাইনাল যেমন ৫৩ রানে জিতে নেয় অস্ট্রেলিয়া। ২০১৫ বিশ্বকাপে মাইকেল ক্লার্কের অস্ট্রেলিয়াও ফাইনালে গুড়িয়ে দেয় নিউজিল্যান্ডকে। সেবার অজিরা জেতে ৭ উইকেটে।
আসলে ফাইনালে বরাবরই অস্ট্রেলিয়া অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে। প্রতিপক্ষ যেই হোক, যেমনই ফর্মে থাক, পরিস্থিতি যাই হোক অজিরা শুধু একটা মন্ত্রই জানে, প্রতিপক্ষকে শেষ করে দাও। বিশ্বকাপের ফাইনালে বিন্দুমাত্র ভুল করলেই আর ঘুরে দাঁড়ানোর বিন্দুমাত্র সুযোগটুকুও দেয় না ব্যাগি গ্রিন। নাহলে একটা দল ৮ বার ফাইনালে উঠে পাঁচবারই চ্যাম্পিয়নের শিরোপা অর্জন করতে পারে! আসলে যে কোনও বিশ্বকাপ ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া নামা মানে তাঁরাই ফেভারিট। সেই মিথ এবার ভেঙেছিলেন রোহিতরা। ভারত ফাইনালে নেমেছিল ফেভারিট হিসাবে। কিন্তু শেষে গিয়ে অস্ট্রেলিয়া বুঝিয়ে দিল, যে কোনও বিশ্বকাপে, যে কোনও পরিস্থিতিতে ফেভারিট তাঁরাই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.