বক্তার নাম সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Sourav Ganguly)। ভারতের অধিনায়কত্ব যিনি শুধু করেননি, তাঁর ক্যাপ্টেন্সিতে কুড়ি বছর আগে বিশ্বকাপ (ICC World Cup 2023) ফাইনাল খেলেছিল ভারত। ভারতীয় ক্রিকেটের চালচিত্রই পাল্টে যায় যার পর থেকে। রাত পোহালে আরও একটা বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে নামছে রোহিত শর্মার ভারত (India Cricket Team)। সামনে চিরাচরিত গাঁট নিউজিল্যান্ড। কিউয়ি শাসন কতটা সম্ভব, সেমিফাইনালে কোন ফ্যাক্টর মাথায় রাখতে হবে, সব কিছু নিয়ে খোলাখুলি সাক্ষাৎকার দিলেন ‘ক্যাপ্টেন গাঙ্গুলি’। শুনলেন রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়।
প্রশ্ন: নয়ে নয় করার পর গোটা ভারতবর্ষ ধরে নিয়েছে যে, তৃতীয় বার বিশ্বকাপ আসছে। পাকেচক্রে কারও খেয়ালই নেই যে, ওয়াংখেড়েতে সেমিফাইনালে যে টিমটাকে খেলতে হবে, তাদের বিরুদ্ধে আইসিসি ইভেন্টে ভারতের রেকর্ড একেবারেই ভাল নয়। কুড়ি বছর পর এবারই প্রথম আইসিসি ইভেন্টে ভারত হারাল নিউজিল্যান্ডকে। গ্রুপ লিগে।
সৌরভ: রেকর্ড নিয়ে ভেবে লাভ নেই। তবে হ্যাঁ, বুধবার এই নিউজিল্যান্ডকে হারানো সহজ হবে না।
প্রশ্ন: বলছেন?
সৌরভ: হুঁ। দেখুন, আমি বিশ্বাস করি যে ম্যাচটা কঠিন হবে। কিন্তু শেষে গিয়ে হয়তো ভারত জিতবে। আসলে ভারত-নিউজিল্যান্ড (India vs New Zealand) দু’টো টিমেই অসম্ভব ভাল সমস্ত ক্রিকেটার রয়েছে। রোহিত শর্মারা কাউকে দাঁড়াতেই দিচ্ছে না। নিউজিল্যান্ড আবার পরপর কয়েকটা হারের পর ছন্দ খুঁজে পেয়েছে। প্লাস, চলতি বিশ্বকাপে ক্লোজ ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা আছে ওদের। অস্ট্রেলিয়া ম্যাচটাই ধরুন। ৩৮৮ প্রায় তাড়া করে দিয়েছিল!
প্রশ্ন: কিন্তু নিউজিল্যান্ডের হাতে ম্যাট হেনরি নেই। যিনি চার বছর আগের বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে ট্রেন্ট বোল্টের সঙ্গে প্রবল ভুগিয়েছিলেন ভারতকে।
সৌরভ: তাতে কী? নিউজিল্যান্ডের কাছে ট্রেন্ট বোল্টের মতো বোলার রয়েছে। টিম সাউদি রয়েছে। লকি ফার্গুসনের মতো গতিসম্পন্ন পেসার রয়েছে। ভারতের যেমন একটা বিভাগেও কোনও ফাঁক নেই, নিউজিল্যান্ডেরও প্রায় তাই। ব্যাটিং দেখুন। কেন উইলিয়ামসন, রাচীন রবীন্দ্র, ড্যারেল মিচেল। পেস বোলিংয়ে সাউদি-বোল্ট-লকি। সঙ্গে মিচেল স্যান্টনার। যে কি না বেশ ভাল স্পিনার। ওদেরও বা তেমন দুর্বলতা কোথায়? আর হ্যাঁ, আর একটা কথা। ওয়াংখেড়েতে কিছুটা সুবিধে পাবে বোল্ট-সাউদি। মুম্বইয়ের পিচে বাউন্স আছে। সেটাকে কাজে লাগাতে চাইবে ওরা।
প্রশ্ন: ওয়াংখেড়েতে টসও তো একটা বড় ফ্যাক্টর। বলা হচ্ছে, ওয়াংখেড়েতে ফ্লাডলাইটে ব্যাট করা মোটেই সহজ হচ্ছে না। ইংল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ ওয়াংখেড়েতে পরে ব্যাট করে প্রত্যেকে ডুবেছে। একমাত্র ব্যতিক্রম অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু তারাও আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ৯১/৭ হয়ে গিয়েছিল। গ্লেন ম্যাক্সওয়েল অতিমানব না হয়ে উঠলে অস্ট্রেলিয়াও হারে ম্যাচটা।
সৌরভ: আমার মতে, ফ্লাডলাইটে ব্যাটিং ফ্যাক্টর নয়। আসল হল শিশির পড়ছে কি না? একমাত্র শিশির পড়লে টস ফ্যাক্টর হতে পারে।
প্রশ্ন: গত দু’টো বিশ্বকাপ সেমিফাইনালের কালো স্মৃতিও কি আর একটা ফ্যাক্টর নয়? শেষ দু’টো ওয়ান ডে বিশ্বকাপ একই রকম দাপিয়ে খেলেও শেষে সেমিফাইনাল হেরে বিদায় নিতে হয়েছে ভারতকে।
সৌরভ: তার মানে এই নয় যে, এবারও ভারত সেমিফাইনাল হারবে। শুনুন, ও সব গাঁট বলে কিছু ক্রিকেটে হয় না। ক্রিকেটে পাস্ট ইজ পাস্ট। অতীতে যা হয়ে গিয়েছে, তা বর্তমানে ফের রিপিট করবে, তার কোনও মানে নেই। কোনও সন্দেহ নেই, পাকিস্তানের সঙ্গে সেমিফাইনাল খেলতে হলে সুবিধে হত ভারতের। নিউজিল্যান্ড অনেক বেশি টাফ টিম। পেশাদার টিম। কিন্তু তার পরেও বলব, ভারত এগিয়ে।
প্রশ্ন: বুধবার ওয়াংখেড়েতে বিরাট-রোহিতের উপর তা হলে স্নায়ুর চাপ কাজ করবে না বলছেন?
সৌরভ: করবে না। কম ক্রিকেট খেলেছে নাকি ওরা? বিরাট যা খেলছে, অতুলনীয়। টেস্ট ক্রিকেটে শচীন এগিয়ে থাকবে বিরাটের থেকে। কিন্তু ওয়ান ডে ক্রিকেটে ও শচীনের সমতুল্য ব্যাটার। আবার রোহিতকে দেখুন। দুর্ধর্ষ অধিনায়কত্ব করছে। টিমকে দারুণ স্টার্ট দিচ্ছে প্রতি ম্যাচে। পাঁচ-পাঁচটা আইপিএল জিতেছে রোহিত অধিনায়ক হিসেবে। এই যে হার্দিক পাণ্ডিয়া নেই, ভারতের বোলিং দেখে বুঝতে পারছেন? মহম্মদ শামি, জসপ্রীত বুমরাহ, মহম্মদ সিরাজ যা বোলিং করছে, তাতে ষষ্ঠ বোলার দরকারই পড়ছে না ভারতের। তা হলে? খামোখা অতীত নিয়ে ভেবে লাভ? স্নায়ুর চাপে ভুগলে টিমটা এত দূর আসত নাকি? টানা সব ম্যাচ জিতত? এ সব কোনও ব্যাপারই নয়। আসল হল, নির্দিষ্ট দিনে কেমন তুমি খেলছো? ভারত জিততে পারে, হারতেও পারে। কিন্তু এটুকু বলব, এই ভারত অতীত ভেবে কেঁপে যাবে না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.